নূর মাজিদ : মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে উদীয়মান অর্থনীতির বৃহৎ পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ব্রিক্সের দশম সম্মেলন। অর্থনৈতিক মূল্যায়নের বিচারে যার গুরুত্ব অপরিসীম। ইতোমধ্যেই এই বৈঠকে অংশ নিতে স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে গেছেন ভøাদিমির পুতিন, শি জিনপিং, নরেন্দ্র মোদীর মতো বিশ্বনেতারা।
এবারের ব্রিক্স সম্মেলনের মূলমন্ত্র ‘বিক্স ইন আফ্রিকা’ বা আফ্রিকায় ব্রিক্স। এই মূলমন্ত্রকে পূরণ করার দৌড়ে ইতোমধ্যেই এগিয়ে রয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগমনের পূর্বে আফ্রিকার আরো তিনটি করে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদপূর্ণ দেশে সফরের মাধ্যমেই তারা তাদের ব্রিক্স সফর শুরু করেন। সুতরাং, নিশ্চিতভাবেই এবার আফ্রিকায় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তারের লক্ষ্য নিয়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্রিক্স সম্মেলন। তবে এর বাহিরেও এবারের সম্মেলনে ব্রিক্সভুক্ত পাঁচ দেশ রাশিয়া, চীন, ভারত,ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রয়েছে বেশ কিছু নিজস্ব ও অভিন্ন এজেন্ডা। তবে এই সম্মেলনে বর্তমানে অর্থনীতির বিচারে মধ্যমণি দুই দেশ ভারত ও চীন। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই এই সম্মেলনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে।
অন্যদিকে এই সম্মেলনের ভৌগলিক ও আর্থিক গুরুত্বও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, শুধুমাত্র ২০১৬ সাল নাগাদই ব্রিক্স দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ছিলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ। এবং পৃথিবীর মোট ভুমির ৩০ শতাংশই এই দেশগুলোর অধীনে। বিশ্ব অর্থনীতির অন্তত ২৩ শতাংশের সরসারি নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। ২০১৬ সালে যার আর্থিক মূল্য ছিলো ৪০ লাখ ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তবে, ভারত এবং চীন ব্রিক্সের সবচাইতে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতেও তাদের গুরুত্ব অপরিসীম। পশ্চিমা গণমাধ্যম তাই এবারের ব্রিক্স সম্মেলনে ভারত ও চীনের আলোচ্য ইস্যুকে যথেষ্ট আগ্রহের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।
ভারত চায় এবারের সম্মেলনে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো সন্ত্রাসবাদের ভারতীয় সংজ্ঞায় ঐক্যমত্য পোষণ করুক। এর পাশাপাশি তারা চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়েও ব্রিক্স সম্মেলনে আলোচনা করতে আগ্রহ পোষণ করেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে তারা নিশ্চিত হয়েছে এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায়নকে মূল বৈঠকে গুরুত্বের সঙ্গেই উপস্থাপন করবেন। একই সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো বিষয় সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে ভারতের ব্রিক্স আলোচনায়। এর পাশাপাশি তারা মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্য ইস্যুতে চাপের মুখে রাখতে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকেই পাশে রাখতে চায়।
চীনও এই ইস্যুতে একই অবস্থানে বিশ্বাসী। ভারতকে পাশে রাখতে ইতোমধ্যেই চীনের বিশাল ভোক্তা বাজারে ভারতীয় পণ্য প্রবেশ সহজ করার প্রক্রিয়া চালু করেছে চীন। এপ্রিলে উহানে শি-মোদি যৌথ সম্মেলনের পর এই প্রক্রিয়া আরো বেগবান হয়েছে।
তবে, বাণিজ্যের অপর অংশ অর্থাৎ শি জিনপিংয়ের চীন শাসিত অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা তৈরির অপর নাম দেশটির ‘বেল্ট এন্ড রোড’ প্রকল্প। আফ্রিকা মহাদেশ এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আফ্রিকায় চীনের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি এবং ব্রিক্স দেশগুলোর ব্যবসায় সম্প্রসারণও চীন এই বৈঠকে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করবে।
আফ্রিকা মহাদেশের নয়টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ এবার আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। এই নয়টি দেশকে এবারের ব্রিক্স সম্মেলনে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইবে ভারত এবং চীন। দ্য কনভারসেশন/ ফার্স্টপোস্ট
আপনার মতামত লিখুন :