শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ

প্রকাশিত : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ০৯:০১ সকাল
আপডেট : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ০৯:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সংকট আর দুর্নীতির নাম গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল

এস এম সাব্বির, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রীর নিজের জেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় সংকট আর চরম দুর্নীতি চলছে।স্বাস্থ্যসেবার চরম বিপর্যয়ের কারণে গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্যবিভাগকে ‘দুর্নীতির খনি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এলাকাবাসী।চিকিৎসক সংকট, অনিয়ম, দুর্নীতি, দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।

দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগী গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এসে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। এতে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর দিকে ঝুঁকছেন রোগীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান, স্বাস্থ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির নিজ জেলা হওয়ার পরও এসব দেখার কেউ নেই।

অপারেশন থিয়েটার: গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আন্তঃবিভাগের কার্যক্রম চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা আসেন না। কেউ অনিচ্ছা সত্ত্বে যোগদান করলেও সপ্তাহে ২/১ দিন আসেন।

বাকি সময় তারা ঢাকা অথবা বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কাজ করেন। এনেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকার অজুহাতে অত্যাধুনিক একাধিক অপারেশন থিয়েটর থাকার পরও কোনো মেজর অপারেশন হয় না এ হাসপাতালটিতে।

এনেসথেসিয়া ব্যতীত ছোট-খাটো কিছু অপারেশন হয়। ফলে, সার্জারি, গাইনি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সিট ফাঁকা পড়ে থাকে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গর্ভবতী ও প্রসূতি বিভাগ: হাসপাতালটির সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিভাগ হচ্ছে, গর্ভবতী ও প্রসূতি বিভাগ। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার পরও সিজারিয়ান অপারেশন কম হয়। শহরের যে কোনো একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের এই হাসপাতাল থেকে বেশি সিজারিয়ান অপারেশন হয়।

এ বিভাগে ইউনিসেফ পরিচালিত এমএনসিএস প্রজেক্টের আওতায় অসহায় ও দুঃস্থ গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মা এবং শিশুদের বিনা পয়সায় সেবা দেওয়া হয়। তাদের নিজস্ব ২ জন চিকিৎসক ও একাধিক নার্স রয়েছেন। প্রজেক্টের আওতায় জেলার ৪টি উপজেলা গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুরে তাদের কার্যক্রম রয়েছে।

ওই সব উপজেলার প্রতি ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের এক একজন নারী কর্মী রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে গর্ভবতী নারীদের এএনসি ও নিরাপদ প্রসবের জন্য সরকারি নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রিফারেল সিস্টেম রয়েছে। এত কিছুসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও একটি সরকারি ২৫০ শয্যার হাসপাতালের গাইনি বিভাগের এ করুণ চিত্র সবাইকে অবাক করে।

এছাড়া এখানে ‘শিশুবান্ধব’ হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ‘নারীবান্ধব’ হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হয় না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইনি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত একজন নার্স।

তিনি জানান, হাসপাতালটিতে আগত কিশোর-কিশোরী ও সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালিত হয় না।
তবে, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মাধ্যমে প্রতিদিন (হাসপাতাল খোলা থাকার দিন) শিশু ও নারীদের ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

হাসপাতালটিতে একটি পৃথক ডায়রিয়া ওয়ার্ড থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তাই, তাদের ডায়রিয়া রোগীর চাপ বাড়লে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

এসেনথেসিয়া কনসালট্যান্টের সংকট: গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এক ডাক্টার জানান, এসেনথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় খুব মেজর অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে মেজর ও মাইনর অপারেশন হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এখানে কনসালট্যান্টরা আসতে চান না। কারণ, এখানে তাদের প্র্যাকটিস নেই। এছাড়া প্র্যাকটিসের পরিবেশও ভালো না। তাই, অনেকে আসার পরে আবার চলে যান।

প্যাথলজি বিভাগ: গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে অত্যাধুনিক প্যাথলজি থাকলেও রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান না বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে সম্পূর্ণ হাতের স্পর্শ ছাড়া প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা হয়ে থাকে। মেশিনের সাহায্যে পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এক কথায় নির্ভুল পরীক্ষা-নিরীক্ষার একমাত্র হাসপাতাল প্যাথলজিতে হয়ে থাকে বলে দাবি করেন ল্যাব টেনিশিয়ান। কিন্তু এই বিভাগের গত কয়েক মাসের আয় দেখা যায় খুবই নগন্য।

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে ২/৩ জন করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের দালাল থাকেন। তারা সংশি¬ষ্ট চিকিৎসকের সহায়তায় রোগীদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে নিয়ে যান। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা মোটা অংকের কমিশন পান।

ডায়াগনস্টিক বিভাগ: প্রায় একই অবস্থা রেডিওলজি বিভাগের। এ বিভাগে একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও একজন রেডিওলজিস্ট রয়েছেন। তারপরও গত আগস্ট মাসে আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ও এক্সরে বিভাগ থেকে হাতে গোনা কয়েকটা টাকা আয় হয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত কম। শহরের অনেক ছোট একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মাসে এরও চেয়ে বেশি আয় হয়।

এক্সরে বিভাগ: গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এক্সরে টেকনিশিয়ান সূত্রে জানা যায়, আধুনিক সব মেশিন থাকলেও দক্ষতার অভাবে তা ব্যবহার করতে পারচ্ছেন না।এছাড়া বহির্বিভাগের রোগী এখানে কম আসেন। তারা দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলে যান।
এতে ওই ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসক উভয় লাভবান হন। তাই, সরকারি হাসপাতালগুলো দালাল মুক্ত করতে পারলে এবং বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা আন্তরিক হলে এ বিভাগ থেকে কাঙ্খিত আয় করা সম্ভব হবে।

ইএনটি বিভাগ: হাসপাতালে ইএনটি বিভাগে একজন নিয়মিত সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও জুনিয়র কনসালট্যান্ট, কনসালট্যান্ট (এনেসথেসিয়া) না থাকা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকার অজুহাতে নাক-কান-গলার মেজর বা মাইনর কোনো অপারেশনই হয় না। এ বিভাগ থেকে রোগীরা শুধুমাত্র বহির্বিভাগের সুযোগ-সুবিধা পান। দন্ত বিভাগেরও একই অবস্থা।

সমাজ সেবা অধিদপ্তর: গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে সমাজ সেবার একটি ইউনিট চালু আছে। এখান থেকে হতদরিদ্র রোগীকে বিনা পয়সায় ওষুধ কিনে দেওয়া হয়।হাসাপাতালের সমাজ সেবা দায়িত্বরত এক অফিসর জানান, সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে অনুদান বৃদ্ধি করলে আরও বেশি সংখ্যক দরিদ্র রোগীকে সহযোগিতা করা সম্ভব।

জরুরি বিভাগ: হাসপাতালে নামেমাত্র একটি জরুরি বিভাগ রয়েছে।এ বিভাগে মাত্র একজন চিকিৎসক কর্মরত থাকেন। ইউনিয়ন এ বিভাগের মাধ্যমে শুধুমাত্র রোগীদের ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। মুমূর্ষু রোগী আসলে তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে মুমূর্ষু রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কোনো আলাদা সরঞ্জাম নেই।

জরুরি বিভাগে ডেপুটেশন সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগকে আধুনিক করতে পারলে রোগীরা বেশি উপকৃত হবেন। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারকে এখনই ভাবতে হবে।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী জানান, এই হাসপাতালে তারা সঠিক চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর পরিবেশও খুব খারাপ। রোগীদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবারহকৃত খাবারের মান ভাল না। এমনকি ঠিকমত পানি ও বিদ্যুতও থাকে না গোপালগঞ্জের প্রধান এই হাসপাতালটিতে।

শুধু তাই নয় এই হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনে প্রবেশ করলেই দুগন্ধে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাবে। হাসপাতালে রোগীদের জন্য নির্ধারিত বাথরুমের চিত্রও করুন বলে জানান কয়েকজন রোগী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়