শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ০৮:৪৮ সকাল
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ০৮:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১০ বছরে সাক্ষরতায় রেকর্ড সাফল্য

ডেস্ক রিপোর্ট:  আহমেদ জাকির রাজধানীর তেজগাঁওয়ের লাভ রোডের একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন। গত ১৩ জুলাই রিকশায় করে নাখালপাড়া কাঁচাবাজারের সামনে নামেন তিনি। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল সে সময়। তিনি তড়িঘড়ি করে রিকশা থেকে নামার সময় পেছনের পকেটে একটি খামে থাকা মূল্যবান কাগজপত্র রিকশার ওপরে পড়ে যায়। লক্ষ্য না করায় রিকশাওয়ালাও সেখান থেকে চলে যান। পরের দিন রিকশাওয়ালা জামাল ফকির লাভ রোডে আহমেদ জাকিরের অফিসে এসে কাগজগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যান। জামাল ফকির বলেন, তিনি নিজেই খামের ওপরে ঠিকানা পড়ে কাগজপত্র ফিরিয়ে দিতে এসেছেন। জামাল জানান, তিনি আগে লেখাপড়া জানতেন না। নিজের নামও সই করতে পারতেন না। দুই বছর আগে পটুয়াখালীর দশমিনাতে নিজ গ্রামে তিনি একটি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে অক্ষর চিনেছেন। এখন বানান করে পড়তে পারেন।

জামাল ফকিরের মতো অনেকেই এখন সাক্ষরতার সুফল ভোগ করছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুহুল আমিন। ৪২ বছর বয়সী রুহুল কৃষিকাজ করেন। তিনিও বছর দেড়েক আগে গ্রামের একটি বয়স্ক নৈশ শিক্ষাকেন্দ্রে পাঠ গ্রহণ করেছেন। এখন মোটামুটিভাবে লিখতে-পড়তে পারেন। রুহুল  জানালেন, আগে দোকানে গিয়ে প্যাকেটের গায়ে ছবি দেখে সার, কীটনাশক চিনতেন। এখন পড়েই সরাসরি সব চিনতে, জানতে ও কিনতে পারছেন।

একই উপজেলার পিয়ারপুর এলাকার ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধা ময়না খাতুন।

পাঁচ বছর আগে তিনি নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে সাক্ষরতার আলোয় এসেছেন। তার স্বজনরা জানালেন, স্বাবলম্বী হতে ময়না খাতুন গ্রামের এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। আর এ ঋণ নেওয়ার জন্য লেখাপড়া শিখেছেন। সই করতে জেনেছেন।

গত এক দশকে ভেতরে ভেতরে এভাবেই বদলে গেছে দেশ। লাখ লাখ মানুষ এসেছেন সাক্ষরতার আলোয়। ১০ বছরে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড পরিমাণ ৭২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হারের ওপর ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্সের (ইউআইএস) ২০১৬ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি গত মার্চ মাসে প্রকাশ হয়েছে।

এই প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীর মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির পরিমাণ যথাক্রমে ৭৫ দশমিক ৬২ এবং ৬৯ দশমিক ৯০। এ তথ্যে দেখা যায়, গত ১০ বছরে শিক্ষিত যুবক ও তরুণীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৬ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষ ও নারীর মধ্যে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ৯২ দশমিক ২৪ ভাগ, যা ২০০৭ সালে ছিল ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ইউআইএসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সাক্ষরতার হার ৬৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, নেপালে ৫৯ দশমিক ৬৩, ভুটানে ৫৭ দশমিক ০৩ ও পাকিস্তানে ৫৬ দশমিক ৯৮ ভাগ। সাক্ষরতার হারে বাংলাদেশ এসব দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে শতভাগ সাক্ষরতার হার ও শিক্ষায় গুণগত মান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পসহ নীতিমালা প্রণয়ন ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে সাফল্যের প্রশংসা করেছে ইউনেস্কো। ইউআইএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে দ্বিগুণ ৪ হাজার ৩৯৯.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় করেছে, যা ২০০৮ সালে ছিল এক হাজার ৯৯৩.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে ৭ হাজার ৮৮৫ মিলিয়নেরও বেশি (৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা) ডলার বরাদ্দ ছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। সবার জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ প্রণয়ন করেছে সরকার। এই শিক্ষা নীতিতে শিক্ষায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, শ্রেণিকক্ষ ও পাঠ্যপুস্তক ডিজিটাইজেশন করা, শিক্ষাক্রম সংস্কার, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭২.৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনি সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ২০১৬ সালের পরে সাক্ষরতার হার নিয়ে আর কোনো জরিপ করা হয়নি। তাই এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই তিনি মনে করেন। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণেই সাক্ষরতার হার উত্তরোত্তর বাড়ছে। মন্ত্রী মনে করেন, মানুষ এখন সাক্ষরতার সুফল বুঝতে শুরু করেছে। তাই তারা আর নিরক্ষরতার অন্ধকারে ডুবে থাকতে চান না।

সব নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর করতে না পারলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে 'মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)' বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার ২৫০টি উপজেলায় ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষর নারী-পুরুষকে জীবনদক্ষতাসহ মৌলিক সাক্ষরতা প্রদান করা হচ্ছে।

সাক্ষরতার হার নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কিছুটা বিভ্রান্তি অবশ্য রয়েছে। এটা কেন জানতে চাইলে সবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী সমকালকে বলেন, এর মূল কারণ- কে কীভাবে সাক্ষরতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করছে তার ওপর হার নির্ভর করে। আগে শুধু নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর (অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন) বলা হতো। বর্তমানে ইউনেস্কোর নির্ধারণ করা মান অনুসারে, যে ব্যক্তি একইসঙ্গে লিখতে, পড়তে ও বুঝতে পারে তাকেই সাক্ষর বলা হয়।

আর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপন কুমার ঘোষ বলেন, প্রতি বছর নতুন করে ২০ লাখ শিশু মোট জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এ কারণেও সাক্ষরতার প্রকৃত হার নিয়ে হেরফের হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২০০৯ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫২ শতাংশ। চার বছর পর ২০১৩ সালে ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তা ৭১ শতাংশ হয়। এর পর থেকেই এ হার বাড়ছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার সময় সাক্ষরতার হার ছিল ৬১ শতাংশ। পরে চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে সাক্ষরতার হার নিম্নগামী হয়ে পড়ে। ওই সাত বছরে ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে সাক্ষরতার হার দাঁড়ায় ৫২ শতাংশে। সমকাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়