লিহান লিমা: আসামে ভারতের নাগরিকত্ব পঞ্জীকরণ (এনআরসি) এর চূড়ান্ত খসড়া থেকে ৪০ লাখ বাংলাভাষীর বাদ পড়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার প্রকাশিত এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় নাম তোলার জন্য ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদন জমা পড়ে। দু-দফায় খসড়া নাগরিক পঞ্জিতে ২ কোটি ৯০ লাখ নাম উঠেছে। বাদ পড়েছে ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জন। যাদের মধ্যে ৪০ লাখই বাংলাভাষী।
সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভারত নিজ দেশে উদ্বাস্তু সংকট সৃষ্টি করছে। আসামে বাংলাভাষীরা আক্রান্ত হলে চাপ পড়বে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ওপর। এই মানুষগুলিকে যদি বাংলাদেশ ফিরিয়ে না নেয়, তখন এরা কোথায় যাবে? ভারত সরকারের উচিত ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে বলে মিটিং করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভোটের অঙ্ক কষেই বিজেপি বাঙ্গালিদের তাড়ানোর ছক কষেছে। নাম ও পদবী দেখে বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে। ভারত ‘ভাগ কর, শাসন কর’ নীতির আশ্রয় নিয়েছে।; সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েক জনের নথি দেখিয়ে বলেন, ‘বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও এদের তালিকায় নাম নেই। মনে রাখবেন, এরা কিন্তু রোহিঙ্গা নয়। এদের মধ্যে ৪-৫ পুরুষ ধরে ওখানে রয়েছেন। বাঙালি, অহমিয়া, বিহারি, হিন্দু- মুসলমান সকলেই ভারতীয়। আমরা আসামবাসীর পাশে আছি।’
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গে আসার কথা বললে আমরা ভাবব, কিন্তু তাঁদের তাড়াবে কেন। জাাতিসংঘের রেজ্যুলেশন মোতাবেক তাদের আশ্রয় দিতে হবে।’
বাদ পড়া নাগরিকদের আসাম থেকে বিতাড়িত করার আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই বাংলাভাষী অধ্যুষিত আসামের বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাড়তি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ৩৩ জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আসাম জুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
মমতা জানান, আসামের সঙ্গে ইন্টারনেট সহ সব যোগাযোগ বন্ধ। গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি নিজে যাবেন বা একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবেন। আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য সংসদে বিল আনার দাবিও করেন মমতা।
অন্যদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, এটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। খসড়ায় যাঁদের নাম নেই তাঁরা ৩০ অগাস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবার নথি জমা দিতে পারবেন। তাতেও নাম না উঠলে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যাবে। বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের কেউই সমস্যায় পড়বেন না। কাউকেই জোর করে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে না। এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দু।
আপনার মতামত লিখুন :