শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ২২ জুলাই, ২০১৮, ০৩:৪২ রাত
আপডেট : ২২ জুলাই, ২০১৮, ০৩:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চেতনার উন্মেষ না হলে জাতীয় দাসত্ব ঘুচবে না

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা, অনেক সেমিনার-সিম্পেজিয়াম, অনেক যুগান্তকারী রায় ও কথপোকথন চলেছে, কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জনগণের মনে নিশ্চিত হয়েছে কি? সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৯৪(৪) এ উল্লেখ রয়েছে যে, ‘এই সংবিধানের বিধানবলী সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচার কার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন’ অধিকন্তু সংবিধানের ১১৬ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘এই সংবিধানের বিধানবলী সাপেক্ষে বিচার কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন’। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১৮(৪) এ বলা হয়েছে যে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ৩(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘এই কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হইবে।’ এরূপভাবে প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব পালনে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ দেওয়া সত্ত্বেও জনগণের নিকট কতটুকু বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করেছে?

‘পরাধীন সুখের জীবনের চেয়ে কষ্ঠের স্বাধীন জীবন অনেক মধুর’ এ কথাটি ‘বাবুই পাখী’ কবিতার মর্মার্থ থেকে পাওয়া যায়। অন্যদিকে আইন করে কি প্রকৃত স্বাধীন হওয়া যায়? আইনের প্রতিফলন কি সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারছে? বাংলাদেশে অনেক স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা আইনগতভাবে কাগজে কলমে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন। রাষ্ট্র একটি সরকার দ্বারা পরিচালিত হলেও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবিধানিকভাবে কেন স্বাধীনতা দেওয়া হলো? এর মূল কারণ সরকার তথা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের নিপীড়িত নির্যাতন থেকে জনগণকে রক্ষা করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ‘রক্ষা কবজ’ হিসেবে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অধিকন্তু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ন্যায়পাল’ নামে একটি সাংবিধানিক পদ সৃষ্টির সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও সরকার ‘পদ’টি সৃষ্টি না করে স্বেচ্ছাচারিতার বিপীরতে জবাবদিহিতার মুখ বন্ধ রাখার জন্য একটি অসাংবিধানিক পন্থা গ্রহণ করে ‘ন্যায়পাল’ পদে কাউকে নিয়োগ দেয়নি। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘(১) সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ-প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করিতে পারিবেন, (২) সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালকে কোন মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যেকোনো কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ যেরূপ ক্ষমতা কিংবা যেরূপ দায়িত্ব প্রদান করিবেন, ন্যায়পাল সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবেন এবং (৩) ন্যায়পাল তাঁহার দায়িত্বপালন সম্পর্কে বাৎসরিক রিপোর্ট প্রণয়ন করিবেন এবং অনুরূপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত হইবে।’ যদি ‘ন্যায়পাল’ পদে সরকার কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দিত তবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি কি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে জাতিকে সেবা দিতে পারত? নাকি অন্যান্য কথিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মতোই সেবা দানের দৃষ্টান্ত স্থাপন হতো?

২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় ভিন্নপথে ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি ত্বরান্বিত ও অতিসহজে সম্ভব হয়ে ছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের কারণে, দাস্বত্ব বোধ থেকে ইয়াজউদ্দিন নিজ ক্ষমতাকে অক্ষুণœ রাখার জন্য মাথানত করেছিলেন। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংবিধানিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যক্তিত্ব ও মেরুদ- সোজা রাখার বিষয়ে জনগণের আস্থা কেন অর্জন করতে পারছে না? ১৬-৭-২০১৮ তারিখে নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার আহুত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন মেয়র কাউন্সিলরদের মতবিনিময় সভায় প্রার্থীগণ (সরকারদলীয় প্রাথী ব্যতীত) বলেন, ‘নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালটবাক্সে সিলমারা ভোট ঢোকানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ভোট বাক্স পাঠানোর অনুরোধ করেন’ (সূত্র: জাতীয় পত্রিকা ১৭-৭-২০১৮)। সম্প্রতি কয়েক বছর যাবৎ ঘটে যাওয়া নির্বাচনে মিডিয়ার বদৌলতে ভোট হরিলুটের সচিত্র প্রতিবেদন জনগণ দেখেছে, অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের অনর্ঢ়গল মিথ্যার পর মিথ্যা বলে যাচ্ছে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। যদি নিজেদের মধ্যে মানসিক দাসত্ব না থাকত তবে শপথ গ্রহণ প্রাপ্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিঃলজ্জ মিথ্যা কথা বলতে পারত না।

কবি হোমার বলেছেন যে, ‘একটি মানুষের ভুলের যোগ ফলের নাম জীবন’। সে ‘জীবন’ নিয়ে যখন কথা হয় তখন চর্তুরমুখী আলোচনা চলে আসে। ভুল, তঞ্চকতা, প্রবঞ্চনা ও দাসত্ব এক কথা নয়। ভুলের মাশুল অনুশোচনা হতে পারে, কিন্তু দাসত্বের কোনো পরিমার্জনা হতে পারে না এ কারণে যে, মানুষ লোভ ও স্বার্থের বশবর্তী হয়ে দাসত্ব করে। মুক্ত মানুষ, কাগজে-কলমে স্বাধীন হয়েও দাসত্ব করে শুধুমাত্র নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে, যার মাশুল জাতিকে দিতে হয় এবং জাতি বঞ্চিত হয় তার ন্যায্য অধিকার থেকে।
লেখক : কলামিস্ট ও আইনজীবী
ঃধরসঁৎধষধসশযধহফধশবৎ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়