শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ১১ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:১৪ সকাল
আপডেট : ১১ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আস্থা সংকটে সিইসি

মহসীন কবির : নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় সমালোচনায় মুখে পড়েছেন প্রধান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বড় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না এমন গ্যারান্টি দেয়া সম্ভব নয়। ফলে নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে বিএনপি সিইসির পদত্যাগ দাবি করেছে। সিইসিকে আরো সংযত হয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সিইসি’র বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন চার নির্বাচন কমিশনার। এছাড়া সব বুদ্ধিজীবীরাও সিইসির কঠোর সমালোচনা করেছেন। ফলে অনাস্থার মুখে পড়তে পারেন সিইসি।

২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা বয়কট করেছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। একই সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগও দাবী করেছিল দলটি। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রাখতে পারি নাই। আমরা আলোচনা বয়কট করে চলে এসেছি। কারণ গতকাল সিইসি তার টোটাল কমিশনের সাথে আলোচনা করে নয়, এককভাবে বলেছেন জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমরা এতে একমত নই।

৮ আগস্ট বুধবার দেয়া সিইসির বক্তব্য ইতিমধ্যে বিপুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ সিটি নির্বাচনের পর এমনিতেই তার প্রতি জনগণের একাংশের অনাস্থা তৈরি হয়ে ছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। অতীতে নানা ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনে বিভক্তি দেখা গেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তার মীমাংসাও হয়েছে। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো একটি বক্তব্যের সঙ্গে অন্য সব কমিশনারের দ্বিমত পোষণ করা একেবারেই নজিরবিহীন। মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এই ধরনের বক্তব্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে যারা অনিয়ম করতে চায় তাদের উস্কে দেবে।

এই পরিস্থিতিতে কী করবেন কেএম নূরুল হুদা। তিনি অবশ্য এখনো অনঢ়। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজকে তিনি বলেছেন, ‘আমি তো বাস্তব কথাটা বলেছি। সত্য কথা বলেছি। যদি কোথাও অনিয়ম হবে না বলি-মিথ্যা বলা হবে; আমি তো মিথ্যা কথা বলি না। এখন এ নিয়ে কেউ কিছু বললে বলতে পারে।’ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কেএম নূরুল হুদার বক্তব্যে হয়তো বাস্তবতার স্বীকৃতি আছে। কিন্তু তিনি স্পষ্টতই তার সাংবিধানিক দায়িত্ব অস্বীকার করেছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা একমত হতে পারেন নি। তবে একটি বিষয় তারা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত সংবিধানের একটি প্রধানতম কাঠামো রক্ষায় প্রকাশ্যেই অস্বীকৃতি জানালেন নূরুল হুদা। এই পরিস্থিতিতে তার নৈতিকভাবে এই পদে থাকা উচিত হবে না বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই সময়ে সিইসির এ ধরনের কথা না বলাই উচিত ছিল। এখন কি কারণে তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তা তিনিই ভালো জানেন। আর তার বক্তব্যের বিষয়ে চারজন নির্বাচন কমিশনার দ্বিমত পোষণ করেছেন। এটি তারা করতেই পারেন। তবে, চারজন যেহেতু দ্বিমত পোষণ করেছেন এটি তাদের মেজরিটি মতামত।

সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে গা-ছাড়া ভাব দেখা গেছে। সিইসি যদি মনে করেন, নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এ নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না, তাহলে নৈতিকভাবে তাঁর পদে থাকা ঠিক হবে না।

মাহবুব তালুকদার : কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। আমি কোনোভাবেই এই বক্তব্য সমর্থন করি না। যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম করতে চায়, এই ধরনের বক্তব্য তাদের উস্কে দেবে। অনিয়ম করার ব্যাপারে তারা অনেক উৎসাহ পাবে বলে আমি আশংকা করি।

রফিকুল ইসলাম :কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। আমি ওভাবে মনে করি না। আমরা শপথ নিয়েছি একটা গ্রহণযোগ্য আইনানুগ নির্বাচন করার জন্য। এটার সঙ্গে এই বক্তব্যের কোনো মিল নেই। আমি ওটাকে কমিশনের অভিমত বলে মেনে নিতে পারি না।

বেগম কবিতা খানম : নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্যই আমি শপথ নিয়েছি। এটা কমিশনের বক্তব্য বলেও আমি মনে করি না। আমরা যেহেতু জানি না কোন অনুষ্ঠানে তিনি এটা বলেছেন, সুতরাং এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

মওদুদ আহমদ : নির্বাচনে অনিয়ম হতেই পারে- এমন কথা বলার পর সিইসির আর পদে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সিইসি জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, ইসি সরকারের তল্পিবাহক। তবে সিইসি মুখ ফসকে সত্য কথা বলে ফেলেছেন। নির্বাচনে অনিয়ম হতেই পারে এমন কথা বলার পর সিইসির আর পদে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অবিলম্বে আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।

ওবায়দুল কাদের : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে আরো সংযত হয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বিআরটিএ কার্যালয়ে ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি ।

আনিসুল হক : ১০ আগস্ট শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সিইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, উনি আশঙ্কা করছেন, আগামী নির্বাচনে একটু হাঙ্গামা বা অনিয়ম হতে পারে। আপনি (সিইসি) সুষ্ঠু নির্বাচন দেন। আপনার অর্গানাইজেশন ঠিক করে আপনি নির্বাচন দেন। আমার বাঙালি ভাইয়েরা, আমার বাঙালি বোনেরা কোনো অনিয়ম ছাড়াই ইনশাআল্লাহ ভোট দেবে। আমার বাঙালি ভাইয়েরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, আপনি ভয় পাইয়েন না। আমরা বাঙালিরা কখনো কোনো দিন অনিয়ম করি নাই। যদি অনিয়ম করে থাকে তাহলে কুচক্রী মহল অনিয়ম করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়