শিমুল মাহমুদ : ‘সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে’ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বইলেও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী সেই অবস্থান থেকে সরে আসলে। পাল্টাতে থাকে আন্দোলনের দৃশ্যপট। আন্দোলনকারী নেতাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন, জামাত-শিবিরের অংশগ্রহণ, উপাচার্যের বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর, রাজনৈতিক দলের অর্থের যোগান সহ নানা অভিযোগ যুক্ত হয় তাদের নামে। তবে এই অভিযোগের ভিন্ন মত রয়েছে বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের। তারা বলছেন, দরকার সরকার আন্দোলন দমিয়ে রাখতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
মুলত গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ধারাবাহিক এই আন্দোলন শুরু হলেও ৩ মাসের মধ্যেই কিছুটা হলেও ইতিটানতে হচ্ছে আন্দোলন কারীদের। অনেকে পুলিশী তৎপরতায় গা ঢাকা দিলেও হামলায় আহতদের চিকিৎসা সেবা নিতে পড়তে হচ্ছে অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে।
গতকাল মঙ্গলবার দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নূর জানান, শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাকে একে একে পাঁচটি হাসপাতাল পরিবর্তন করতে হয়েছে। এক হাসপাতালে বেশিদিন অবস্থান করা যাচ্ছে না। ফলে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। বর্তমানে যে হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেটাও তার জন্য নিরাপদ নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভয় পায়। চিকিৎসার স্বার্থে নিজের নামটা পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, আমাকে রাখলে তাদের হাসপাতালের সমস্যা হবে। যে কারণে রিলিজ দিয়ে দেয়। ভর্তি তারা ঠিকই করে কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন এলে তারা আর রাখতে চায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, যে উপর মহলের চাপ আছে যেকোনো সময় আপনাকে হাসপাতাল ছাড়তে হতে পারে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। পুরো খরচই পরিবারকে বহন করতে হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক ও ডিপার্টমেন্ট থেকে সামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। ডাক্তার জানিয়েছেন পুরোপুরি সেরে উঠতে আরো সময় লাগবে। হাত, কোমর, ঘাড় সারাক্ষণ ব্যথা করে। ডানে বায়ে কাত হয়ে শুতে পারি না। চিকিৎসার খরচও দিনকে দিন বেড়েই চলছে।
৩০ শে জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন নূর। এদিকে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হাতুড়ির পিটুনিতে আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।
গত ৯ই জুলাই তরিকুলের পায়ে প্রথম অস্ত্রোপচার করার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও কয়েকদিন পরেই অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। ইনফেকশন হয় তার ডান পায়ে। যেখানে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তখন থেকেই বাড়তে থাকে পায়ের ব্যথা।
গত রোববার তার পায়ের দ্বিতীয় সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তরিকুলের এক সহপাঠী। তিনি বলেন, তরিকুল বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সঙ্গে রয়েছেন তার বড় ভাই তৌহিদুল। তবে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে নিরাপত্তার স্বার্থে তা তরিকুলের পরিবার ও সহপাঠীরা জানাতে অপারগ প্রকাশ করছেন।
তরিকুলের বন্ধুরা জানান, প্রথম অপারেশনের পর তরিকুলের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু তার পায়ে তীব্র ব্যথা কমছিল না। মেরুদ-, কোমর ও পায়ের জন্য থেরাপি দেয়া হচ্ছিল। কিছু দিন পরেই ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়।
পরে ডাক্তার জানায় যে, তরিকুলের ডান পায়ে ইনফেকশন হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে তরিকুলের শারীরিক অবস্থা ততই অবনতি হচ্ছে। এখনো সোজা হয়ে বসতে পারছে না সে। কারোর সাহায্য ছাড়া সে ঘুরে বসতে পারে না। হাত-পাসহ পুরো শরীর ব্যথায় কাতরাচ্ছে তরিকুল। চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ টাকার দরকার সেই টাকা তরিকুলের কৃষক পিতার পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দানের টাকায় চিকিৎসা চলছে। তবে হাসপাতালে অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটা কথা বললে সবাই আশ্বস্ত হয়৷ এখন আদালতের রায়ই যদি বাধা হয়, তাহলে আদালতে আপিল করে সামাধান করতে হবে৷ সবাই বোঝে কোটার একটা সংস্কার হওয়া প্রয়োজন৷ এটা সবাই স্বীকারও করেন৷ তাহলে যেভাবে করলে ভালো হয়, সবাই মিলেই সেটা করতে হবে৷ এটা নিয়ে অযথা ঝামেলা করার দরকার কী? দেখেন, যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, এখন তাদেরই অভিযুক্ত করা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়৷ শিক্ষার্থীদের কথা তো ভাবতে হবে৷
আপনার মতামত লিখুন :