ডেস্ক রিপোর্ট : অদম্য ইচ্ছা শক্তি দমিয়ে রাখতে পারেনি ঝিনাইদহের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণাকে। জীবন সংগ্রামের কয়েকধাপ পেরিয়ে এখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। হতদরিদ্র নাইট গার্ড বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি হতে চান শিক্ষক।
জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ব্রাহিমপুর গ্রামের হতদরিদ্র নাইট গার্ড মিজানুর রহমানের প্রথম সন্তান সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণা। ২০০৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগে চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করে। এরপর তাকে রংপুর, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে বাবার সব সহায়-সম্বল বিক্রি করেও ধরে রাখা যায়নি তার চোখের আলো। ওই বছরের শেষের দিকে তার দুই চোখের আলো নিভে যায়।
কিন্তু দৃষ্টি হারানোর পরেও মনোবল হারাননি সাদিয়া। শত কষ্টের মধ্যেও পড়ালেখা ছেড়ে দেননি। আর এ ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়েছিলেন দরিদ্র বাবা। দৃষ্টি হারানোর পরে তাকে প্রথমে ভর্তি করা হয় ঢাকা ব্যাপটিস্ট চার্চ মিশনারিজ স্কুলে। অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০১৫ সালে এ গ্রেড নিয়ে এসএসসি পাশ করার পর ভর্তি হয় বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজে। সেখান থেকে এ গ্রেড নিয়ে পাশ করার পর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে পড়ছেন।
ব্যাপটিস্ট চার্চ মিশনারিজ স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর শিক্ষকদের লেকচার রেকর্ড করে পড়তে হয়েছে সাদিয়াকে। এছাড়াও বন্ধুদের দিয়ে পড়া রেকর্ড করে দিয়েছেন এসএসসি, এইচএসসি ও ভর্তি পরীক্ষা। লেখাপড়া ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য এখন প্রয়োজন একটি ল্যাপটপ। অর্থাভাবে একটি ল্যাপটপ কিনে দিতে পারছে না তার পরিবার। সেখানে চোখ লাগানো তো দূরের কথা।
প্রতিবন্ধী সাদিয়া জানান, চোখের আলো না থাকলেও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ইচ্ছা নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার দায়িত্ব নেবেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে একজন ভালো শিক্ষক হতে চান।
সাদিয়ার বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘নিজের ২ বিঘা জমি বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু চোখ ভালো হয়নি। এখন অনেক কষ্টে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। সমাজের বিত্তবানরা যদি লেখাপড়ার দায়িত্ব নিত তাহলে আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হতো।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, ‘মেধাবী সাদিয়ার লেখাপড়ার জন্য জেলা প্রশাসন সকল প্রকার সহযোগিতা করবে। আমরা আশা করি সে লেখাপড়া শেষ করে একজন স্বাবলম্বী ও ভালো মানুষ হয়ে সমাজ তথা দেশের কল্যাণে কাজ করবে।’ - বার্তা২৪.কম
আপনার মতামত লিখুন :