শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০৭:০১ সকাল
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০৭:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশিরা ভারতে গিয়ে কী পরিমাণ টাকা খরচ করেন?

ডেস্ক রিপোর্ট : বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর লাখ লাখ বাংলাদেশি ভারতে যান। এ হার ক্রমে আরও বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশিরা ভারতে গিয়ে কী পরিমাণ টাকা খরচ করেন?

ভারতের পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসোর মতে, পশ্চিমা পর্যটকদের চেয়ে বাংলাদেশিদের খরচ করার পরিমাণ কিন্তু কোনো অংশে কম নয়।

আলফানসো আরও জানান, পাঁচতারা হোটেল বা বিমানের বিজনেস ক্লাসে অত না করলেও বাংলাদেশিরা কেনাকাটায় আর মেডিক্যাল বিলে ভারতে একটা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন। আর সে কারণেই ভারত চাইছে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পর্যটক ভারতে আসুক।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের খরচের ধরনটা কী রকম এবং ভারতের পর্যটন শিল্পই বা তাদের কী চোখে দেখছে?

যে দেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন, আমেরিকাকে টপকে প্রায় বছর তিনেক হলো, সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ ।

ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস থেকেই এখন বিশ্বের যেকোনো ভারতীয় মিশনের চেয়ে বেশি ভিসা মঞ্জুর হয়। আর প্রতি বছরই অন্তত ১৬ থেকে ১৭ লাখ বাংলাদেশি এখন ভারতে যান। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর শ্বেতাঙ্গ পর্যটকদের মতো বেড়াতে গিয়ে বাংলাদেশিরা অতটা খরচ করেন না বলে যে ধারণা আছে, ভারতের পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসোর মতে সেটা সম্পূর্ণ ভুল।

আলফানসো বলেন, ‘বাংলাদেশি ট্যুরিস্টরা কিন্তু এখানে এসে প্রচুর টাকা খরচ করেন। তাদের খরচের জায়গা মূলত দুটো। বিয়ের জন্য কেনাকাটা আর মেডিকেল ট্যুরিজম। এই দুটো খাতেই তারা বিপুল খরচ করেন। কোনো কার্পণ্য না করে দু’হাতে টাকা খরচ করেন। কাজেই আমি তো খুব খুশি, বাংলাদেশিদের বলব, আপনারা আরও বেশি করে আসুন!’

ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকা থেকে যে পর্যটকরা ভারতে আসেন, তারা তাদের বাজেটের একটা বড় অংশ খরচ করেন পাঁচতারা হোটেলে কিংবা প্যালেস অন হুইলসের মতো বিলাসবহুল ট্রেনে বা পরিবহনে।

দিল্লিতে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরস বা আইএটো’র প্রেসিডেন্ট প্রণব সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশি পর্যটকদের যে খরচের প্যাটার্ন, তাতে এ দেশের পর্যটন খাত হয়তো সরাসরি ততটা লাভবান হচ্ছে না, কিন্তু দেশের অর্থনীতির জন্য তা অন্যভাবে সুফল বয়ে আনছে।’

প্রণব সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশিদের জন্য হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির হয়তো তেমন লাভ নেই। কারণ অনেক সময়ই তারা হয়তো চেনা-জানা বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেই থাকছেন এবং লো বাজেটেই তাদের চলে যাচ্ছে।

একজন ইউরোপিয়ান ট্যুরিস্ট যদি গড়ে দৈনিক একশ ডলার খরচ করেন, বাংলাদেশিরা কিন্তু কুড়ি থেকে পঁচিশ ডলারের মধ্যেই খরচটা সীমিত রাখছেন। মানে ইউরোপীয়দের তুলনায় গড়ে একজন বাংলাদেশি আমাদের পর্যটন খাতে মাত্র ২৫ শতাংশ খরচ করছেন। কিন্তু তারা সেটা পুষিয়ে দিচ্ছেন অন্য জায়গায়।

বিয়ের কেনাকাটার নানা জিনিসপত্র বিপুল পরিমাণে কেনে আর মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য যারা আসছেন, তারা হাসপাতালের বিল মিটিয়ে মোট খরচের অঙ্কটা হরেদরে পশ্চিমাদের মতো সেই একই দাঁড়াচ্ছে। এ ছাড়া আজমির শরিফের মতো তীর্থস্থানে গিয়েও অনেক অর্থ খরচ করেন একদল বাংলাদেশি।’

বাংলাদেশি পর্যটকদের কেনাকাটা নিয়ে কলকাতার হিন্দুস্তান ট্র্যাভেলসের শিবানী ভট্টাচার্য বলেন, ‘পশ্চিমা পর্যটকদের মধ্যে একটা বড় অংশ থাকে ব্যাকপ্যাকার বা খুব কম বাজেটের পর্যটক। তাদের স্যুভেনির কেনার প্রায় কোনো বালাই-ই নেই। অন্য শ্বেতাঙ্গ পর্যটকদের মধ্যেও কেনাকাটার বাতিক অতটা থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশিরা এখানে বিরাট ব্যতিক্রম।

কলকাতায় আসা বাংলাদেশিদের প্রধান টার্গেটই থাকে শপিং। তাদের জন্য ট্র্যাভেল প্ল্যান করার সময় আমাদের সবসময় বলা হয়, অন্তত একটা পুরো দিন যেন কেনাকাটার জন্য বরাদ্দ থাকে! আসলে কলকাতায় আধুনিক ফ্যাশনেবল জামা-কাপড় ও অন্যান্য আরও নানা জিনিস তুলনায় সস্তায় পাওয়া যায়—এই ধারণা থেকেই বোধহয় সেটা করা হয়!

পশ্চিমা দেশের পর্যটকরা যে একেবারে কেনাকাটা করেন না, তা নয়। তারা যত বেশি সম্ভব ঘুরতে চান। কিন্তু তারাও জিনিসপত্র কেনেন, তবে বড়জোর দু-একটা। কিন্তু বাংলাদেশিরা ব্যাগ ব্যাগ বোঝাই করে কিনে নিয়ে যান।’

ভারতের পর্যটন বিভাগ বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেইন, প্রোমো বা রোড শো’র মাধ্যমে চিরকাল পশ্চিমা দেশের পর্যটকদেরই টানার চেষ্টা করে এসেছে, কিন্তু পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসোর মতে, ‘সেই দৃষ্টিভঙ্গি এখন পাল্টানো হচ্ছে।’

আলফানসো বলেন, ‘আমার দেশে সাদা, কালো না বাদামি চামড়ার পর্যটক এলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে-যায় না। যতক্ষণ তারা এ দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, আমার পকেটে টাকা আসছে আর ভারতকে দেখে তারা বলছেন “বাহ্, কী সুন্দর দেশ!” তাতেই আমরা খুশি।

আর বাংলাদেশিরা কেনই বা ভারতে আসবেন না। এত কম খরচে এত ভালো ডাক্তার আর চিকিৎসা পরিষেবাই বা তারা কোথায় পাবেন? আমেরিকা-বিলেতের চেয়ে খরচের ভগ্নাংশেই তারা এখানে দারুণ চিকিৎসা পাবেন।’

চলতি মাসের ১৪ তারিখে ঢাকায় উদ্বোধন হয়েছে সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতের বৃহত্তম ভিসা সেন্টার, বাংলাদেশিদের জন্য অনেক শিথিলও করা হয়েছে ভারতীয় ভিসার কড়াকড়ি। আর পর্যটনমন্ত্রীর কথা থেকেই স্পষ্ট, কেন বাংলাদেশি পর্যটক টানতে আরও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত!

সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়