শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:১১ দুপুর
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:১১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দায় এড়াতে পারে না পেট্রোবাংলাও

ডেস্ক রিপোর্ট : জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, যিনি যে বিষয়টি ভালো বোঝেন এমন দক্ষ ব্যক্তিকেই সেই স্থানের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত, তাহলে ভালো ফল আসে।

পেট্রোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফায়েজউল্লাহ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। এর আগেও ইশতিয়াক আহমদও ছিলেন একই ক্যাডারের। তার আগে চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন মনসুর। তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে আমলারাই পেট্রোবাংলা চালাচ্ছেন।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক এক সদস্য বলেন, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস এবং ভারতের ওএনজিসির সমসাময়িক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। এই দুই প্রতিষ্ঠান তাদের দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু পেট্রোবাংলার অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব একজন বিশেষজ্ঞকে দেওয়া উচিত। কিন্তু পেট্রোবাংলার ক্ষেত্রে তেমনটি হয় না। এখানে মূলত আমলারাই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ফলে জ্বালানি খাত দ্রুত এগোতে পারছে না।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফায়েজউল্লাহর ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।

এদিকে তদন্ত কমিটি গঠনও নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পেট্রোবাংলার তিন সদস্যের কমিটিতে মন্ত্রণালয় বা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি। এজন্য আরও উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, কামরুজ্জামানের কয়লা খনির বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু তার হাতেই ছিল খনির দেখভালের দায়িত্ব।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক কামরুজ্জামান সমকালকে বলেন, তিনি মাসখানেক আগে এই পদে যোগ দিয়েছেন। তাই খনির বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর গ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ মেলেনি। তবে তদন্ত করতে গিয়ে খনি পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনে ঘাটতি দেখেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে পেট্রোবাংলার সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, পেট্রোবাংলার পরিচালনার ধরন অনুযায়ী সংস্থার পরিচালকের (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সরাসরি দেখভাল করার কথা। ফলে কয়লা কেলেঙ্কারির দায় তিনিও এড়াতে পারেন না। এ পদে আগে বেশ কয়েকজন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তাকে জবাবদিহিতার আওতায় না এনে তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সূত্র বলছে, কোম্পানি দিনাজপুরের হলেও অধিকাংশ বোর্ড সদস্য থাকেন ঢাকায়। বোর্ডসভাও হয় ঢাকাতেই। ফলে কোম্পানির সার্বিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তাদের বাস্তব জানাশোনা থাকে কম।

জানতে চাইলে বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মর্তুজা ফারুক চিশতি বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো একটি বোর্ড পরিচালনা করে। ফলে ঘটনার দায় তাদের ওপর বর্তায়। কয়লা খনির দেখভাল করতে পেট্রোবাংলা ব্যর্থ হয়েছে। মর্তুজা বলেন, কোম্পানিগুলোর তদারকির জন্য বোর্ডে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রাখা হয়। তারও গাফিলতি রয়েছে। তারা যে কোম্পানিগুলোর খোঁজ-খবর রাখেন না, তা এ ঘটনাতেই প্রমাণিত হলো।

জানা গেছে, কয়লার পুরো হিসাবে স্বচ্ছতা ছিল না। শুধু কয়লা উত্তোলন, বিক্রি আর মজুদের হিসাব রাখা হয়েছে। কিন্তু পদ্ধতিগত লোকসানের কোনো হিসাব রাখা হয়নি। মজুদের পরিমাণ সরেজমিনে কখনও পরিমাপ করা হয়নি। শুধু খাতা-কলমেই হিসাব রাখা হয়েছে। এমন গোঁজামিল দিয়ে গত ১৩ বছর চলছে খনির কার্যক্রম। পেট্রোবাংলা বা পরিচালনা বোর্ড কেউ এ নিয়ে কখনও প্রশ্ন তোলেননি।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বার বার বলা হচ্ছিল কয়লার মজুদ কমে আসছে। যেকোনো সময় কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, পর্যাপ্ত কয়লা রয়েছে। কারণ তারা কেউ কোল ইয়ার্ড পরিদর্শন না করে সরকারি নথির হিসাব দেখে বলে দিয়েছেন যে কয়লা আছে। পরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক পরিদর্শনে কয়লা চুরির ঘটনা ধরা পড়ে। তারাই বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করেন। সরকার পেট্রোবাংলার কাছে ব্যাখ্যা চাইলে এরপর তারা তৎপর হয়। ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও জ্বালানি খাতের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, বিসিএমসিএল পেট্রোবাংলার অধীন একটি সংস্থা। কয়লা বিক্রির একটি লভ্যাংশ তারা পেয়ে থাকে। লভ্যাংশ নিলেও পেট্রোবাংলা খনি কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেনি। তাদের মতে, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানই পদাধিকার বলে বিসিএমসিএলের বোর্ড চেয়ারম্যান। তাই কোম্পানির সার্বিক বিষয়ে তার নজরে থাকার কথা। কিন্তু কয়লা উধাও সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। শুধু বর্তমান চেয়ারম্যানই নন, সাবেক চেয়ারম্যানরাও এ বিষয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি।

এরই মধ্যে খনি কর্তৃপক্ষের (বিসিএমসিএল) সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের দায়ী করে তাদের অনেককে সাময়িক বরখাস্তসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৯ জনের বিরুদ্ধে। বড়পুকুরিয়া কোল ইয়ার্ডে মজুদ এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য পাশে অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

দেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া খনি থেকে বিপুল অঙ্কের কয়লা উধাও হওয়ার ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না পেট্রোবাংলাও। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বলেছেন, এ ঘটনায় পেট্রোবাংলার গাফিলতি ছিল। খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, শুধু দোষ চাপানো হচ্ছে খনির কর্মকর্তাদের ওপর। তারা বলছেন, পদাধিকার বলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের (বিসিএমসিএল) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। আলোচ্য সময়ে যারা পেট্রোবাংলার নেতৃত্বে ছিলেন তারাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাহলে দীর্ঘদিন ধরে এই কয়লা চুরির ঘটনা আগেই ধরা পড়ত।

সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়