ডেস্ক রিপোর্ট : চুক্তি বাদ দিয়ে রাজধানী ও আশপাশের জেলায় বাস চালানোর মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। বরং এ নিয়ে ওই সমিতির সঙ্গে বিভিন্ন পরিবহন কম্পানির মালিকের দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠছে। এর আগে একই পরিবহন মালিক সমিতি গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অধিকাংশ পরিবহন মালিক রাজধানীতে ওই সময় অঘোষিত ধর্মঘট পালন করে পুরো রাজধানী অচল করে রেখেছিলেন।
সিটিং সার্ভিস থাকবে কি না এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি প্রতিবেদন দিলেও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ১৫ মাসেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষই এসব বাসের রুট পারমিট দিতে সহযোগিতা করেছে। সিটিং সার্ভিস বলে কোনো ধরনের বাস সেবার অনুমোদনও নেই। এ অবস্থায় বিআরটিএ বা প্রভাবশালী মালিক সমিতি কারোর সিদ্ধান্তই মানছে না মালিক ও চালকদের বড় একটি অংশ। ঢাকায় পরিবহন খাতে নৈরাজ্যের বড় কারণ এটিও।
গত বুধবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি মালিকের সঙ্গে চালক ও শ্রমিকের চুক্তি বাদ দিয়ে বাস ও মিনিবাস চালানোর সিদ্ধান্ত পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট বাস মালিকদের নির্দেশ দিয়েছিল। গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনও চুক্তিতেই বাস চলাচল করেছে বিভিন্ন রুটে। কেন মালিক সমিতির এ সিদ্ধান্ত মানছেন না জানতে চাইলে সদরঘাট-গাজীপুরা রুটের সুপ্রভাত পরিবহনের চালক আলিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মালিকের সঙ্গে দিনে চুক্তিভিত্তিক বাস চালানোর পক্ষেই বেশির ভাগ মালিক।’
গতকাল বিভিন্ন বাস কম্পানির চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা চুক্তিতেই বাস চালাতে চান। কেউ কয়েক মাসের জন্য বাস চালানোর চুক্তি করেছেন। এসব বাসের বেশির ভাগই লক্কড়ঝক্কড়। বহু বাসের চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কারণে মামলা হচ্ছে এসব বাসের মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে। ফিটনেস না থাকাসহ অন্যান্য অপরাধও খুঁজে পাচ্ছেন পুলিশ ও বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বেশির ভাগ মালিক মজুরিভিত্তিতে বাস চালালে চালকরা কাঙ্ক্ষিত মজুরি পাবে না বলে শঙ্কিত চালকরাও। আর চুক্তিতে বাস চালালে মালিককে বেশি মুনাফা দেওয়ার সুযোগ থাকে বলে মনে করেন অনেক মালিক। ভাঙা বাস যত খুশি যেভাবে ইচ্ছা চালিয়ে বেশি যাত্রী ও বেশি ট্রিপ দিলে আয় বেশি হয়—এমন অসুস্থ মনোভাব থেকে চালকরা বেশি আয় করতে গতকালও রাস্তায় ছিল বেপরোয়া। বিকেলে কুড়িলে সুপ্রভাত পরিবহনের চালক আলিম উদ্দিন বলেন, ‘যানজটে ট্রিপ কমে গেছে অর্ধেক। চাঁদার জন্য স্থানে স্থানে দাঁড়াতে হয়। বাস স্টপেজের বাইরে বিভিন্ন স্থানে যাত্রী খুঁজতে হয়, কী করব?’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত মানেনি সুপ্রভাত পরিবহন, আজমেরী, ডিএনকে, স্কাইলাইন ও গাবতলী-সদরঘাট পরিবহন লিমিটেড কম্পানি। গত বৃহস্পতিবারই ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি থেকে এসব কম্পানির সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। তবে বিআরটিএতে এসব পরিবহনের বাসের নিবন্ধন বাতিল হবে না।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুসারে চালকরা বাস চালাবে দৈনিক হিসাবে। আয়ের অর্থ মালিকের কাছে দেবে। মালিক বাসের চালক ও অন্য শ্রমিকদের নির্ধারিত হারে মজুরি দেবেন।
সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে চলাচল করে বলাকা পরিবহন। সদরঘাট থেকে গাজীপুরা রুটে চলে সুপ্রভাত পরিবহন। সায়েদাবাদ থেকে প্রগতি সরণি হয়ে চলাচল করে তুরাগ পরিবহনের বাসগুলো। গতকাল এসব বাস ছাড়াও অনাবিল, ছালছাবিল পরিবহনের বাসও আগের মতোই চুক্তিতে চলাচল করতে দেখা গেছে।
এসব বাসের বিভিন্ন চালক কালের কণ্ঠকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, ‘দৈনিক তিন হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি করে বাস চালাচ্ছি মালিকের কাছ থেকে। দিনের টার্গেট পূরণ করতে হয়। না হলে নিজের কিছু থাকে না।’ নতুন নিয়ম কেন মানছে না জানতে চাইলে তারা বলে, মালিকরাই তা মানতে চান না।
সূত্র : কালের কন্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :