শিরোনাম
◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত

প্রকাশিত : ২০ জুলাই, ২০১৮, ১১:২৩ দুপুর
আপডেট : ২০ জুলাই, ২০১৮, ১১:২৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বহিরাগতরা কক্ষে, শিক্ষার্থীরা কষ্টে

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আবাসিক হল ১৮টি। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য ১৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পাঁচটি হল। হলগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে থাকছে দ্বিগুণ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে না আবাসনব্যবস্থা। একই সঙ্গে হলের কক্ষগুলো বছরের পর বছর দখল করে রেখেছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বহিরাগত শিক্ষার্থীরা। ফলে বৈধ শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হয়েছে হলের গণরুমগুলোতে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। এ ব্যাপারে হল প্রশাসনগুলোর কোনো নজরদারি না থাকায় অবৈধ ও বহিরাগতদের মাত্রা আরো চরমে পৌঁছেছে।

বিভিন্ন হল ঘুরে জানা যায়, ছাত্রত্ব শেষ হওয়া অনেক শিক্ষার্থী বছরের পর বছর হলে অবস্থান করছে। ছাত্রনেতাদের আশ্রয়ে বহিরাগতরা থাকছে। ফলে হলে আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বহিরাগতদের কাছে হলের কক্ষ ভাড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেক নেতার বিরুদ্ধে। হল কমিটির নেতারা একাই এক কক্ষ দখল করে থাকায় গণরুমে ঠাঁই হয় সাধারণ ছাত্রদের। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে হলগুলো থেকে অছাত্রদের বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তার কোনো প্রয়োগ দেখা যায়নি। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রুমগুলোতে নোটিশ দিয়েই হল প্রাধ্যক্ষরা তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেছেন।

বিভিন্ন হলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলের কক্ষগুলোর চারজনের একটি কক্ষে থাকা যায় আটজন। কিন্তু এসব কক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন করে থাকতে হয়। শিক্ষার্থীরা কক্ষে জায়গা না পেয়ে রাত কাটাচ্ছে বিভিন্ন হলের মসজিদ, রিডিং রুম ও টিভি রুমে।

জানা যায়, সূর্য সেন হলে অন্তত আটটি, স্যার এ এফ রহমান হলে পাঁচটি, জহুরুল হক হলে ১০টি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে আটটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আটটি, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১১টি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ১৩টি গণরুম রয়েছে। এসব গণরুমের একেকটিতে থাকছে ৩০ থেকে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন হলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। তবে অন্য হলগুলোর তুলনায় এ হলটিতে আবাসন সুবিধা সবচেয়ে বেশি খারাপ। হলটিতে অবৈধ ও বহিরাগত শিক্ষার্থীরা থাকে কক্ষে আর বর্তমান শিক্ষার্থীরা থাকে বারান্দায় ও গণরুমে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের দক্ষিণ পাশের দোতলায় টিভি রুমের বারান্দায় সারি সারি বেড। একটি বেডের সঙ্গে আরেকটি বেডের মাঝে ফাঁকা নেই এক ইঞ্চি। বই ও জিনিসপত্র রাখার জন্য ট্রাংক রাখা হয়েছে বেডের নিচে। ভাপসা গরম কিংবা হাড়-কাঁপানো শীত; সব ঋতুতে হলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় এই পরিবেশে। তবে ‘গণরুম’ হিসেবে পরিচিত হলের ৮৫ নম্বর কক্ষের অবস্থা আরো শোচনীয়। কক্ষটিতে থাকে দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী। কক্ষটি আগে ‘গেমস রুম’ থাকলেও এখন তা শিক্ষার্থীদের মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন।

হলটিতে মোট কক্ষ রয়েছে ১৪৮টি, যার শয্যাসংখ্যা ৪০২টি হলেও থাকে প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী। ৬০টি একক কক্ষের সব কটিতেই থাকে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া অনেক শিক্ষার্থী। এর বাইরে দুই শয্যার ১২টি, তিন শয্যার দুটি ও চার শয্যার ৭৪টিসহ ৮৮টি কক্ষ রয়েছে, যেগুলোর প্রায় প্রতিটি কক্ষেই একাধিক অছাত্র রয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকে এসব অছাত্র। তাই কক্ষে জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বারান্দা ও গণরুমেই থাকছে হলের নিয়মিত ছাত্ররা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি দিন ধরে হলে রয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইমতিয়াজ উদ্দীন রাসেল। তিনি থাকেন হলের ১২১ নম্বর কক্ষে। ৯ বছর আগে তাঁর ছাত্রত্ব শেষ হলেও এখনো হলে থাকছেন তিনি। একাই এক রুম নিয়ে থাকেন তিনি। এ ছাড়া প্রায় সাত বছর আগে পড়াশোনা শেষ হওয়া ৮ থেকে ১০ জন অছাত্র মিলিয়ে হলে অবস্থান করছে কয়েক শ ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থী। এ ছাড়া হলের ২৭, ১৩৯, ১৪১, ১৪২সহ একাধিক কক্ষে থাকে অছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতারা।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মতো ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের দাপট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি হলেই। হল প্রশাসনের তদারকির অভাব ও সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের অবৈধভাবে বছরের পর বছর হলে অবস্থানের কারণে আবাসন সংকট চরমে পৌঁছেছে।

শিক্ষার্থীরা বলছে, সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে সিনিয়র নেতাদের অনেকেই হল ছেড়ে দেন। তবে কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় তাঁদের অনেকেই আবার হলে ফিরে এসেছেন। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দিন দিন আবাসন সংকট প্রকট হলেও বাড়ানো যাচ্ছে না আবাসন সুবিধা। আবাসন ব্যবস্থা বাড়াতে হলে প্রয়োজন নতুন নতুন হল। তবে জমির অভাবে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি রাজধানীর পূর্বাচলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হলে এই সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে।

তবে এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে সূর্য সেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হলের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বাইরের অনেকেই হলে থাকে। দীর্ঘদিন হলে থাকলেও তারা সিট ছাড়ে না। হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নামে সিট বরাদ্দ দিলেও সেই সিটে উঠতে পারি না। আবার হল প্রশাসন সিটে উঠতে তেমন সহায়তা করে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বিবরণী ২০১৬-১৭ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে দ্বৈতাবাসিকসহ আবাসিক শিক্ষার্থী এক হাজার ২৪২ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে রয়েছে ৭৬৬ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৪০৫ জন, জগন্নাথ হলে এক হাজার ৪২০ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৭২৫ জন, সূর্য সেন হলে ৫৭৭ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৫৪০ জন, কবি জসীমউদ্্দীন হলে ৩৯৭ জন, স্যার এফ রহমান হলে (শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসসহ) ৪৮৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪১০ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯৩৪ জন, অমর একুশে হলে ৬১০ জন, রোকেয়া হলে এক হাজার ৬০০ জন, শামসুন্নাহার হলে এক হাজার ৩৫০ জন, কুয়েত মৈত্রী হলে দুই হাজার ৬১ জন, স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে ১১৯ জন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে এক হাজার ১৫০ জন এবং নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রীনিবাসে ১৬০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে। তবে হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তুলনায় দ্বিগুণ অনাবাসিক শিক্ষার্থী থাকছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সবচেয়ে বেশি বহিরাগতের বসবাস রয়েছে বলে জানা যায়। এ হলে শতাধিক বহিরাগত অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া একই চিত্র রয়েছে আরো অনেক হলে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, ফজলুল হক হল, সূর্য সেন হল, স্যার এ এফ রহমান হল, জিয়া হল, বঙ্গবন্ধু হলেও রয়েছে কয়েক শ বহিরাগতের বসবাস। এর মধ্যে বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের অনেক নেতা বসবাস করছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে।

হলগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র ও বহিরাগতদের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘হলগুলোতে বহিরাগতদের বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। এরই মধ্যে হল প্রশাসন অছাত্রদের নিজ দায়িত্বে সিট ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে। হল প্রশাসন খুব শিগগির পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’
সূত্র : কালের কন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়