সুশান্ত সাহা : সুইসাইড নোট লিখে রাজধানীর শাহজাহানপুর গুলবাগ এলাকার একটি বাসায় সুমাইয়া আক্তার মালিহা (১৪) নামের এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বুধবার সকালে মালিহার লেখার সূত্র ধরে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার এসআই মনিরুল ইসলাম ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শিক্ষিকার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার গুলবাগের বাসা থেকে পুলিশ মালিহার মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তার ময়নাতদন্ত হয়। মালিহার লেখার সূত্র ধরে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। মালিহা বংশাল কায়েতটুলি এলাকার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। পরিবার নিয়ে শাহজাহানপুর গুলবাগ পাওয়ার হাউজ এলাকার ২৭৬/বি নম্বর বাসার ৬ তলায় ভাড়া থাকেন মোহাম্মদ আলী। মালিহার বাবা মোহাম্মদ আলী একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেন। দুই বোনের মধ্যে মালিহা ছিল বড়।
মালিহার চাচাতো ভাই আলমগীর মিয়া জানান, মালিহা শহীদ ফারুক ইকবাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ১০/১২ দিন আগে তার পরীক্ষা শেষ হয়। মালিহার কাছ থেকেই তারা জানতে পেরেছেন, পরীক্ষার সময় স্কুলের ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষিকা রেমি আক্তার মালিহার পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেন এবং নম্বর কম দেন।
বিষয়টি নিয়ে মালিহা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরীক্ষায় তার ফল খারাপ হবে বলে ধারণা করতে থাকে। গত মঙ্গলবার রাতে মালিহার মা মুনমুন বেগম ছোট মেয়ে সামিহাকে নিয়ে পাশের ঘরে ছিলেন। মালিহা তার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে দেখে ফ্যানে ঝুলন্ত মৃতদেহ। পরে পুলিশ এসে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে।
মালিহার চাচাতো ভাই অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের শিক্ষিকা রিমি শুধু মালিহার সাথেই না, আরও অনেক ছাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তার কাছে কোচিং না করলে তিনি আচরণ খারাপ করেন, এমন অভিযোগও তাদের জানা রয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে নিয়ে এর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে মালিহা মৌখিকভাবে অভিযোগও করেছিল জানিয়ে রাসেল বলেন, এরপর থেকেই তিনি (শিক্ষিকা রিমি আক্তার) আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যান মালিহার ওপর। তারই প্রতিশোধ হিসেবে তিনি পরীক্ষার সময়ে মালিহার খাতা নিয়ে যান এবং কম নাম্বার দেন বলে ধারণা করছি আমরা।
শাজাহানপুর থানার এসআই মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ‘মঙ্গলবার রাতে খবর পেয়ে ওই বাসায় গেলে মেয়েটিকে ওড়না দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাই। ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচনায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সুইসাইড নোটে যা লেখা ছিল,
‘আমার Suicide করার কারণ একমাত্র রিমি মেডাম। সে শুধু আমাকে দেখে তার জিদ কমানোর জন্য। সে অযথা পরীক্ষায় আমার খাতা নিসে। আর পরীক্ষায় কম নাম্বার দিসে। তোমরা যদি পার তাহলে সে মেডামের মানসিক চিকিৎসা দাও। Mental Hospital এ পাঠাও। মেডাম আমারে অভিশাপ দিসে, তাই আমার ভালো result খারাপ হইছে।’
সুইসাইড নোটে এমনই লেখা ছিল। রুলকরা খাতার পাতায় নিজের আত্মহত্যার কারণ লিখে গেছে সুমাইয়া আক্তার মালিহা নামের ১৪ বছরের এক স্কুল শিক্ষার্থী।
আপনার মতামত লিখুন :