ইত্তেফাক রিপোর্ট: সৌদি রিয়াল দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্য মো. আশরাফ শেখ (৬০) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত সোমবার রাতে ঢাকার আশুলিয়ার আমতলার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম।
মঙ্গলবার পিবিআই জানায়, বরগুনার আমতলীর পূর্বচিলা গ্রামের বাসিন্দা মো. সহিদুল ইসলাম (৫০) নামের একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের ওই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগে সহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার ৬০/১ নম্বর বাড়িতে থাকেন। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার ফুটপাতে বাচ্চাদের জামা কাপড় বিক্রি করেন। চলতি বছরের ১৯ মার্চ বিকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিসের গেটের সামনে ফুটপাতে এসে আশরাফ শেখ নামের একজন তার কাছে বলে যে, আশরাফ ঢাকায় নতুন এসেছে এবং তার কাছে ১০০ সৌদি রিয়ালের একটি নোট আছে। সে ওই রিয়াল ভাঙিয়ে টাকা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ এবং গলায় গামছা ও লুঙ্গি পরিহিত অসহায় অবস্থা দেখে মায়া হলে তিনি আশরাফের অনুরোধে রিয়াল ভাঙিয়ে টাকা করে রাখার জন্য রিয়ালের নোটটি রেখে দেন। পরদিন ২০ মার্চ রিয়ালটি সহিদুল ১০ নম্বর গোলচত্বরের একটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ভাঙিয়ে ২ হাজার ২০০ টাকা পান। পরে সহিদুল ফোনে আশরাফকে ডেকে তাকে টাকাগুলো বুঝিয়ে দেন। এরপর ওইদিন রাতে আশরাফ ফোনে সহিদুলকে জানান, তার এলাকার এক ভাইয়ের কাছে ১০০ সৌদি রিয়ালের ১ হাজার ১৮৪ টি নোট আছে এবং রিয়ালগুলো ভাঙানোর বিনিময়ে তাদের দুইজনেরই লাভ হবে বলে প্রস্তাব দেয়। রাজি হওয়ায় ২১ মার্চ আশরাফ তার কথিত এলাকার ভাই খলিল মৃধাকে (৫০) সহিদুলের কাছে নিয়ে যায়। তখন খলিল মৃধা গামছা দিয়ে বাধা একটি প্যাকেট দেখিয়ে তার ভিতর সৌদি রিয়াল আছে জানায় এবং কৌশলে প্যাকেটের ভিতর থেকে ১০০ সৌদি রিয়ালের একটি নোট বের করে ভিকটিম সহিদুলকে দেখায়। পরে ভিকটিম সহিদুল অতিরিক্ত লাভের আশায় সমিতি থেকে লোন করে তাত্ক্ষণিক ৩ লাখ টাকা নিয়ে ওইদিনই আশরাফ ও খলিলকে দেন। টাকা দেওয়ার পর আশরাফ ও তার সহযোগী খলিল রিয়ালের প্যাকেটটি দিয়ে দেয় সহিদুলকে। কিছুক্ষণ পর কৌতুহল বশতঃ সহিদুল প্যাকেট খুলে দেখতে পান, গামছা দিয়ে বাধা প্যাকেটের ভিতর বিভিন্ন পেপার দ্বারা একটি সাবান মোড়ানো।
পিবিআই জানায়, আশরাফ ছাড়াও চক্রটি কদমতলী এলাকার বাসিন্দা জনৈক মো. কামরুজ্জামান সরকারকে (৪৬) একই কৌশলে প্রতারিত করে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। একই চক্র শরীয়তপুরের জাজিরা থানা এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক (অবঃ) জনৈক মির্জা শামছুল আহম্মেদ এবং কুমিল্লার বুরিচং থানা এলাকার বাসিন্দা মাদ্রাসার শিক্ষক ও হোমিও ডা. জনৈক মো. আবু তাহেরের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
অভিযোগ পাওয়ার পর পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশক্রমে প্রতারক চক্রের সদস্যদের শনাক্তসহ গ্রেফতারের জন্য তদন্ত শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি টিম আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় সংলগ্ন আমতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্য আশরাফ শেখকে গ্রেফতার করে।
আপনার মতামত লিখুন :