শিরোনাম
◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ০৭:৪২ সকাল
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ০৭:৪২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঐতিহ্যের বিরল দৃষ্টান্ত : মহাদেবপুরে ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ): গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়া-ঘেরা শান্তির নীড় মাটির বাড়ি। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর গরিবের ‘এসি’ বাড়ি হিসেবে খ্যাত। মাটির বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক।

এক সময় গ্রামের বিত্তশালীরাও অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা বাড়ি তৈরি করতেন, যা এখনও কিছু কিছু এলাকায় চোখে পড়ে।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় রয়েছে ১’শ ৮ কক্ষের মাটির বাড়ি যা ঐতিহ্যের এক অন্যতম বিরল দৃষ্টান্ত। ২১বিঘা জমির উপর ২’শ ২৫ফিট লম্বা ও ২’শ বান টিন দ্বারা নির্মিত দোতলা মাটির বাড়ি যার ১’শ ৮টি কক্ষ রয়েছে। ১০৮ কক্ষের এই মাটির বাড়িটি দেখতে অনেকটা প্রাশাদের মতো।

বিশাল এই বাড়িটির নির্মাতা সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল। এরা আপন দু’জন সহোদর ভাই। বাড়িটির দেখা মিলবে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে চেরাগপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে।

এছাড়াও নওগাঁ জেলা সদর থেকে মহাদেবপুর আসার পথে আন্তজেলা মহাসড়কের তের মাইল নামক মোড় থেকে উত্তর দিকে প্রায় ৫কিলোমিটার দূরে পাকা রাস্তার পার্শ্বে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িটি অবস্থিত।

প্রায় ৩২ বছর আগে মাটির এই দোতলা বাড়িটি নির্মিত হয়েছে। মাটি ও খড় পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে সেই কাদা ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়।

এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কারণ একসাথে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দোতলা বাড়িটির (১৮-২০ ফুট উঁচু) নির্মাণ কাজ মহাযোগ্যের মতো নির্মিত হয়েছিল।

স্বাভাবিকভাবে মাটির দোতলা বাড়ি নির্মাণ করতে ৪-৫ মাস সময় লাগে। তবে এই বাড়িটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। ২১বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ২’শ ২৫ফিট লম্বা বাড়িটি নির্মাণ করতে বাড়ির পিছনে একটি বিশাল পুকুর খনন করতে হয়েছে। আর বাড়িটির ছাউনিতে টিন লেগেছে প্রায় ২’শ বান। কথিত আছে সেসময় একই দোকান থেকে ২’শ বান টিন ক্রয় করার জন্য দোকানদার একটি চায়না ফোনেক্স বাইসাইকেল উপহার দেন। টিন সংগ্রহ করতে দোকানী সময় নিয়েছিল সত দিন। পায়ে হেটে একবার বাড়ির চার ধার চক্করদিতে সময় লাগে ৬-৮ মিনিট।

১’শ ৮ খোপের এই বিশাল বাড়িতে প্রবেশের দরজা ১১টি, তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। কোন কোন কক্ষে ৪-৫টি দরজা রয়েছে। দোতলায় উঠার শিড়িঁ রয়েছে ১৩টি। তবে যে কোন একটি দিয়ে যাওয়া যাবে ১’শ ৮ কক্ষে।

বিশাল আকারের এই বাড়িতে ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ৩৫-৪০ জন লোক বসবাস করে। সবমিলে বসবাসের জন্য ৩০-৩৫টি কক্ষ ব্যবহার হয় বলে জানা গেছে। আলিপুর গ্রামের সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল নামের সহোদর দুই ভাই শখের বসে তৈরি করেছিলেন এই বাড়িটি। বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘর। মাটির ঘরগুলো বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দূযোর্গে বিশেষ ক্ষতি সাধন হয় বলেই মানুষ ইট সিমেন্টের ঘর-বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বাড়িটি হয়ে উঠতে পারে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাহক ও পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়