শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২০ জুলাই, ২০১৮, ০৮:১৬ সকাল
আপডেট : ২০ জুলাই, ২০১৮, ০৮:১৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সিলেট সিটি নির্বাচনে নাটকীয় মোড়

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির রাজনীতিতে হঠাৎ নতুন মেরুকরণ হয়েছে। দলের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম অনেকটা আকস্মিকভাবে নিজেদের মধ্যে প্রথমে গোপনে এবং পরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। শেষে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আরিফুল হককে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন সেলিম। বিনিময়ে তাকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পর এই পদ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়েছিল।

এদিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিমের শাহী ঈদগাহের হাজারীবাগ এলাকার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তিনি এ সময় বিদায়ী মেয়র আরিফুল হকের কুমারপাড়ার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন। পরে পুলিশ প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদায়ী মেয়রের বাড়িও ঘেরাও করে রেখেছিল। ওই সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও অপ্রিয় কিছু ঘটেনি।

এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দর থানার ওসি গৌছুল হোসেন সমকালকে জানিয়েছেন, উপরের নির্দেশে তারা বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছেন। কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার গোলাম কাওসার দস্তগীর বলেছেন, রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবেই পুলিশ আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছিল। বাড়ির ভেতরে যায়নি।

এদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বদরুজ্জামান সেলিম জাতীয় স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান। একই সঙ্গে আরিফুল হককে সমর্থনের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দিত করেছেন। আরিফুল হক চৌধুরীও তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে সিলেটে বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই। ভোটের হিসেবে সেলিম অনেক পিছিয়ে থাকলেও তার সমর্থন পাওয়ায় দলে আশার সঞ্চার হয়েছে।

এই দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনে অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তারা ধানের শীষে ভোট প্রত্যাশা করছেন। অথচ গত বুধবার পর্যন্ত সিসিক নির্বাচনের বৈতরণী পেরুনো নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতও সিসিক নির্বাচনে লড়ছে। তবে জামায়াতের অংশগ্রহণকে খুব একটা চিন্তার কারন মনে করছেন না সিলেট বিএনপির নেতারা।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান এবং এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম গত বুধবার দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চালানোর পর রাতে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সিলেট মহানগর বিএনপির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। এক পর্যায়ে দলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীও ওই বৈঠকে অংশ নেন।

এই বৈঠকের আলোচনায় কেন্দ্রীয় দুই নেতা নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে দলীয় প্রার্থীকে সমর্থনের অনুরোধ জানালেও বদরুজ্জামান সেলিম ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। উল্টো তিনি মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ করেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে দলীয় প্রার্থীর অনুরোধেও তিনি ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি।

এ অবস্থায় গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তার সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও বদরুজ্জামান সেলিমের টেলিফোনে কথা হয়েছে। এর পরেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বলে জানা গেছে।

বিএনপি প্রার্থীর বাড়ির সামনে পুলিশের অবস্থান

বদরুজ্জামান সেলিম বিএনপি প্রার্থীর বাড়িতে এলে সেখানে খুশিতে আত্মহারা হন দলের নেতাকর্মীরা। তবে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে পুলিশ ওই বাড়ির সামনে এলে নেতাকর্মীরা কিছুটা অশান্ত হয়ে ওঠেন। সংবাদ সম্মেলনের পর দলের নেতাদের গাড়িতে তল্লাশির চেষ্টা করলে ক্ষুব্ধ কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। অবশ্য এ নিয়ে কোনো অঘটন ঘটেনি। পরে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সালেহ আহমদ খসরু রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ জানালে বিদায়ী মেয়রের বাড়ির সামনে থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয়।

স্বপদ ফিরে পেলেন সেলিম

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে আমান উল্লাহ আমান জানান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশে তারা বদরুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে কথা বলে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। এই অনুরোধে তিনি সাড়াও দিয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তার অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, বদরুজ্জামান সেলিম সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকবেন।

বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যানের অভিযোগ, খুলনা ও গাজীপুরে জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিলেটে ওই অপকর্ম করা হলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। তিনি বদরুজ্জামান সেলিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আরিফুল হক চৌধুরীরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সেলিমের হাতে সমকাল

বদরুজ্জামান সেলিম সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সমকালে প্রকাশিত তার সাক্ষাৎকার দেখিয়ে বলেন, তার রক্ত-মস্তিকে এখনও বিএনপি আছে এবং থাকবে। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা জানিয়ে আরও বলেন, আমান উল্লাহ আমান ও নাজিম উদ্দিন আলমের মাধ্যমে কারাগার থেকে চিরকুট পাঠিয়েছেন তার নেতা খালেদা জিয়া। ফোনে অনুরোধ করেছেন তারেক রহমান। তাদের সম্মানেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এ সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক বলেন, শত ভুল বোঝাবুঝির পরও তারা দু'জন বিএনপির জন্য একসঙ্গে কাজ করছেন। তিনি তার বাসার সামনে পুলিশের অবস্থান ও বদরুজ্জামান সেলিমের বাসায় তল্লাশির নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ সব দেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা শঙ্কিত। বিএনপি সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র হলে হয় মরব, না হয় বাঁচব। আমাদের কোনো ক্ষতি হলে তার দায় নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে নিতে হবে।

এ সময় বদরুজ্জামান সেলিমকে ধন্যবাদ ও ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সহ-সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখত সাদেক, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান চৌধুরী ও মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী।

নাম ও প্রতীক থাকবে

আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন করলেও আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ব্যালট পেপারে বদরুজ্জামান সেলিমের নাম ও প্রতীক থাকবে। এ প্রসঙ্গে রিটার্নিং অফিসার আলীমুজ্জামান জানিয়েছেন, গত ৯ জুলাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ফুরিয়ে গেছে। এখন আর নির্বাচন থেকে কোনো প্রার্থীর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া :আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যাওয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। গতকাল তিনি সমকালকে জানান, এ ঘটনা বিএনপির রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির খুব একটা সুবিধা হবে না। কারণ আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটের মানুষ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর উন্নয়নে আস্থাবান হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সরে যাওয়ায় কিছু যায় আসে না। সিলেটবাসী আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়