মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ : ১। পহেলা এপ্রিল, ২০১৮। তারিখটা ছিল ‘এপ্রিল ফুল’, তবে না এপ্রিল ফুল নয়, এই দিনে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের গৌরব গাঁথার মুকুটে সংযুক্ত হয়েছিল আরেকটি পালক। হংকং –এর মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৫ মেয়েদের ফুটবল দল চারজাতি জকি কাপ টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবার সৌভাগ্য অর্জন করে।
২।এই সাফল্য কি হঠাৎ ভাগ্যগুণে পাওয়া? না, একটু পিছনে গেলেই এই সাফল্যের নেপথ্য গাঁথা খুঁজে পাব। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনূর্ধ্ব-১২ মেয়েদের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছিল অল্প ক’দিন আগেই। ঐ টুর্নামেন্ট মেয়েদের বিশাল এক প্লাটফর্মের দুয়ার উন্মুক্ত করে। এই ফুটবলের ব্যাপ্তি ছিল যেমন আকাশ ছোঁয়া, তেমনই নারী ফুটবলের ইতিবাচক ও আশা জাগানিয়া প্রভাব ফেলে। ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের হাঁটি হাঁটি করে যাত্রা শুরু হয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬৪ হাজারেরও বেশী বিদ্যালয়ে প্রায় ১১ লাখ মেয়ে অংশগ্রহণ করে। দল, খেলোয়াড় ও খেলার সংখ্যায় সব পরিমাপকের মানদ-ে এত বিশাল আকারের ফুটবল প্রতিযোগিতা সারা বিশ্বেই এক বিরল ঘটনা। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ন কলসিন্দুর বিদ্যালয়। এই দলটি নারী ফুটবলের অগ্রদূত হিসেবে সৃষ্টি করেছে নানা ‘মিথ’।
৩। ২০১৭ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দোহারো সরকারী বিদ্যালয়ে চ্যাম্পিয়ন টিমের অধিনায়ক তাহমিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে নারী জাগরণের নীরব বিপ্ল¬ব সাধিত হয় গেছে। ফুটবল খেলতে অসংখ্য স্কুলের হাজার হাজার মেয়ে উৎসাহিত হচ্ছে।
৪। আজকের এই সাফল্য ইসিজির ধারাবাহিক ‘আপ স্ট্রোক’ এর মত। নারী ফুটবলের সাফল্যের লিস্ট অনেক বড়। অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে ২০১৫ সালে নেপাল এবং তাজাকিস্থানে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়া, অনূর্ধ্ব-১৬ আসরে ২০১৬ সালে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাইল্যান্ডে চূড়ান্তপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন সাফল্যের ঝুলিকে সমৃদ্ধ করেছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে পূর্বে উল্লেখকৃত অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে অপরাজিত থেকে চারজাতি ফুটবলে সব ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে সাফল্যের মশালকে দূর দূর দিগন্ত পারে নিয়ে গেছে। এই আলোর পথ যাত্রীদের কাছে এখন সবারই প্রত্যাশা ‘এখানে থেমো না’!
৫। সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে রানার্স আপ হল ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৩ সালে ফিফা র্যাংকিংয়ে এই দলের অবস্থান ছিল ১১৬। মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে আন্ডারডগ অবস্থান থেকে ক্রোয়েশিয়া সারা বিশ্বের কোটি ফুটবলমোদীদের ভালবাসা অর্জন করেছে।
৬। নির্ধারিত লক্ষ্য, আত্মমূল্যায়ন, সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে উপেক্ষিত নারী ফুটবল দল একদিন বিশ্বকাপে খেলবে- এই আশা আমার, আপনার এবং আমাদের সবার। এক কথায় সতোরো কোটি বাঙালির চাওয়া ফুটবল বিশ্বে আমাদের উজ্জ্বল অবস্থান।
আপনার মতামত লিখুন :