দীপক চৌধুরী : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছে বিশ্বের বহুদেশ, বহু সংস্থা। তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থার ডিজি উইলিয়াম ল্যাসি সুইং, এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, বিশ্বব্যংক, জাতিসংঘ, ওআইসি, নোবেল পাওয়া কয়েকজন বিখ্যাত নারীর প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এতো বড় ও সাহসী কাজটির বিষয়ে প্রশংসার বদলে বিএনপি মুখে কুলুপ দিয়েছে। দলটির নেতাদের একমাত্র রুটিনকাজ আওয়ামী লীগকে সকাল-বিকাল গালি দেওয়া। এর কারণ কী? আমাদের রাজনীতিতে একমাত্র ইস্যু কী ক্ষমতা? শুধু ক্ষমতা চাই। সেখানে বৈধ-অবৈধ বিচার করতে চাই না। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজনীতি ও বিএনপি নিয়ে চমৎকার কিছু কথা বলেছেন। তাঁর ভাষ্য, টেলিভিশনে বিভিন্ন ‘টক-শো’ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে ভাষায় কথা বলা হয়, তারপরও টক-শো থেকে ফেরার সময় কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। তবুও বিএনপি বলে দেশে গণতন্ত্র নেই। এটাই বাস্তবতা। রাজনীতির মতো কঠিন বিষয়কে আলিঙ্গন করতে চাইলে জেল-পুলিশকে ‘ভয়’ করা চলবে না। ‘আপনি আপনি’ ক্ষমতা কেউ পায় না। রাজনীতির লড়াইয়ে বহুমুখী প্রতিরোধ থাকে। সেখানেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে জগতকে জানান দিতে হয়। ‘মিউ মিউ’ করে রাজনীতি করার দিন শেষ, ক্যু করে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখার দিন বা সেই সুযোগ আর নেই। পাঁচ বছর পর নওয়াজ শরিফ তার দেশে ফিরেছেন। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে লন্ডন থেকে ফিরে শুধু কারাজীবনই নয়, তাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চাওয়া সেনাশক্তিকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নির্বাসনে না থেকে জেলজীবন বেছে নেওয়ার মাধ্যমে তারেক রহমান তার দল বিএনপিকে নতুন জীবনী শক্তি দিতে পারতেন। আমাদের তো মনে হচ্ছে নওয়াজ শরিফের সামনে নানান সুযোগ সৃষ্টি হতে চলেছে। তার সাহসী প্রত্যাবর্তন আসন্ন নির্বাচনের জন্যও ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে। দেশে ফিরে কারাবরণ করার মধ্য দিয়ে তিনি তার দেশের মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আনুগত্য না মেনে বুক টান করে দাঁড়ানোর মতো হিম্মত একমাত্র তারই আছে। ‘ফৌজি শাসনের দেশ’ পাকিস্তানের ইতিহাস এতোই অগণতান্ত্রিক যে, সাধারণ মানুষের ধারণা, রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে অন্যায়ভাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নওয়াজকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। ব্যাপকভাবে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচিত সরকারের গায়ে দুর্নীতির কালিমা লেপন করে সেনাবাহিনী শাসনক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। অর্থাৎ এমন দেশেও নওয়াজ চ্যালেঞ্জ করে ফিরেছেন, নেমেছেন আদালত ও রাজনীতির লড়াইয়ে। তিনি যেদিন দেশে এলেন সেইদিনই বেলুচিস্তানে দুটি জনসমাবেশে ১৪০ জনের প্রাণ গেলো। জঙ্গিরা কেমন তরো রক্তের হোলিখেলা চালাচ্ছে সেই জনপদে এটা বিশ^বাসীর জানা। সেই জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের চিত্র আমাদের চোখের সামনেই। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা বিশে^র অজানা নয়। বিশেষ করে গুলশানের হলি আর্টিজানের পর। আমরা গণতন্ত্রের জন্য ‘মায়াকান্না’ করি, কিন্তু নিজেরা মোটেই গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ পছন্দ করি না বা করতে চাই না। সবাই জানেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ হলো নির্বাচন। সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকমাস সামনে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে হররোজ ‘টকশো’তে নানান শঙ্কা আশঙ্কার কথা আমরা শুনছি। এরপরও আমরা জানি, আগামী নির্বাচনে বড় দল বিএনপি অংশগ্রহণ করবেই। এটি শুধু ধারণা নয়, বাস্তবতা।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :