শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ৩০ জুলাই, ২০১৮, ০২:৫২ রাত
আপডেট : ৩০ জুলাই, ২০১৮, ০২:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আষাঢ়ে গল্প নয়, ঢেঁকিছাঁটা সত্য: বন্ধু থেকে দানব 

বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু হাসান শাহরিয়ার তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ ও তার ব্যবহারকারীদের নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তার টাইমলাইন থেকে সরাসরি তুলে ধরা হল।

আমার কবিতার একটি পাঠকপ্রিয় পঙ্‌ক্তি আছে– 'বন্ধুত্ব মানেই তুমি বিচ্ছেদের চুুক্তি মেনে নিলে'। লেখা-হয়ে-যাওয়া কবিতার পঙ্‌ক্তি নিয়ে আমার উৎসাহ খুব কম। কোনও পাঠক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও লজ্জা পাই। কিন্তু, শৈশবের এক বন্ধু যখন গণশত্রু হয়ে উঠতে দেখে পঙ্‌ক্তিটি পুনঃপুন স্মরণ করেছিলাম।

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধসহ দেলোয়ার নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে র‍্যাব এবং ধৃতব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর চারটি নামি হাসপাতালে অভিযান চালায়– ল্যাবএইড, ইউনাইটেড, স্কয়ারসহ কয়েকটি অভিজাত হাসপাতালে। দেলোয়ার র‍্যাবকে জানায়, ওই চারটি হাসপাতালে সে ওইসব প্রাণঘাতী ওষুধ নিয়মিত সরবরাহ করত। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ তো বিষ। কথিত হাসপাতালগুলো বিষ খাওয়ায় চিকিৎসা-প্রার্থীদের? পাওয়া গেছে মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্টও। হাসপাতালগুলোর একটির (ল্যাবএইড) মালিক আমার শৈশবের বন্ধু শামীম! তাকে অর্থগৃধ্নু বলে জানতাম। শৈশবের অনেক বন্ধুকেই তার নাম শুনলে নাক সিঁটকাতে দেখেছি। কেন, সিঁটকাত, এখন বুঝতে পারি। এই সংবাদের পর তারা বোধকরি শুধু নাক সিঁটকানোকে যথেষ্ট মনে করবে না। আমিও না। কয়েকদিন আগে শৈশবের দুই বন্ধু Mahbubur Rashid ও Saif Ahmed-এর আমন্ত্রণে– রঞ্জু, জামাল, আউয়াল, বাবুল, আরিফ, শাহীন, সোবহান সাইফ, মোহসিন, মশিউর, মাসুদ, লাবলু...– স্কুলজীবনের কজন বন্ধু এক হয়েছিলাম উত্তরার এক আকাশবান্ধব ভবনে। তারাই জড়ো হয়েছিলাম, যারা এখনও স্বপ্ন দেখতে এবং নতুন প্রজন্মের চোখে স্বপ্ন ছড়াতে ভালোবাসি। শামীমের জন্য এমন স্বপ্নাদ্য আড্ডা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে তার দানবদুষ্টতায়– একথা ভেবে সেদিন কেমন করেছে মন। হাজার হলেও শৈশবের বন্ধু।

তো যা বলছিলাম। র‍্যাবের পর দুর্নীতি দমন কমিশনও হানা দেয় হাসপাতাল চারটিতে। ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হয় হাসপাতালগুলোর কোনও-কোনওটির। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা গণশত্রুদের এ অর্থদণ্ড আমার কাছে খুবই অপ্রতুল মনে হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে এই অংকের অর্থ ওরা একজন রোগীর কাছ থেকেই আদায় করে থাকে। প্রাবন্ধিক-ভাষাচিত্রী মোরশেদ শফিউল হাসান বেসরকারি হাসপাতালের চরিত্রচিত্রণ করতে গিয়ে এক গদ্যে লিখেছেন–

"রোগীকে প্রথম সুযোগেই তারা আইসিইউতে নিয়ে যায়, তারপর সেখান থেকে লাইফ সাপোর্টে। মৃত ব্যক্তিকেও লাইফ সাপোর্টে রাখার নাম করে তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। রোগীর পারিবারিক অবস্থা বুঝে তাদের এই শকুনি-তৎপরতা শুরু হয়। আর রোগীর মৃত্যুর পরও তা চলতে থাকে। ভুক্তভোগী অনেকের কাছ থেকেই বছরের পর বছর আমরা এমন অভিযোগ শুনে আসছি।"

লেখার উপসংহারে মোরশেদ শফিউল হাসান বিবেকের কাছে এই জিজ্ঞাসাও রাখেন "চিকিৎসার নামে এই মৃত্যু-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার– জোরালো প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় কি এখনও আসেনি?"

বিবেকহীনদের বিরুদ্ধে একজন বিবেকবান লেখকের এই জিজ্ঞাসা আমারও। শৈশবের শামীম আর পরিণত বয়সের ডা. এ. এম. শামীমের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল তফাৎ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বন্ধুদের মধ্যে শামীমের সাফল্য ও সামাজিক অবস্থান সবার শীর্ষে। কিন্তু, সাফল্য মানেই সার্থকতা নয়। নষ্ট সমাজে অর্থ-বিত্তই সাফল্যের সূচক। সেই সাফল্য খুনিরও থাকতে পারে, যদি সে ধরা না পড়ে। যেমন আজও অধরা সাগর-রুনির বা ত্বকীর হত্যাকারীরা। নিঃসন্দেহে সফল তারা; কিন্তু, সার্থক নয়। মোরশেদ শফিউল হাসানের লেখাটি পড়ে শৈশবের বন্ধুটিকেও আমার সেরকম সার্থকতাহীন সফল মনে হয়। আরও মনে হয়, সে তো গণশত্রু।

হ্যাঁ, বিপুল অর্থের বিনিময়ে অভিযুক্ত হাসপাপাতালগুলো থেকে সুচিকিৎসা নিয়ে ফেরারও উদাহরণ আছে। রোগীর ন্যায্য অধিকার সেটা। ল্যাবএইড কী ইউনাইটেড কী স্কয়ার কী পপুলার তো আর দাতব্য স্বাস্থ্যসেবা দেয় না? তাই বলে রোগীদের মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা নকল ওষুধ খাইয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া! জীবনে এর চেয়ে অনেক কম অসাধুু বন্ধুসঙ্গ পরিত্যাগ করেছি। ল্যাবএইডের মালিক-বন্ধুটির ক্ষেত্রেও ব্যত্যয় ঘটাইনি। একটু দেরিতে হলেও চিনতে ভুল করিনি তাকে।

কবি শামসুর রাহমান শৈশবকে বেহেস্ত জানতেন। সবার শৈশবই বেহেস্ত এবং বেহেস্তের স্মৃতি তো সুন্দর হবেই। উল্টোটিও অসত্য নয়– বেহেস্তি শৈশবেরই কোনও কোনও বন্ধু গণশত্রু হয়ে ওঠে সময়ের ব্যবধানে। তখন বন্ধু না বলে গণশত্রুকে 'গণশত্রু'ই বলতে হয়। ত কেউ গণমানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে বন্ধুত্বকে অস্বীকার করাও সত্য ও সুন্দরের সাধনা।

তো, ফেসবুকে আমার শৈশবের আরেক বন্ধু Zia Ahmed মূল্যবান একটি মন্তব্য করেছিলেন আমার এক পোস্টে–

"বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম তদারকির জন্য আমাদের দেশে কি কোনও তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা আছে? এ বিষয়ে হাসপাতালগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা কি প্রতিরোধযোগ্য নয়? তারা কি জবাবদিহির বাইরে? না, আমি ক্রসফায়ারের কথা বলব না; কেননা, ক্রসফায়ার একটি বর্বর সংস্কৃতি। তবে, চিকিৎসাক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান এই অপচিকিৎসা প্রতিকারের একমাত্র কার্যকর উপায় হলো– 'ক্লাস অ্যাকশন' মামলা। আমাদের প্রয়োজন সঠিক আইন। উল্লেখ্য, ক্লাস অ্যাকশনের মামলায় ভুক্তভোগীকে অর্থ ব্যয় করতে হয় না।"

দূর প্রবাসে থাকা জিয়া পেশায় প্রকৌশলী এবং তিনিও আমার শৈশবের বন্ধু। না, জীবন প্রৌঢ়ত্বে গড়ালেও জিয়া একদিনের জন্যও গণশত্রু হয়নি। বরং, আমার মতোই ঘৃণা করে তাদের। গণশত্রুদের দণ্ড চায়। অর্থদণ্ড– ক্লাস অ্যাকশন। জিয়ার মতে এই ক্লাস অ্যাকশনই গণশত্রুদের দমন করতে সক্ষম।

'ক্লাস অ্যাকশন' হচ্ছে এমন এক মামলা, মামলার বাদি একজন হলেও তিনি একই ধরনের ভুক্তভাগী সবার প্রতিনিধিত্ব করেন এবং মামলার রায়ও সকল ভুক্তভোগীর জন্য সমান প্রযোজ্য হয়।

আইনের প্রয়োগ থাকায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর চিত্র যখন এই, তখন বিচারহীনতার সুযোগে এক শ্রেণির পিশাচ বংশোদ্ভূত নষ্ট ব্যবসায়ী মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বাংলাদশে। হাসপাতাল নাম দিয়ে খুলে বসেছে কসাইখানা। অবিলম্বে এই খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। নইলে কীসের রাষ্ট্র আর কীসের মানবিকতা?

সব কথার শেষকথা এই যে, অর্থের লালসায় শৈশবের কোনও বন্ধুও যদি সময়ের ব্যবধানে গণশত্রুতে রূপান্তরিত হয়, শুধু বন্ধুবিচ্ছেদই তার জন্য যথেষ্ট নয়, তাকে প্রতিরোধ করাও একজন বিবেকবান মানুষের কাজ। এই কাজটি করতে আমরা অস্বস্তিবোধ করি বলেই গণশত্রুরা ফুলে-ফেঁপে দানব হয়। সীমাহীন লালসায় এই দানবরা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কমর্চারীদের কাছ থেকে প্রভুভক্ত কুকুরের আচরণ আশা করে এবং বিরামহীন মৃত্যু-বাণিজ্যের কারণে নিজেদের ভাবে যমদূতের খুড়তুতো ভাই। ফলত, নিজেদেরও যে একদিন মরতে হবে, সেকথা তারা বেমালুম বিস্মৃত হয়। হলেই কী? অগণন মানুষের অভিশাপ ঘণ্টা বাজিয়ে তাদের অসম্মানজনক মৃত্যুর বার্তা ঘোষণা করছে। শৈশবের বন্ধুরাও বয়কট করতে বাধ্য হয়েছে দানবে রূপান্তরিত বন্ধুটিকে। নইলে স্কুলের সহপাঠীদের এই মধুর পুনর্মিলনীর ছবিটিতে শামীমকেও দেখা যেত। সময় বড় বলবান। মানব-দানব কাউকেই ছাড়ে না।

পাঠকদের সুবিধার্থে  লেখকের ফেসবুক লিংকটি নিম্নে সংযুক্ত করা হল।

https://www.facebook.com/abu.h.shahriar/posts/10155718756012742

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়