শিরোনাম
◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন

প্রকাশিত : ৩১ জুলাই, ২০১৮, ০৩:০৫ রাত
আপডেট : ৩১ জুলাই, ২০১৮, ০৩:০৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং দিরাই-শাল্লার সর্ষের ভূত

দীপক চৌধুরী : তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনক্ষেত্র, নির্বাচনকেন্দ্র ও প্রার্থী নিয়ে তুমুল আলোচনায় জায়গা করে নেবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। একই সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশও। সামনের কয়েকটি দিনের আলোচনার প্রধান ইস্যু হবে এসব। রাজনীতির মাঠ গরম করার বহু ‘রসদ’ এখন সামনে। এরমধ্যে আকর্ষণীয় উক্তি, ‘সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনেরই রিহার্সেল।’ একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার এমন ‘অপরিপক্ক’ উক্তি সমালোচকদের মুখে নানারকম প্রশ্ন তুলে দেয়। যেকোনো ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক করার জন্য এসব কথাবার্তাই যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, প্রবীণ রাজনীতিক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও লুফে নেওয়ার মতো কথা বলেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘বিএনপির আসলে কোনো লোকজন নেই।’ কেবল প্রতিপক্ষ বিএনপিই নয়, অনেকেই লুফে নেবে এসব কথা। মানুষ মনে করে বিএনপির অনেক সমর্থক আছে। মানুষও আছে। তবে দলটির নেতা নেই। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গিয়ে দলটি নিজেই নেতৃত্বশূন্য পড়েছে। প্রকৃত সত্য মানুষকে না জানালে, অর্ধসত্য-অর্ধমিথ্যা মিশিয়ে করা বচনের পুরোটাই মানুষ মিথ্যা মনে করে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জটিল অবস্থা বিরাজ করার এটাও কারণ। মানুষকে জোর করে বা পিটিয়ে ‘গণতন্ত্রী’ বানানো যায় না। মানুষ এখন অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন। আমার বাড়ি দিরাই। এখানে এসে দেখলাম, দিরাই-শাল্লার রাজনীতির মধ্যে জাতীয় রাজনীতির এক ধরনের গন্ধ পাওয়া যায়। এর ভৌগলিক অবস্থান ও শিক্ষার অনুপাত বাদ দিয়ে যদি এর কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সভ্যতার দিক চোখ রাখি তাহলে কোথাও না কোথাও বাংলাদেশের রাজনীতির মিল পাওয়া যায়। দরকার যোগ্য নেতার, সঠিক নেতৃত্বের। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য শুধু ভোট শিকারের কৌশল খুঁজলেই হবে না জনগণের কষ্টের কথাও জানতে হবে। তারা ক্ষুব্ধ কিনা তা জানাও জরুরি। দিরাই-শাল্লার কয়েকটি গ্রামের অভিজ্ঞতা আমাকে বিস্মিত করেছে। কৃষকরা বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কৃষিবান্ধব। কিন্তু কোথাও এর বাস্তবতা না দেখে আমার প্রতি তাদের জিজ্ঞাসা, ‘আমরা কৃষকরা কীভাবে মরলে আপনারা স্বীকার করবেন সত্যিই কৃষক মৃত্যুর মুখে?’ আমার এর মুখে জবাব নেই। ধল গ্রামের মানুষ সোনাই মিয়া। ধান কেনা-বেচার ব্যবসা করেন।

এই কৃষকের অতি সরল ভাষ্য, ‘টাউটামি না করে বাঁচবার রাস্তা কোথায়, বলেন?’ ৪০ কেজি ধান তাকে ক্রয় করতে হয় সাতশ  টাকা দর হিসেবে। বিক্রি করতে হয় ৫/১০ টাকা বাড়িয়ে। অথচ যারা কেনেন; তারা এই পরিমাণ ধানই সরকারের গুদামে দিয়ে এক হাজার চল্লিশ টাকা তুলেন। সরকার সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করেছে ৪০ কেজিতে এক হাজার চল্লিশ টাকা। ফড়িয়া, টাউট আর দুর্বৃত্ত একজোট হয়ে লুটপাট চালাচ্ছে অথচ জনপ্রতিনিধিরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। প্রাণ বাজি রেখে যে কৃষক বজ্রপাতের মুখে বুরো ফসল তুলেছে তার প্রতি কী কারো দায়িত্ব আছে? আমার চোখে পড়েনি। এই দায়িত্ব কার? প্রকৃত পক্ষে বিচার নেই, চলছে অবিচার। কৃষকের ক্ষোভ কিংবা কষ্ট-দুঃখ দেখার কেউ নেই। উজানধলগ্রামের কৃষক কুলেন্দ্র চৌধুরী ওরফে আকল। কৃষি বিষয়ে জানালেন ভয়াবহ তথ্য। কৃষি মজুর ও খরচের তালিকা জানিয়ে মন্তব্য করলেন, কৃষকরা আর ধান ফলাবে না। বোরো মৌসুমে একজন কৃষি মজুরের পেছনে ৩০ হাজার টাকা ও ২৫ মন ধান খরচ করার পর মূলকৃষকের উদ্বৃত্ত কিছুই থাকে না। ফলনের সঠিক মূল্য পাওয়া গেলেই কৃষক হয়তো বাঁচতো। কৃষক শেখ সমিরুল মনে করেন, ধান সংগ্রহ নিয়ে সৃষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্র তাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে।

এখানকার অনেকেই মনে করেন, সামাজিক পরিবেশদূষণের প্রধান কারণ দুর্নীতি। এর পেছনেও নানা কথা আছে। দিরাইয়ের একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজস্ব উঠিয়ে নিয়ে সীমাহীন লুটপাট করেছে।  বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তৃণমূলের মানুষ চায় বিচার। দুর্নীতিবাজের বিচার হয় না। দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মদ্যপ অবস্থায় ক্লাশে ঢুকে এক স্কুল শিক্ষিকাকে হুমকি দেন ও অশালীন আচরণ করেন। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করলেও এর প্রতিকার হয় না। শুধু তাই নয়, মানববন্ধনে উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, পৌরসভা মেয়র মোশারফ মিয়াসহ স্হানীয় মানুষেরাও প্রতিবাদ করেছেন। শোনা গেছে, বিচার চেয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তার কাছে সাহায্য চাইলেও ফল নাকি হয় তথৈবচ।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়