জাফরুল অালম : বহুজাতিক যুক্তরাষ্টভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মীথক্লাইন (জিএসকে) এখন বন্ধের পায়তারার অভিযোগে ঝুলে অাছে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম। গত দুইমাস কারখানার শ্রমিকরা বেকার বসে অাছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত বেতন পরিশোধ করলেও কোম্পানি বন্ধ হবার পায়তারা তাদেরকে ধুকে মারছে।
১৯৬৩ সাথে প্রতিষ্ঠিত চট্রগ্রামের ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় প্রতিষ্ঠিত অান্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর রাজস্ব বাবদ শত শত কোটি টাকা জাতীয় রাজস্বখাতে জমা করে অাসছে। এছাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানে সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যা থেকে সরকারও প্রচুর লাভ্যাংশ পেয়ে থাকে।
কিন্তু কোন কারণ বা কৈফিয়ত ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের জুন থেকে তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এমনকি ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল নেই তাদের ভান্ডারে। সেই সাথে অধিক নিরাপত্তার অজুহাতে সিসি ক্যামেরা বাড়িয়েছে, সাথে নিরাপত্তারক্ষীও বাড়ানো হয়েছে।
এসবের জন্য তারা সদ্য বিদায়ি পাকিস্তানি পরিচালক (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায়) ইরাম সাকিব ও ব্যবস্থাপনা পরিচারককে দায়ী করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে উনাদের হাত রয়েছে। এমনকি চলতি মাসে নিযুক্ত নকিবুর রহমানসহ বেশকিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অাছেন যাদেরকে দ্বিগুণেরও বেশি বেতন বাড়িয়েছেন জিএসকে কর্তৃপক্ষ। অথচ কারখানায় নিযুক্ত প্রায় ২০০ শ অধিক শ্রমিকের ভাগ্যে কী হবে তা নিয়ে তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করছে।
এ ব্যাপারে উক্ত কারখানার শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, কোম্পানি রিভিউ হচ্ছে। অার তাই তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, কোম্পানি তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান যে তারা বন্ধ করতে পায়তারা করছে, সে তৎপরতা অাড়াল করার জন্যই বছর দুই অাগে কারখানার অাধুনিকায়ন ও কমপ্লেক্স এর নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। ব্যবসা রিভিউয়ের নামে অামাদেরকে ধোকা দিয়েছে। তাছাড়া গত তিনমাসে যেসব পণ্য উৎপাদন করা হয়েছে, তা বাজারজাতও করা হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে, তারা গোপনে কোম্পানি বন্ধের পায়তারা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অারোও বলেন, এখানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কাজ করছে। এছাড়া ৫০ এর অধিক নারী শ্রমিকও রয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে এসব পরিবারগুলো চরম অার্থিক সংকটে পড়বে। এমনকি তাদের সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যাবে।
বক্তারা জানান, বিগত ২০১৩ থেকে গত বছরের ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার কোটি টাকা জাতীয় রাজস্বখাতে জমা হয়েছে। অার মুনাফা অর্জন করেছে ৩৫১ কোটি ৭৯ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা। কোম্পানিটা জীবন রক্ষাকারী গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রস্তুতের মাধ্যমে অামাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে অাসছে। এমন লাভজনক কোম্পানিকে কে বা কারা অপ্রচার করে সেটা বন্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদেরকে দ্রুত অাইনের অাওতায় অানতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অাজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব ভিঅাইপি লাউঞ্জে 'গ্ল্যাক্সোস্মীথক্লাইন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন অায়োজিত' সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি মো. ইলিয়াস এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ অাজম। অন্যদের মধ্যে অারো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা এড. অাব্দুল অালাল, সহ-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, কল্যাণ সম্পাদক মো. হাসান প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :