শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ০৬:৩৩ সকাল
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ০৬:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইসির চেয়ে বড় ভূমিকায় পুলিশ

ডেস্ক রিপোর্ট : সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে পুলিশের ভূমিকাই প্রধান হয়ে উঠছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিজেদের ক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না ইসি। ফলে তিন সিটিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আবার সিটিগুলোতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায়ও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না সাংবিধানিক সংস্থাটি। ফলে নির্বাচনের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলোর।

সর্বশেষ খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির ভূমিকা ছিল দুর্বল। পুলিশের গ্রেপ্তার এবং বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে এক পক্ষকে মাঠছাড়া করা, বুথ দখল করে ব্যালটে সিল মারা, বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, এজেন্টদের তুলে নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম দেখা গেছে এই দুই নির্বাচনে। তখন বিএনপি বলেছিল, এ দুটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা করেননি, পুলিশ আর ডিবির কিছু লোক করেছে।

নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল-এই তিন সিটি নির্বাচনেও একই ধরনের আলামত দেখা যাচ্ছে। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, পুলিশের তৎপরতা ও ইসির দুর্বলতা তত প্রকাশ্যে আসছে। আইনত তফসিলের পর পুলিশ ও প্রশাসন ইসির নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু, সে প্রশ্ন আছে। ইসির কাছ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না পেয়ে ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থীরা সুরক্ষা পেতে আগেভাগে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। ইতিমধ্যে আলাদা দুটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট ও বরিশালে বিএনপির নেতা, সমর্থক ও নির্বাচনে প্রচারকারীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিপরীতে পুলিশও নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শুধু ইসি চাইলেই একটি ভালো নির্বাচন করতে পারে না। এর জন্য অংশীজনদের বিশেষ করে সরকারের সহযোগিতা দরকার। পুলিশ-প্রশাসন সহযোগিতা না করলে ইসি একা ভালো নির্বাচন করতে পারে না। তবে ইসিকে আরও ‘প্রো-অ্যাকটিভ’ হতে হবে।

তিন সিটি নির্বাচন সামনে রেখে ১২ জুলাই বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল ইসি। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ইসি তাদের নির্দেশনায় বলেছিল, কারও বিরুদ্ধে যেন হয়রানি বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয় এবং নিরপরাধ বা বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনায় আপত্তি তোলা হয়। তারা যুক্তি দিয়েছিল, কেউ যদি নির্বাচনের সময় আমলযোগ্য অপরাধ করে, তাহলে কি গ্রেপ্তার করা যাবে না?

তিন সিটিতেই ধরপাকড়
১০ জুলাই নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজশাহীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। সেখানে পুলিশকে নতুন কৌশল নিতে দেখা গেছে। এত দিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের মহানগরীর বিভিন্ন নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতো। কিন্তু এখন রাজশাহী শহর থেকে আটক করে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন জেলার মামলায়।

গত সোমবার রাতেই রাজশাহী শহর থেকে বিএনপির ১১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের তিনটি জেলার বিভিন্ন থানায় চালান দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি দাবি করেছে, তাদের ৪৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় এবং নির্বাচনী এজেন্ট হতে পারেন এমন নেতা-কর্মীদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

গত সোমবার দিবাগত রাতে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ও তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী জুরেজ আবদুল্লাহ গুলজারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশের ওপর হামলার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া একাধিকবার নেতা-কর্মীদের আটকের ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক অবস্থান নিয়ে তাঁদের ছাড়িয়ে নেন।

পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একটি অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুনের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় বিএনপির ৭২ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত আছেন আরও আসামি। বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, ভোটের আগ মুহূর্তে এই দুই মামলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। ইতিমধ্যে চারজনকে পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের সাতজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক নেতা-কর্মীর বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে।

সিলেটে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, তিন সিটিতেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, বাসায় বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে ডিবি পুলিশ। একপেশে একটি নির্বাচন করার আয়োজন চলছে।

বরিশালেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়কারী মির্জা আব্বাস সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, বরিশালে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সদস্যরা। প্রচার চালানোর সময় এখন পর্যন্ত বিএনপির ১৯ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার রাতে ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রলোভন দেখিয়ে বসাতে ব্যর্থ হয়ে এখন পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র (সহকারী মহাপরিদর্শক-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে পুলিশের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।’ তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন আইন অনুযায়ী পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করে থাকে। সে সময় পুলিশ সদর দপ্তরও তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।

তিন সিটিতে পুলিশ-প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগেই বিএনপি হেরে যাচ্ছে। এ কারণে তারা কিছু অনুমাননির্ভর প্রশ্ন তুলছে, যাতে হেরে গেলে অভিযোগগুলো ‘ব্র্যান্ডিং’ করা যায়।

পুলিশের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ আছে কি না গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি ইসি সচিব হেলালুদ্দীন। ২৩ জুলাই বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেছিল, তিন সিটি করপোরেশনে দলটির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমন অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

ইসি বিএনপির এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল। গত বুধবার তিন সিটির পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, পত্রপত্রিকায় বা অন্যভাবে যেসব তথ্য এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে পুলিশ কমিশনারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে নয়, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এবং মামলার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগের সত্যতা পুলিশ কমিশনাররা ইসিকে নিশ্চিত করেনি। তবে ইসি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগের তালিকা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হয়েছে।

তিন সিটিতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। বিধি অনুযায়ী এই অপরাধে জেল-জরিমানা এমনকি প্রার্থিতা বাতিল করারও ক্ষমতা আছে ইসির। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তারা কিছু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই দায় সারছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বড়জোর একই কাজ না করার মুচলেকা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন।

তিন সিটি নির্বাচনের ঠিক তিন মাস পর থেকে শুরু হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা। সংবিধান অনুযায়ী এই নির্বাচন হবে বর্তমান সরকারের অধীনে। জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সিটি নির্বাচনগুলোতে ইসি নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করতে না পারলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের আস্থার সংকটে পড়বে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনের সমস্ত কার্যক্রমকে যদি আমরা একটি নাটক ধরি, এর পরিচালক হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, আর ভোটাররা হচ্ছেন নায়ক। এখন দেখা যাচ্ছে পুলিশ সেখানে ভিলেন হয়ে গেছে। এটা সুখকর নয়। পুলিশ কাউকে ধরলে চাইলে আগে ধরত। নির্বাচনের তিন-চার দিন আগে লোকজন ধরলে নির্বাচনে এর সাংঘাতিক বিরূপ প্রভাব পড়বে।’ সূত্র : প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়