শাহরিয়ার কবির : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের যে আন্দোলন ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়, তখন সৈয়দ হাসান ইমামকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় শিল্পীদের প্রতিবাদী সংগঠন। বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বর্জন করেন। গণ আন্দোলনের চাপে পাকিস্তানী সরকার ৮ মার্চ থেকে বেতার টেলিভিশনের দায়িত্ব বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ২৫ মার্চের পর হাসান ইমাম মুজিব নগরে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে ১৯৭১-এ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের নাট্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। সৈয়দ হাসান ইমাম মুজিবনগর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালেহ আহমেদ নামে বাংলা সংবাদ পাঠ করতেন।
তিনি ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংবাদ পাঠ এবং নাট্য বিভাগের দায়িত্বভার বহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জহির রায়হানকে সভাপতি ও হাসান ইমামকে সাধারণ সম্পাদক করে মুজিব নগরে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতি গঠন করা হয়, যাদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দলিল “লট দেয়ার বি লাইট’ নির্মিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠায় হাসান ইমাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নানা জায়গায় গেছেন, সাংস্কৃতিক চেতনার উদ্বোধন ঘটিয়ে সম্প্রীতি ও মৈত্রী স্থাপনের কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে কাজ করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। দীর্ঘ সময় তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সভাপতি হিসেবে। সৈয়দ হাসান ইমাম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার পান। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। তার পরামর্শক্রমে ঘাতক দালাল প্রতিরোধ কমিটি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে রূপান্তরিত হয়। এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমি উনাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি ও চিনেছি। তার প্রত্যেকটা বিয়য় আমার স্মৃতি হয়ে আছে। তাকে ৮৩তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
পরিচিতি : সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কিমিটি/ মতামত গ্রহণ : নৌশিন আহম্মেদ মনিরা/ সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :