শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১১ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:৪৮ রাত
আপডেট : ১১ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কতটা হতাশ হলে একজন বিচারপতি একথা বলতে পারে?

রবিন আকরাম : প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলাম। এত লেইম স্ট্যাটাস লিখবার মত মানুষ তিনি নন, আমি সেটাই জানতাম। কিন্তু আজ তিনি সেই জানাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন।

একটা হাইপোথেটিকাল সমীকরণ দাঁড় করিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় দমন ও নিপীড়নকে হালাল করা চেষ্টা করছেন এটা মেনে নেয়া দুষ্কর। আমেরিকার হার্ভার্ডে পড়াশোনা করা, এমন চমৎকার গণতান্ত্রিক পশ্চিমা হাওয়াতে বেড়ে ওঠাও উনাকে প্রভাবিত করতে পারেনা দেখে আসলেই দুঃখ-ই পেতে হয়।

শহীদুল আলম আল জাজিরাকে একটা সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন তা শুধু শহীদুল আলম নন। দেশের আপামর জনসাধারণ এইসব সত্য জানেন। তিনি ব্যাংক লুটের কথা বলেছিলেন।

এই আওয়ামী আমলে ঠিক কতগুলো ব্যাংক লুট হয়েছে? সজীব সাহেবে সেটির একটা পরিসংখ্যান কি আমাদের দেবে? আমি ধারনা করি তিনি সেটি দেবেন না। কতগুলো ব্যাংক স্রেফ লুটে পুটে একাকার হয়েছে? ২ টাকার সম্পদের বনিময়ে ১০ টাকা লোন দেয়া হয়েছে কতবার? কতগুলো ব্যাক্তি এগুলোর সাথে জড়িত? শেয়ার বাজার লুট করেছে কারা? কে দেবে এইসব উত্তর?

শহীদুল আলম এই সরকারকে আন-ইলেকটেড বলেছেন। টেকনিকালী শহীদুল আলম ভুল বলেছেন কিন্তু পলিটিকালী হি হিজ কারেক্ট।

১৫০ টার উপর সংসদীয় আসন কোনো কন্টেস্ট ছাড়া নির্বাচিত হয়ে এসেছে, গৃহপালিত কিছু দল নিয়ে। এই ইলেকশনকে সংবিধানিক ভাবে পারফেক্ট বলা গেলেও মোরালি এটা একটা হাস্যকর নির্বাচন। আর এই পুরো সিনারিওকে ব্রডার সেন্সে আন-ইলেকটেড বললে আদৌ কি অন্যায় হয়? আমরা কি সাংবিধানিক ভাবে কারেক্ট থাকতে চাই কেবল নাকি পলিটকালীও কারেক্ট থাকতে চাই?

বি এন পি যে ১৫ ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সালে ঠিক একই রকম একটা ইলেকশন করেছিলো, এটিকে কি আওয়ামীলীগ বৈধতা দেয় কিংবা এই দেশের সাধারণ জনতা? তাহলে কি সেই অবৈধ ইলেকশন এখন আমাকে মেনে নিতে হবে?

উত্তর হচ্ছে না। দেয়না।

আর উষ্কানীর কথা যদি বলতেই হয় তবে আমি বলব ২০০৬ সালে তৎকালীন মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার লগি আর বৈঠার সে বক্তব্য ছিলো আমার দৃষ্টিতে উষ্কানির।

তাঁর বক্তব্যের পর যে খুন ও সন্ত্রাস হয়েছে সেটি কি "ইনসেপারেবল" কি না? ঐ ইন্সাইটমেন্টের সাথে ঘটনার কতটা ক্লোজ সম্পর্ক রয়েছে এটি খুবই বিবেচ্য।

বলতে আমার একেবারেই দ্বিধা নেই যে জননেত্রীর সেই বক্তব্য খুবই স্পস্ট করে উষ্কে দিয়েছিলো আওয়ামীলীগের কর্মীকে। আমি যদি খুবই নিউট্রালি মন্তব্য করি তাহলে তিনি ফৌজদারী অপরাধ করেছেন বলেই আমাকে বলতে হবে। যদিও এই ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো ট্রায়াল হয়নি ফলে তাঁর শাস্তি হতে পারত কি পারতো না, এটা ট্রায়ালছাড়া আমি বলতে পারিনা। কিন্তু আমার অবজার্ভেশনে আমি বলতে পারি সেটা অপরাধ ছিলো।

ঠিক একই অপরাধে প্রশ্ন তোলা যায় বি এন পির বর্তমান চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে। তিনি সে সময় জননেত্রীর সুরে পাল্টা সুর মিলিয়ে বলেছিলেন কাস্তে দিয়ে আক্রমণের কথা। ফলে ঐ বক্তব্যের রিপারকেশন এটি হলেও, আমার দৃষ্টিতে এটিও ইনসাইট্মেন্ট এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামাত সহ স্বাধীনতাবিরোধীদের বক্তব্যগুলো যে কতটা উষ্কানি ছিলো সেগুলো আমি আর কি বলব? আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশ সেটি বার বার করে তাঁদের রায়ে বলেছেন।

রাজাকার নিজামী, গোলাম আজম, কামারুজ্জামান, মীর কাশেম, মুজাহিদদের রায় পড়লেই সে সময় কি করে মানুষকে হত্যা করতে উষ্কানি দিয়েছিলো এই শীর্ষ রাজাকাররা তা আমরা জানতে পারি।

মুক্তিযুদ্ধের পর মাওলানা ভাসানীর উষ্কানীও আমরা দেখেছি। সে সময় আমরা দেখেছি আজকের মতিয়া চৌধুরীর উষ্কানি। বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানিয়ে ফেলবার উষ্কানি। ১৯৭৩ সালের ২শরা জানুয়ারী পল্টনের ময়দানে বাম দলগুলো যেসব ভাষন দিয়েছিলো সেটি পুরোটাই ছিলো উষ্কানি।

মোটামুটিভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এগুলো উষ্কানির প্রিসিডেন্ট হিসেবে আপনি বলতে পারেন।

কিন্তু শহীদুল আলম যা বলেছেন সেদিন আল জাজিরাতে সেটা কি আদৌ উষ্কানি? যে কথা প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন বাড়ীতে, গাড়ীতে, বাসে , ট্রাকে, রিকশায়, মাঠে, গল্পে আর আড্ডায় বলেন এবং জানেন সেটি কি উষ্কানি? সে সময়ে তাঁর বক্তব্য কি এতটাই ট্রিগার করেছে আন্দোলোনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের?

ব্যাংক লুটের কথা বলা, নির্বাচনহীনতার কথা বলা, অন্যায়ের কথা বলা, নেপোটিজমের কথা বলা টা কি অন্যায়? আসলেই কি সত্য ভাষন অন্যায় এই জনপদে?

তাহলে জনাব ওয়াজেদ হার্ভার্ডে কি শিখলেন? পশ্চিম তাঁকে কি শেখালো এতদিন? পশ্চিম তাঁকে কি অন্ধত্ব দিয়েছে নাকি আলো দিয়েছে? আমি বুঝতে পারিনা। এ আমার বুঝবার বাইরের কিছু খুব সম্ভবত।

শহিদুল আলমের যে বক্তব্য সেটি শুনে কি বাচ্চারা আন্দোলনে নেমেছে কিংবা সেটি শুনে কি হেলমেট ওয়ালারা মাঠে নেমেছে? এই কথা কি বিশ্বাসযোগ্য? খোদ বিচারপতি দস্তগীর আদালতে বলেছিলেন, "আরে ভাই গুম কইরা ফালায় নাই এইটাই তো ভাগ্য"। বুঝুন অবস্থা!! কত হতাশ হলে একজন বিচারপতি এইভাবে বলেন, কতটা আইনহীনতা দেশে থাকলে একজন সিটিং হাইকোর্টের বিচারপতি এই বক্তব্য দিতে পারেন!!

এই যে হেলমেট ওয়ালা আর লুঙ্গি ওয়ালারা মাঠে নেমেছে সেটি নিয়ে সজীব সাহেবের একটি বক্তব্য নেই। কেন নেই? কে এই হেলমেট ওয়ালা? কেই এই লুঙ্গির ওপরে থাকা ব্যাক্তি?

যদি এই রাষ্ট্রকে কেউ উষ্কে দিয়ে থাকে তবে সেটি দিচ্ছে এই সরকার। তবে দিচ্ছে বর্তমানের আমার অচেনা আওয়ামীলীগ। তবে দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে আসা চাটার দল।

ব্যাংক লুট করে, মানুষের বাক স্বাধীনতা বন্ধ করে, মানুষকে হত্যা করে, গুম করে এই দেশের মানুষের ভেতরের ক্রোধকে উষ্কে দিচ্ছে আওয়ামীলীগ। এই রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের চালকেরা।

আসলে বলেই বা লাভ কি?

নিপীড়ক যখন সিংহাসনে থাকেন তখন কি আর আইন বলে কিছু থাকে? তখন কি আর মানুষ কিংবা মানবতা বলে কিছু থাকে?

(লেখক ও ব্লগার নিঝুম মজুমদার)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়