শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ০৭:৩৩ সকাল
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ০৭:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোহাম্মদপুর থেকে ‘অপহৃত’ কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতাকে পাওয়া গেছে

সুশান্ত সাহা : রাজধানীর মোহাম্মদপুরে লালমাটিয়ায় নিজের বাসার সামনে থেকে ‘অপহৃত’ কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ হোসেন সরকারকে ১১ ঘণ্টা পর পূর্বাচলের ৩০০ ফুট এলাকায় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মীর জামাল উদ্দিন জানান,তিনশ ফিট রাস্তায় রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে কে বা কারা রেখে যায়। এরপর তিনি পরিবারকে ফোন দিলে তারা সেখানে যায়। পুলিশকে তারাই খবর দেয়। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তার মুখ থেকে বিস্তারিত শুনবো। তারপর বুঝতে পারবো, কারা তাকে অপহরণ করেছিল। খালাতো ভাই ফরাদ বলেন, "রাত ১০টার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তার স্ত্রীর নম্বরে ফোন দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি আবার ফোন করে জানান, তাকে তিনশ ফিট এলাকায় রেখে যাওয়া হয়েছে। যে গাড়িতে তাকে তুলছিলো সেই গাড়িতেই তাকে নামিয়ে দেয়া হয়। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ সবকিছু অপহরণকারীরা ফেরত দিয়েছে। তার ফোন পাওয়ার পর আমাদের পরিবারের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে তিনশ ফিট যায়। সেখানে তাকে পেয়ে রাত সাড়ে ১২টায় বাসায় নিয়ে আসা হয়।"

এর আগে শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়ে ফেরার সময় বাসার সামনে থেকে তাকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। অপহরণকারীদের হাতে ওয়াকিটকি ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। স্বজনদের ধারণা, রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে তাকে অপহরণ করা হতে পারে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, অপহরণ বা জোর করে তুলে নেওয়ার একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে কারা কেন অপহরণ করেছে তা জানা যায়নি। ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। তা অস্পষ্ট থাকায় অপহরণকারীদের চেনা যায়নি।
অপহূতের খালাতো ভাই ফাহাদ ভূঁইয়া জানান, পারভেজ হোসেন বর্তমানে কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ (তিতাস-হোমনা) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঢাকার লালমাটিয়ার সি-ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৩০ নম্বর বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। শুক্রবার দুপুরে তিনি জুমার নামাজ পড়তে স্থানীয় মিনার মসজিদে যান। দুপুর পৌনে ২টার দিকে তিনি হেঁটে বাসার সামনে এলে তাকে জোর করে কালো রঙের একটি জিপে তুলে নেওয়া হয়। ওই গাড়িটি অন্তত দুই ঘণ্টা আগে থেকেই এলাকায় ঘোরাফরা করছিল।
বাসার নিরাপত্তাকর্মী ওমর আলী জানান, পারভেজ হোসেন বাসার গেটের সামনে আসার পরপরই প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা এক ব্যক্তি এসে তার সঙ্গে করমর্দন করেন। লম্বা চুলের আরেকজন পেছন থেকে এসে পারভেজের মুখ চেপে ধরে। তখনই কালো রঙের জিপটি সামনে চলে আসে এবং তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। গাড়ির ভেতর আরও দু'জন বসে ছিলেন। ওই গাড়ির নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো ঘ ১৪-২৫৭৭। তবে নম্বরটি সঠিক নয় বলে যাচাইয়ের পর জানায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপহরণের সময় ওমর আলী ঠেকাতে গিয়েছিলেন, তবে অস্ত্রের মুখে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পারভেজ সরকারের স্ত্রী তাহমিনা পারভেজ জানান, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে তার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল শিকদার এ ঘটনায় জড়িত বলে তার ধারণা। কারণ প্রায় দেড় বছর আগে কুমিল্লার বাতাকান্দি বাজারে তার লোকজন পারভেজের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তখন তার গাড়ি লক্ষ্য করে ছয়টি গুলিও চালানো হয়েছিল। গাড়িতে গুলি লাগলেও প্রাণে বেঁচে যান পারভেজ। ওই ঘটনার পর তিনি আর এলাকায় যাননি। মাঝে ওমরা করেছেন। স্থানীয় রাজনীতি থেকেও নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে তিনি সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। অপহরণের পর থেকে পারভেজের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার একটি বৈধ পিস্তল রয়েছে। অপহরণের সময় সেটি সঙ্গে ছিল কি-না তাহমিনা তা নিশ্চিত নন।
তাহমিনার অভিযোগ, সোহেল শিকদার মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। তার অপকর্মে বাধা দেওয়ার কারণেই চক্ষুশূল হন পারভেজ। এ কারণেই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। কিছুদিন আগে সোহেল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, পারভেজকে হত্যা করবেন। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই পারভেজের সন্ধান পাওয়া যাবে।
তাহমিনার অভিযোগ প্রসঙ্গে সোহেল শিকদার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, পারভেজ হোসেন বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির জমি দখল করে দেওয়ার কাজ করেন। এ কারণে তার অনেক শত্রু রয়েছে। তারাই কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। যেহেতু সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে, তাই সহজেই শনাক্ত করা যাবে কারা অপহরণ করেছে। পারভেজ সন্ত্রাসী ইমন বাহিনীর সদস্য বলেও দাবি করেন সোহেল।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি পারভেজকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। এরপর তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। তখন মুসল্লিসহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় জমান। পুলিশ সূত্র জানায়, আশপাশের ভবনের কোথাও সিসি ক্যামেরা আছে কি-না তার খোঁজ চলছে।
এদিকে অপহরণকারীদের হাতে ওয়াকিটকি ও আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তবে পুলিশ সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। র‌্যাব-পুলিশ জানিয়েছে, তারা পারভেজ হোসেনকে আটক বা গ্রেফতার করেনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়