মাসুদা ভাট্টি, রাজশাহী থেকে ফিরে: রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীদের সকলেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। প্রার্থীরা সরে যাওয়ার পর মুহূর্তেই তাদের প্রশ্ন করা হলে প্রায় সকলেই একথা বলেন যে, কে কী পারবে বা কার দ্বারা কী অর্জিত হবে সেটা তারা জানেন। অতএব, ৩০ জুলাই তারা প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করবেন না। মেয়র প্রার্থীদের প্রত্যেকেই জানিয়েছেন যে, তারা নগরীর প্রয়োজনটি জানেন, এখন শুধু নির্বাচিত হলেই তারা সেসব করে ফেলতে পারবেন। কিন্তু যখন পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, কেন তারা আগে সেসব করেননি, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী যারা আগেও নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা তখন একের পর এক অজুহাত দিতে শুরু করেন। প্রচারণায় সরকারি দলের প্রার্থী প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছে বলে বিএনপি প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ করা হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেসব অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়। প্রকাশ্যেই এই বাদানুবাদ ভোটারদের ভেতরও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে রাজশাহীতে।
তবে তুলনামূলক ভাবে কম থাকলেও শহরজুড়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পোস্টারও শহরময় লক্ষ করা গেছে। বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে যাওয়ায় অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা নতুন পোস্টার লাগাতে পারেননি বলে জানান। কাঁঠাল প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান নিজেই বলেছেন যে, তিনি কোনো পোস্টার ছাপাননি, তার বদলে তিনি লিফলেট বিলি করছেন সর্বত্র। দুই বড় দলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য না হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্য। অপরদিকে জনসংহতি আন্দোলনের প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ দৃঢ়ভাবে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগকেই সত্য বলে দাবি করেন এবং নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।
সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার কথা তুললেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রাজশাহী পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেলে অবস্থান করে সেখান থেকেই মূলত তাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা শেষে এখানে বসেই পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিএনপি দলীয় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও মেয়র প্রার্থীসহ রাজশাহী বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ২০১৩ সালের মতো ধর্মকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর অভিযোগ সম্পর্কে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। যদিও এলাকার ভোটারদের বিশেষ করে নারী ভোটারদের পক্ষে আনার ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বেশ কয়েকজন নারী ভোটার স্বীকার করেছেন।
রাজশাহী শহরের শতকরা ত্রিশ জন ভোটার চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে আগত এবং তারাই মূলত ভোটের মাঠে মূল ফ্যাক্টর বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সে বিচারে রাজশাহীতে বিএনপির ভোটার সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বেশি বলে কেউ কেউ মত দেন। তবে ৩০ তারিখে ভোটযুদ্ধ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার কথা সকলেই স্বীকার করেছেন। একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী দল পরিবর্তন করে অথবা নীরবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করায় সরকারি দলের পক্ষে সমর্থনের পাল্লা ভারী হওয়ার কথাও বলেছেন অনেকে। সব মিলিয়ে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ ও উদ্দীপনা এই মুহূর্তে উত্তুঙ্গ হয়ে উঠেছে। কাকে ভোট দেবেন? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বেশিরভাগই বলছেন, আমরা যোগ্য লোককেই ভোট দিবো, কে কী ‘পাইরবে’ সেটা তারা জানেন বলেও নিশ্চিত বলে তারা জানান।
আপনার মতামত লিখুন :