শিরোনাম
◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী ◈ উপজেলার ভোটে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : ওবায়দুল কাদের  ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘন: ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি ◈ ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৬

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোটা সংস্কারে আদালতের রায় প্রসঙ্গ

ডেস্ক রিপোর্ট : ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার বা বাতিল করা যাবে না। আদালতের একটি রায়ের প্রসঙ্গ সামনে আনা হয়েছে। ‘কোটা বাতিল’র উদ্যোগ নিলে আদালত অবমাননা করা হবে। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী, পরে প্রধানমন্ত্রী নিজে একথা বলেছেন। গত কয়েক বছর ধরে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন যা গত মার্চ থেকে বেগবান হয়েছে। আদালতের এমন কোনো নির্দেশনার প্রসঙ্গ কখনও জানা যায়নি।

আদালতের এই প্রসঙ্গটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেল, অন্য একটি রিটের রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট কোটা বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বিসিএস খাদ্য বিভাগের অবসর প্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন সিকদার মুক্তিযোদ্ধা সরকারি চাকরিজীবীদের পক্ষে রিটটি করেছিলেন। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ ৫৭ বছর থেকে দুই বছর বৃদ্ধি করে ৫৯ বছর করার আদেশ জারি করেছিলেন ২০০৯ সালে। এ বিষয়ক আইন করা হয়েছিল ২০১০ সালে। তারপর ২০১১ সালে অমুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদও দুই বছর বাড়ানো হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, সবার জন্যে সমান সুযোগ কারও প্রতি বৈষম্য নয়। মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা বিষয়টি মেনে নিতে চাননি। তাদের অবসরের বয়স আরও দুই বছর বৃদ্ধির দাবিতে ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের পক্ষে সরকারকে প্রতিপক্ষ করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন জামাল উদ্দিন সিকদার। মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের অবসরের বয়স সাধারণ কর্মকর্তাদের চেয়ে এক বছর বৃদ্ধির অর্থাৎ ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয়। হাইকোর্ট যা ২০১০ সাল থেকে কার্যকর করতে বলেন।

হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের প্রসঙ্গটি এভাবে লেখেন,

‘The reservation of 30% quota the children of fredoom fighter Shall be followed strictly, any case if the quota can’t be filled up the concerned post be kept vacant’.

সরকার পরাজিত হয়ে অ্যাপিলেট ডিভিশনে যায়, রায়ের কয়েকটি পর্যবেক্ষণ বিষয়ে আপত্তি নিয়ে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বেঞ্চে আপিল শুনানি হয়।

অ্যাপিলেট ডিভিশন কিছু বিষয় বাদ দিয়ে, হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। চার জন বিচারপতি অ্যাপিলেট ডিভিশনের রায়ে স্বাক্ষর করেন ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসের ৫ তারিখে।

অ্যাপিলেট ডিভিশন হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের কোটা সংক্রান্ত অংশ থেকে ‘any case if the quota cant be filled up the concerned post be kept vacant’.- এই অংশটি বাদ দিয়ে দেন। হাইকোর্টের রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে আরও কিছু সুযোগ- সুবিধার কথা বলেছিলেন। যেমন, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং সরকারি পরিবহণ ব্যবহার করতে পারবেন মুক্তিযোদ্ধারা। ভারতে এই সুবিধা আছে। ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে স্বাধীনতায় যারা অবদান রেখেছেন তারা কি ধরণের সুযোগ- সুবিধা পেয়ে থাকেন, তা উল্লেখ করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন। অ্যাপিলেট ডিভিশনে চিকিৎসা ও পরিবহন সেবার বিষয়ে বিরোধিতা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অ্যাপিলেট ডিভিশন চিকিৎসা এবং পরিবহন সেবার বিষয় দুটি বাদ দিয়ে দেন। রিটকারী জামাল উদ্দীন সিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত সুযোগ- সুবিধা বঞ্চিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন!’

আরও উল্লেখ্য হাইকোর্টের রায় এখনও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রায় বাস্তবায়ন না করায় ২০১৩ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদারসহ আট জন সরকারি কর্মকর্তার নামে আদালত অবমাননার মামলা হয়। এখনও সেই মামলা চলছে। রিটকারী জামাল উদ্দীন সিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বয়স্ক মানুষ। গতকালও (১৭ জুলাই) আদালতে গিয়েছি।’

আদালত অবমাননার মামলা চলাকালীনই, কোটা সংক্রান্ত আদালতের পর্যবেক্ষণ আলোচনায়। প্রশ্ন হলো আদালতের এই নির্দেশনার ফলে কোটা সংস্কার বা বাতিলের ক্ষেত্রে (মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ) কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ আছে কি না? অন্য একটি রিটের প্রসঙ্গে কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, মূল রায়ে নয়।

হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণ না মানার অনেক নজির আছে।

ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় আদালতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ছিল, সংসদ চাইলে আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে।

এই পর্যবেক্ষণ সরকার অনুসরণ করেননি। এতে আদালত অবমাননা হয়নি। কারণ এটা ছিল পর্যবেক্ষণ।

গত মার্চ মাসে কোটা বাতিল চেয়ে একটি রিট করা হয়েছিল। রিটটি খারিজ করে দিয়ে আদালত বলেছিলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত আদালতের বিষয় নয়। রিটকারী ব্যক্তি কোটা ব্যবস্থার কারণে সরাসরি সংক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়ায় আবেদনটি খারিজ করে দেন আদালত।

আদালত প্রসঙ্গ অবতারণার পর, আরও একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে। হাইকোর্টর যে পর্যবেক্ষণ এবং অ্যাপিলেট ডিভিশনের রায়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের (Children of fredoom fighter) জন্যে কোটা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। নাতি- পুতিদের (Grand Children) কথা লেখা হয়নি।

আর এখন কোটা সুবিধা ভোগ করছেন ‘নাতি- পুতি’রা। এই বিষয়টি নতুন কোনো বিতর্কের সূচনা করবে কি না, সেই প্রশ্নও সামনে আসছে।

কোটার মতো একটি বিষয়, যা টেবিলে বসে আলোচনা করে খুব সহজে সমাধান করা সম্ভব ছিল। তা আক্রমণ- হাতুড়ি পেটার পর সাংঘর্ষিক অবস্থায় রূপ নিয়েছে। সঙ্গে যোগ হলো আদালতের প্রসঙ্গ।

তারুণ্যের মেধা- নৈতিকতার কি নিদারুণ অপচয়ের সাক্ষী হয়ে থাকছে বাংলাদেশ!

কথাগুলো ডেইলি স্টারের অনলাইনে লিখেছেন - গোলাম মোর্তুজা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়