শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৫৩ দুপুর
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাদকাসক্তরা চালাচ্ছে নিরাময় কেন্দ্র, টাকা দিলেই মিলছে সনদ

ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও সুশান্ত সাহা : সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে মাদক বিক্রেতারা গা ঢাকা দিলেও এদের বেশিরভাগই ধরা পড়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনাও ঘটছে। তবে মাঠ পর্যায়ের কিছু মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। মিরপুর এলাকার বেশক’টি নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে মিরপুর শাহআলী মাজারের পেছনের রোডে রাস্তায় ‘ছায়ানিবাস’ নামক একটি নিরাময় কেন্দ্রের দরজা নক করতেই বেরিয়ে এলেন চোখ ছানাবড়া করা তিন যুবক। ভেতরে ঢুকে নাকে লাগলো বিস্কুটের গন্ধ। সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর রুমের ভেতরে সুগন্ধি স্প্রে করতে লাগলেন আরেক যুবক। ততক্ষণে বুঝতে বাকি রইলোনা তারা কি করছিলেন। মালিক বা কোন কমর্তকর্তার সঙ্গে আলাপ করতে চাইলে সুমন নামের এক যুবক বলেন, আমিই মালিকদের একজন। মাদকাসক্তদের (রোগী) কি সেবা দিয়ে থাকেন এবং কিভাবে রোগী আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারনত পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়। পরে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি টিম গিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়। অনেক সময় মাদক মামলার আসামীদের ডাক্তারি সার্টিফিকেট দিয়ে জামিনের জন্য সহযোগিতা করা হয়। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনজন ডাক্তার রয়েছে বলা হলেও কোন ডাক্তারের দেখা মেলেনি। মাদক বিরোধী অভিযান শরুর পর রোগী বেড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেমন একটা বাড়েনি। তবে কেউ নিজের ইচ্ছায় ভর্তি হতে চাইলে তাকে ভর্তি করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়াতে এসব মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে মাদক বিক্রেতারা বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রায় একই অবস্থা লক্ষ করা গেছে মিরপুর বেড়িবাধ এলাকার ‘অনুসন্ধান’ নামক আরেকটি কেন্দ্রে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায় একটি কক্ষে ধোয়ায় অচ্ছন্ন। খালি গায়ে তাকা ওই চার যুবক কিছু একটা সেবন করছিলেন। তবে সেখানে বিস্কুটের গন্ধ পাওয়া যায়নি। এক যুবক বেরিয়ে এসে বললেন, এ প্রতিষ্ঠানে কোন অনিয়ম নেই। মাঝেমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পুলিশ ও বিভিন্ন গোন্দো সংস্থার লোকজন পরিদর্শন করে যান। পরে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন ইয়াসনি আলী নামের এক যুবক। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।

তিনি ওই চার যুবকবকে দেখিয়ে বলেন, আমরা সকলেই মাদকে আসক্ত ছিলাম। একেকজন একেক নেশায় বুদ হয়ে থাকতাম। এখন চিকিৎসা নিয়ে নিজেরাই মাকাসক্তদের ভাল পথে ফেরানোর কাজ করছেন। ২০জন রোগী রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীর ৯৯ ভাগ নিরাময় কেন্দ্রই চলে এক সময় মাদকাসক্ত পরে ভাল হয়ে যাওয়াদের মাধ্যমে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মাদকে আসক্তদের দু:খ তারাই ভাল বোঝেন। একজন ভাল মানুষ কখনোই বুঝবেনা আসক্তদের বিষয়। তার প্রতিষ্টানেও তিনজন ডাক্তার রয়েছেন জানলেও কাউকে দেখাতে পারেননি। বছর খানেক ধরে চালু হওয়া ওই প্রতিষ্ঠানে ৩০ জন রোগী রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের আবেদন করলেও এখনো অনুমোদন পাননি তারা।

এ প্রতিষ্টানের পাশেই ‘নিউ ফিউচার লাইফ’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেল উল্টো চিত্র। নিচতলায় প্রতিষ্টানটির অফিস। দোতলায় বড় একটি কক্ষে রাখা হয়েছে রোগীদের। সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য পালাক্রমে ডিউট করছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। একজন ডাক্তার একজন কাউন্সিলরকে দেখা গেছে।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আল-আমিন রনি বলেন, সকাল থেকেই কাউন্সিলিং, শেয়ারিং এবং মোটিভেটেশনের কাজ চলে এখানে। কোন রোগীকে একা একটি কক্ষে রাখা হয় না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায় করা বাধ্যতামুলক এখানে। একজন আরেকজনের বন্ধু হিসেবে সময় কাটান রোগীরা। বেশিরভাগ রোগী ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্ত। তিনি নিজেও এক সময় মাদকে আসক্ত ছিলেন। এখন অন্য রোগীদের ভাল পথে ফেরানোর কাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, একজন ইয়াবা সেবীরা সাধারনত এসি রুমে বসে নেশা করে। আর ফুটপাতে বসে নেশা করে ড্যান্ডি সেবীরা। এ প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা এই দুই ধরনের রোগীই সমান চোখে দেখা হয় বলে জানান তিনি। এছাড়াও আশ্রয় নীড়, সূর্যোদয়, সুপার লাইফ, আশ্রয়, গোল্ডেন লাইফ নামক প্রতিষ্ঠানগুলো বৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে সুনামের সঙ্গে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবর্তন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন আগে হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে।

এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, আসলে মাদকসেবীরা নিরাময় কেন্দ্র চালাচ্ছে বিষয়টি তেমন না। একসময় মাদকাসক্ত ছিল পরে ভাল হয়ে গেছে তারাই মূলত চালাচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে আবেদন করেছে। তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। নিয়ম মেনে প্রতিষ্টান পরিচালনা না করায় গত কয়েকমাসে ১০ টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো মনিটরিংয়ের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়