শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ জুলাই, ২০১৮, ০৮:২৬ সকাল
আপডেট : ২৫ জুলাই, ২০১৮, ০৮:২৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শহর নয় যেন নদী

ডেস্ক রিপোর্ট:  টানা বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে থই থই করছে চট্টগ্রাম মহানগর। হাঁটু থেকে গলা সমান পানি জমেছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। এতে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে এই বন্দর নগরীর মানুষের জনজীবন। কোনো কোনো স্থানে সড়কে নৌকা নিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে।

খানাখন্দে পড়ে কোনো কোনো স্থানে যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ডুবে রয়েছে। ডুবেছে নগরীর অধিকাংশ ঘর, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান।
স্কুল-কলেজ ডুবে যাওয়ায় হয়নি শ্রেণির পাঠদান। দিনভর ভোগান্তিতে পড়েছে ছাত্র-ছাত্রী, অফিসগামী চাকরিজীবী ও পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে চট্টগ্রামের সর্বত্র শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সকাল ১১টা পর্যন্ত টানা এই বর্ষণে ডুবে যায় বন্দরনগরীর অলিগলি ও সড়কপথ। এ সময় কাজের টানে ঘর থেকে বের হতেই দুর্ভোগে পড়েন পেশাজীবী মানুষ।

কারণ এ সময়ের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। যা মাড়িয়ে চলতে নাভিশ্বাস উঠে শ্রমজীবী, পেশাজীবী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর। কিন্তু বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত থেমে থেমে আরো ভারি বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর সর্বত্র হাঁটু থেকে গলা পর্যন্ত পানি জমে যায়। এ সময় বঙ্গোপসাগরেও প্রবল জোয়ার সৃষ্টি হয়। জোয়ারের পানি উল্টো নগরীর দিকে প্রবেশের কারণে চট্টগ্রাম দৃশ্যত বহমান নদীতে পরিণত হয় বলে জানান নগরবাসী।

সরজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২টার পর থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান সড়ক কালুরঘাট-শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়কের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, আগ্রাবাদ, ডবলমুরিং, ইপিজেড, এলাকার কোথাও কোমর, কোথাও গলা সমান পানি জমে।

এ ছাড়া বহদ্দারহাট থেকে শাহআমানত সেতু সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা গলা সমান পানিতে ডুবে গেছে। জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, মেহেদীবাগ সড়কেও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
এসব এলাকার আশপাশে রয়েছে নগরীর ১৩টি সরকারি ও সিটি করপোরেশনের ৪৬টি এবং দেড় শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চার শতাধিক কেজি স্কুল ও কলেজ।

এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর অধিকাংশই পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়নি পাঠদান। বরং যাতায়াতে নানা দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিশেষ করে ২টার দিকে ছুটির পর সড়কে যানবাহন না পেয়ে পানি মাড়িয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফিরতে হয়েছে বাসায়।
এ ছাড়া নগরীর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, নাসিরাবাদ, পাহাড়তলি, সদরঘাট, ফিরিঙ্গিবাজার, চকবাজার, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হালিশহরে পানি থই থই করছে। যেখানে পেশাজীবী শ্রমজীবী মানুষ সাঁতরিয়ে পানি মাড়িয়ে বা নৌকায় করে চলাচল করতে দেখা গেছে।

বিভিন্ন সড়কে চলাচল করতে গিয়ে একাধিক যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস, মাইক্রো, হিউম্যান হলার খানাখন্দে পড়ে মাথা সমান পানিতে ডুবে থাকতে দেখা গেছে। এ সুযোগে কোথাও রিকশা চলাচল করলেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি।

নগরীর চকবাজার মোড়ে গলা সমান পানি মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র দালান আহমেদ নাবিল জানান, স্কুলের কক্ষে বই রাখার বেঞ্চ সমান পানি জমেছে। মাঠ সাঁতরিয়ে এসেছি। এখন সড়কেও গাড়ি নেই পানির মধ্যে হেঁটে হেঁটে বাসায় যেতে হচ্ছে।

নাসিরাবাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারানা জাহান বলেন, স্কুলে হাঁটু পানিতে বসেছিলাম। ক্লাস তেমন হয়নি। ছুটির পর রিকশা পেলেও ৫০০ টাকা ভাড়া চায়। অথচ ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাই আমরা দুজন। তাই পানি মাড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছি। তবে সড়কের গর্তে পড়ে হাবুডুব খাচ্ছি।

জাফর নামে এক রিকশা চালক বলেন, পানির ভেতর গর্তের ভয়ে রিকশা চালাতে ভয় লাগছে। তাও বেশি টাকা দিলে যাচ্ছি। নগরীর ৮নং রোডের বাস চালক সাহেদ বলেন, সড়কে তো বাসও ডুবে যাচ্ছে। তাও আবার খানাখন্দে পড়ে বাস আটকে যাচ্ছে। তাই যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মেঘনাদ তঞ্চংগ্যা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হলেও তা রেকর্ডের হিসাব পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পড়বে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরেও প্রবল জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অতি বর্ষণের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মানবজমিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়