শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ১০:৩৯ দুপুর
আপডেট : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ১০:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শিক্ষায় রাজনীতি

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : কয়েক মাস ধরে কী কাণ্ডই না ঘটছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে! সরকারি চাকরিতে কোটার পক্ষ-বিপক্ষ, তা নিয়ে আন্দোলন, ঘেরাও মিছিল স্লোগান পরিবারসহ উপাচার্যকে তার বাসায় পুড়িয়ে মারার চেষ্টা এবং সবশেষ কিছু কোটাবিরোধী শিক্ষকের সঙ্গে তাদেরই শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা, কাজকর্ম সব লাটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মানে এখন শুধু কোটার পক্ষ-বিপক্ষে তারুণ্যের বচসা বা উন্মাদনা নয়, শিক্ষকদের মধ্যে যারা সরকারপন্থী বলে পরিচিত সেই নীল দলের শিক্ষকদেরই একটি অংশ সরব উপাচার্য, প্রক্টরকে লক্ষ্য করে কটূক্তি বিদ্রুপ করে পরিস্থিতি সরগরম করে রাখতে। উপাচার্যপন্থীরাও তৎপর পাল্টা গলাবাজি করায়।

শুরু থেকেই আমার মনে প্রশ্ন, যারা উপাচার্যকে তার পরিবারসহ পুড়িয়ে মারতে চায় তারা কি শিক্ষার্থী? যেসব শিক্ষক এখন কোটা বিরোধীদের পক্ষ নিয়ে এই গরম কালের রাজপথ আরও গরম করছেন তারাও উপাচার্য হত্যা প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করেছেন হাল্কা চালে। যে কোটা বিরোধীরা নিজেদের শিক্ষার্থী বলে দাবি করছে তাদের নেতৃস্থানীয় অনেকের বক্তব্য পরিণত রাজনৈতিক। আর তারা কি পড়াশোনা করে? কারণ, তাদের তো সামান্যতম শ্রদ্ধা ভদ্রতার বোধই জন্ম হয়নি বলে ধারণা হয়।

আসা যাক ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে। ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কি ছাত্রলীগের? তারা যেভাবে ক’দিন ধরে পেশি সঞ্চালনা করছে, তাতে করে এই সংগঠনের কদর্য চেহারাই প্রদর্শিত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও উজ্জ্বলতর ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে।

আমরা তো জানি, মেধা ও বিদ্যা বিনয় দান করে। মেধাবীদের মধ্যে সেই বিনয় কোথায়? যেভাবে তারা ফেসবুকে ট্রল করছে, প্রধানমন্ত্রীকে, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটাক্ষ করছে, আবার ছাত্রলীগ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, পুরো প্রক্রিয়াটিকেই সুস্থ বলে মনে হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে, পছন্দ-অপছন্দও থাকতে পারে, সেসব নিয়ে তারা আন্দোলনও করতে পারে, আন্দোলনের বিরোধিতাও থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে এত স্পর্ধা কেন হবে তাদের, খোদ উপাচার্যকে মেরে ফেলার চেষ্টা হবে? আবার শিক্ষকরা রাজপথে গেলে আরেক অংশ তাদের ওপর চড়াও হবে? যেটা অবাক করার মতো, তা হলো শিক্ষকদের একাংশ তাদেরই উপাচার্যের ওপর হামলাকে এবং আরেক অংশ তাদের সহকর্মীদের ওপর হামলাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে উপাচার্য এবং প্রক্টর পরিস্থিতি মোটেও ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারছেন না। বিশেষ করে প্রক্টরের ভূমিকা সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর আচরণকে তার প্রথমেই উচিত ছিল কঠোরভাবে সমালোচনা করা। কারণ, এরা তার সহকর্মী। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো প্রক্টোরিয়াল বিধির প্রসঙ্গ টেনেছেন, যা হাস্যকর লেগেছে।

ছাত্রছাত্রীদের বয়স কম, তারুণ্যের ভুল থাকতে পারে। শিক্ষকরা কী করছেন? ভবিষ্যতের কাছে কি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তারা? ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো হাবভাব দেখে কিন্তু আজ অনেকেই বলছেন, এটা একটা উছিলা মাত্র—আসল লক্ষ্য রাজনীতি। এবং এই রাজনীতির পেছনে কী আছে তাহলে?

তথাকথিত এই কোটা আন্দোলনের পেছনে জামায়াত-শিবিরের উসকানি কতটা আছে বা নেই তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। সেটা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বিবেচিত হবে বলে প্রধামন্ত্রীর বক্তব্যকেই অনেক যৌক্তিক বলে হয়েছে আমার কাছে। কমিটি করার পর প্রজ্ঞাপনে এত সময় লাগাটা বিস্ময়কর। গোটা আন্দোলনটাই শেখ হাসিনার সরকারকে খানিক বিপাকে ফেলে খুচরো রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য সংগঠিত—তাকেই সত্য বলে মেনে নিয়েও বলতে হয় কাজটা ছাত্রলীগ যেভাবে করছে সেটা মোকাবিলার পথ নয়।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ছাত্রলীগের নামে হচ্ছে কিনা সেটা দেখার বিষয়। কারণ, ছাত্রলীগের এখন কমিটি নেই। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নেই, কিন্তু হল কমিটি তো আছে। তাছাড়া এমন আচরণ করছে তারা ছাত্রলীগ হোক বা না হোক তাতে কী আসে যায়? সরকারের দায়িত্ব কোনও পক্ষ-বিপক্ষ না ভেবেই যারা পেশিচর্চা করছে তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।

এ লেখা যখন লিখছি তখন জানলাম, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখির জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হুমকির মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাইদুল ইসলাম। গত সোমবার তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। কোটা সংস্কার ও শিক্ষক মাইদুল ইসলামের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখি করায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের রোষানলে পড়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খ. আলী আর রাজীও। এগুলো ভালো দৃষ্টান্ত নয়।

কোটা থাকবে কী থাকবে না একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। তবে তা আসবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি কমিটি করেছেন। আমরা চাই সিদ্ধান্ত দ্রুত আসুক। এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি বা পরিবেশ নষ্ট হোক তা প্রত্যাশিত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝেমধ্যেই একটা না একটা ইস্যু নিয়ে যেসব আন্দোলন হচ্ছে তার পেছনে বিরোধী রাজনীতির মদত হয়তো আছে। যেসব মিছিল হয় সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবল ছাত্রছাত্রীরা থাকে না, বহিরাগত এবং সুযোগসন্ধানীরাও চলে আসে। কিন্তু দুঃখজনক হলো শিক্ষকরা বিভক্ত হতে হতে একে অন্যের শত্রু হয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষায় বড় বেশি রাজনীতি হয়ে যাচ্ছে নাকি? সবার কাছেই প্রশ্ন, সরকারকে একটু বেকায়দায় ফেলা বা কোনও ক্ষুদ্র রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে যা হোক একটা কিছু নিয়ে এভাবে আন্দোলনের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচল করার রাজনীতি ঢুকিয়ে দেওয়া কি ঠিক?

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়