ড. আসিফ নজরুল : তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তিনি অসামান্য ও অদ্বিতীয় হয়েছিলেন তাঁর সৃষ্টি আর সৃজনশীলতার কারণে। গত শতকের আশি আর নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট আর স্যাটেলাইট টিভি ছিল না। হয়তো এ কারণেই আমরা, সে সময়ের তরুণেরা বড় হয়েছি নির্বিচারে গল্প-উপন্যাস পড়ে পড়ে। আমরা নীহাররঞ্জন-ফাল্গুনী পড়তাম, তারাশঙ্কর-বিভূতিভূষণও পড়তাম, পড়তাম রশীদ করিম আর মাহমুদুল হক। পুশকিন, গোর্কি, চেখভ, তলস্তয় না পড়ার কথাও তখন চিন্তা করা যেত না। বিচিত্রা, সচিত্র সন্ধানী আর রোববার ঈদসংখ্যা খুঁজে পড়তাম প্রত্যেক লেখকের লেখা। তাঁর উপন্যাস ছিল সবকিছুর মধ্যে অনন্য। মাত্র ষাট-সত্তর পাতার ছোট্ট একটা গল্পে মানুষকে বিভিন্নভাবে অভিভূত করার যে ক্ষমতা তাঁর ছিল, তা আদতেই অতুলনীয়। সামান্য বর্ণনায় চরিত্রের গভীরতা আর দৃশ্যকল্প সৃষ্টিতে তাঁর পারঙ্গমতাও ছিল অনন্য। লেখক হিসেবে তিনি একই সঙ্গে সহজাত, সহজবোধ্য ও শক্তিশালী ছিলেন। ফলে সমাজের সব স্তরের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পেরেছিল তাঁর গল্প-উপন্যাস। তাঁর লেখা সুনীল আর শীর্ষেন্দুকে হটিয়ে দিয়েছিল, তাঁর নাটকের ছোট সংলাপ ‘তুই রাজাকার’ সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জন্ম ঘটিয়েছিল, তাঁর প্রতি মানুষের আগ্রহ ছাপিয়ে গিয়েছিল দেশি-বিদেশি সিনেমা-তারকাদেরও। সব অর্থেই তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র মেগাস্টার!
পরিচিতি: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, / সম্পাদনা: ফাহিম আহম্মেদ বিজয়
আপনার মতামত লিখুন :