শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ০১:৪৬ রাত
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ০১:৪৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সরকারের প্রতিপক্ষের আহত শরীর ও আমাদের গণতন্ত্র

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার: জুলাইয়ের ২১ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের কল্পনাতীত উন্নয়ন করে, বিদেশে আকাশ চুম্বি ভাবমূর্তি সৃষ্টি এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রাপ্ত সম্মানি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানটি ছিল জমকালো। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল পূর্বাপরের মতোই, যা শুধু একপেশে নয়, বরং জাতির সামনে নিজের সাফাই গাওয়ার একটি কৌশল। সংবর্ধনায় দেওয়া তার বক্তব্য ছিল, নির্বাচন কেন্দ্রিক এবং ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি হিসেবে সচরাচর তিনি সে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, নির্বাচনপূর্ব বা ইতোপূর্বে যা করার অন্যকোনো রাজনৈতিক দলের সুযোগ একেবারেই নেই এবং ছিল না।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত উন্নয়নের মধ্যে যদি জনগণের নিরাপত্তা হারিয়ে যায়, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থক নন, তাদের জানমাল যদি নিরাপত্তাহীন থাকে তবে এটাই বলতে হবে যে, এ উন্নয়ন একপেশে। প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ তথা তার সমর্থকদের তিনি শুভাকাঙ্খী। কারণ পরের দিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন পত্রিকা, বিভিন্ন মিডিয়াতে দেখা গেল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও দেশের প্রতিবাদী একজন সম্পাদক-এর (আমার দেশ) আদালত প্রাঙ্গনে রক্তমাখা শরীর। ছিনতাই-ডাকাতির কারণে তিনি রক্তাক্ত হননি। তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেরা কুষ্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গনে, যেখানে মাহমুদুর রহমান গিয়েছিলেন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জামিন লাভে আত্মসমর্পণ করার জন্য। তাকে ছাত্রলীগ হামলা করবে এ অবস্থা তিনি টের পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে আশঙ্কার কথা বলাসহ তার যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আগাম বার্তা দিয়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য স্থানীয় ওসি’কে বলা সত্ত্বেও পুলিশ কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি বরং হামলার দৃশ্য তামাশার মতো উপভোগ করেছে। মাহমুদুর রহমানের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে তার উপর হামলা করেছে, তিনি আরও বলেছেন যে, ‘বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব ছিলেন।’

পত্রিকান্তরে প্রকাশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করে মিডিয়াতে বলেছেন যে, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান কুষ্টিয়ার আদালতে যাচ্ছেন, তাকে যেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে শুনতে পাই তাকে ঘেরাও করা হয়েছে। তখনই আমি কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস.এম. মেহেদী হাসানকে জানাই, কুষ্টিয়ার একটি মানহানি মামলায় মাহমুদুর রহমান জামিন নিতে গিয়েছেন, তাকে যেন নিরাপত্তা দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও এই হামলার ঘটনা ঘটল’ (সূত্র: ২৩-৭-২০১৮ তারিখের জাতীয় পত্রিকায়)।

পত্রিকায় প্রকাশিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় মনে হলো যে ছাত্রলীগ বা সরকারি মাসেলম্যানদের কাছে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন, যেমনটি শিক্ষামন্ত্রী তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের নিকট অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ঘুষকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে, অর্থমন্ত্রী ঘুষ নেওয়াকে তিনি বৈধ্যতা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, ‘এ টাকা নেওয়াকে আমি ঘুষ বলব না’, তথ্যমন্ত্রী (স্ব-ঘোষিত বিএনপি বিদ্বেষী মন্ত্রী) বলেই দিয়েছেন যে, যেকোনো ছোটখাট চাকরির জন্য ১০ (দশ) লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় (সূত্র: ২৪-৭-২০১৮ তারিখের জাতীয় পত্রিকা), বড় পুকুরিয়া কয়লা খনিতে সোয়া লাখ টন কয়লা লোপাটে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ভল্টের (বাংলাদেশ ব্যাংক) থেকে সোনা হিরা পাচারের খরচ, বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা লোপাট প্রভৃতি মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে নিশ্চয় (!), যার মূল্যায়ন ‘সময়ই’ যথা সময়ে বলে দিবে।

মাহমুদুর রহমানের রক্তমাখা শরীর শুধু জাতি এখন দেখছে না, বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রক্ষমাখা উদ্যাম শরীরও জাতি দেখেছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময়ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপর হামলা হয়েছে, গেল ঈদ-উল-ফিতরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নিরাপত্তার অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। এ ধরনের অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। এ কথাও বলা যাবে যে, ইতোপূর্বেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, বিএনপির শাসনামলে অনেক অরাজকতা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তো গণতন্ত্রের মানসকন্যা বা মানবতার মা হিসেবে সংবর্ধিত হয়েছেন, এ আমলে তার প্রতিপক্ষরা তার পুলিশ বাহিনী ও মাসেলম্যানদের দ্বারা এমনিভাবে প্রকাশ্যে হেনস্থা হলে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বর্ণিত উপাধিগুলো কি মর্যাদা সম্পন্ন হবে?
লেখক : কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী
ঃধরসঁৎধষধসশযধহফধশবৎ@মসধরষ.পড়স
লেখক
কলামিষ্ট ও আইনজীবি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়