মোস্তফা কামাল গাজী: ইসলাম মানুষের জীবনের ব্যাপারে দিয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের অমূল্য বাণীগুলো মানব হত্যাকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যায়ভাবে অপরের প্রাণ হরণকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বড় গুনাহসমূহের মধ্যে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে যত রকমের গুনাহের কাজ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মহান আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বা শরীক সাব্যস্ত করা। এরপর সবচেয়ে বড় গুনাহ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। হন্তারকের জন্য মহান আল্লাহ দুনিয়ায় বড় শাস্তি এবং আখেরাতে তীব্র আজাবের ঘোষণা দিয়েছেন।
যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলো, এসো তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিজিক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা আল-আনআম: ১৫১) তাফসিরকার বাগবি (রহ.) বলেন, ‘এ আয়াতে আল্লাহ যে কোনো মুমিন ও মুসলিম রাষ্ট্রে ট্যাক্স প্রদানকারী অমুসলিম নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা হারাম ঘোষণা করেছেন। হত্যার ন্যায়সঙ্গত কারণের মধ্যে রয়েছে ইরতিদাদ তথা কোনো মুসলিমের ইসলাম ধর্মত্যাগ, কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা এবং রজম তথা বিবাহিত ব্যক্তির জেনা-ব্যভিচারের দণ্ড।' (মাআলিমুত তানজিল: ৩/২০৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে দেবে, তার জন্য তা কাফফারা হবে। আর আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম।’ (সুরা আল-মায়িদা: ৪৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.)ও হত্যাকা-কে গুরুতর অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবিরা গুনাহগুলোর মধ্যে সবচে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি: ৬৮৭১; মুসলিম: ৮৮) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত সম্পর্কে।’ (বুখারি: ৬৩৫৭; মুসলিম: ৩১৭৮)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম থেকে একটি গলা বের হয়ে কথা বলতে শুরু করবে। সে বলবে, আজ আমি তিন ব্যক্তির প্রতি ন্যস্ত হয়েছি, প্রত্যেক অত্যাচারী, যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক স্থির করে এবং ওই ব্যক্তি যে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে। অতপর সে তাদের থাবা দিয়ে কব্জা করবে এবং জাহান্নামের গহীনে তাদের নিক্ষেপ করবে।’ (মুসনাদ আহমদ: ১১৩৭২, সহীহ)
আপনার মতামত লিখুন :