অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার : সকলেরই দাবি রুল অব ল, কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রে ল’ (আইন) আছে, কিন্তু রুল অর্থাৎ শাসন প্রয়োগ হয় দু’ভাবে, যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের জন্য আইন একভাবে ও সরকার বিরোধীদের জন্য ভিন্নভাবে। এ জন্য প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ সমভাবে দাবি। প্রেক্ষাপটে এটাই দৃশ্যমান যে, রাষ্ট্রীয় অর্থে পালিত শ্বেতহস্তীগুলোর একমাত্র দায়িত্ব শাসক ও শাসক দলকে খুশি রাখা এবং এতেই তাদের আত্মতৃপ্তি। আইনের বাস্তবায়নের প্রধান শর্ত হলো যে, একটি কর্তৃপক্ষ থাকবে যার দায়িত্ব আইনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা। মানুষ যখন মনে করে যে, কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ তখনই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। যেমনটি হয়েছে কোমলমতি ছাত্রদের বেলায়।
স্বভাব-সুলভভাবে প্রধানমন্ত্রী ও তার সভাসদ যত কথাই বলুক না কেন, এ আন্দোলন ছিল স্বতস্ফুর্তভাবে এবং বিএনপি বা অন্য কোনো শক্তি উস্কানিতে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নামেনি। রাস্তা শাসন কীভাবে করতে হয়, কীভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে হয় এবং কীভাবে পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে হয় তা ঘুষখোরদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মানি দিয়ে প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। কারণ ছাত্ররাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়েছে যে, আইন প্রণয়নকারী ও আইন রক্ষাকারীই আইন লংঘন করেন, দেশের প্রচলিত ভাষায় যাকে বলা হয় যে, ‘বেড়ায় ক্ষেত খায়।’
অর্থনৈতিক সেক্টর থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে চলছে সীমাহীন নৈরাজ্য। ব্যাংক জালিয়াতি, গচ্ছিত আমানত লোপাট, এরশাদের ভাষায়, বাড়িতে থাকলে খুন বাইরে থাকলে গুম, বিচার বিভাগ করায়ত্ব, বিনা ভোটে নির্বাচনের সংস্কৃতি প্রভৃতি থেকে মানুষ নিস্তার চায়, যার জন্য মানুষ মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের একটি সরকার চায়, চায় একটি আশু পরিবর্তন যেখানে সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে।
শহীদ সালাম, বরকতদের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যেমন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর রক্তের বিনিময়ে সড়ক দস্যুদের হাত থেকে যদি সড়ক নিরাপদ হয় তবেই আসবে আন্দোলনের স্বার্থকতা।
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, বিআরটিসি
আপনার মতামত লিখুন :