আসাদুজ্জামান সম্রাট : আপাতত নির্বাচনকালীন সরকারের অংশ হতে চাইছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। সে লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন দাতা দেশ, সংস্থা ও প্রেসার গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারে ঢোকার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। তবে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া পায়নি দলটি।
২০১৩ সালের শেষের দিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও তারা ওই সরকারের অংশ হয়নি। জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের আনুপাতিকহারে নির্বাচনকালীন সরকারেও তারা অংশ হতে পারতো। চলমান দশম জাতীয় সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধিত¦ নেই। ফলে বিএনপিকে এ সরকারে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই। তারপরেও বিএনপি চাইছে নির্বাচনকালীন সরকারের অংশ হতে।
সরকারর পক্ষ থেকে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়ার পরেও বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারে ঢোকার বিষয়ে হাল ছাড়ছে না। তারা দাতা দেশ ও প্রেসার গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে এ যাত্রায় সফল হতে চায়। বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারে একটি মন্ত্রণালয় পেলেও সেটা বিএনপির জন্য নৈতিক বিজয় হবে। আমরা সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ওই নেতার আশা, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে দাতা দেশ ও সংস্থার চাপের কাছে সরকারকে মাথানত করতেই হবে। ফলে বিএনপি এ সরকারের অংশ হবে।
আরো পড়ুন: যে কারণে হাসনাত করিমের নাম চার্জশিট থেকে বাদ
এতোদিন বিএনপির নেতারা গোপনে গোপনে চেষ্টা করেও সরকারের মনগলাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো দাতাদেশ বা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলানো সম্ভব হয়নি। ফলে বিএনপিও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। গত শনিবার বিএনপি ঘরানার দুই বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কথা বলেছেন।
ঢাবির সাবেক উপচার্য্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনের যাওয়ার জন্য বিএনপি প্রস্তুত। কিন্তু সেই নির্বাচনের আগে বিএনপির নেত্রীকে মুক্তি দিতে হতে, নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নির্বাচনকালীন সরকারে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দিতে হবে। সবদল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যদি এরকম একটা পরিবেশ হয় তাহলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে।
বিএনপির নেতারা অবশ্য তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও আরও দফা শর্ত দিয়েছে। তারা চাইছে নির্বাচনকালীন সরকারে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ তিন থেকে পাঁচ মন্ত্রণালয়, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন, বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অত্যন্ত পরিস্কার ভাষায় বলেছি আমাদের নেত্রীকে অবিলন্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার প্রধান শর্ত। এখানে নো কম্প্রোমাইজ।
আরো পড়ুন: তারেক জিয়া কেনো দেশে আসছেন না?
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সকলেই চাচ্ছেন। খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা সে কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে খালেদা জিয়াকে নিয়েই আগামী নির্বাচন হতে হবে। না হলে সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচন হবে ।
তবে বিএনপি নেতাদের এসব দাবিতে পাত্তা দিচ্ছেনা আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। বিএনপির সঙ্গে আলোচনারও আর কোনো সুযোগ নাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো শর্তযুক্ত নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে স্বাভাবিক নিয়ম মেনে এবং সংবিধানের আলোকে। খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না বিএনপির এই ঘোষণায় চক্রান্ত, নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের গন্ধ রয়েছে।
আরো পড়ুন: কোনো রকম হামলার সমর্থন আমরা করি না : হাছান মাহমুদ
আরো পড়ুন: ইমরান এইচ সরকারকে বিদেশ যাওয়ায় বাধা না দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
আপনার মতামত লিখুন :