শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ০৩:৫৪ রাত
আপডেট : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ০৩:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তরুণদের বিরুদ্ধে তরুণদের আত্মঘাতী অবস্থান

মঞ্জুরুল আলম পান্না: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা কতখানি, তার পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক থাকতে পারে, সেটা বিস্তর চলছেও বটে। কিন্তু এই আন্দোলনকে ঘিরে যা কিছু ঘটছে তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চরম দেউলিয়াত্বই প্রকাশ করছে। আমরা আমাদের তরুণদের একটি অংশকে অপর পক্ষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। ছাত্রদেরদের একটি বিশেষ অংশকে শিক্ষকদের উপর হামলে পড়তে সহযোগিতা করছি। আমাদের নীতি, নৈতিকতাকে বিসর্জন দিতে শেখাচ্ছি। যে তরুণেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি সুন্দর আগামীকে বিনির্মাণ করবে তাদের এক পক্ষকে অন্য পক্ষের শত্রুতে পরিণত করছি।

সরকার এবং সরকারি দল এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করছে। বিয়য়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বিরোধী দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করবে সেটাও স্বাভাবিক। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির ঘটনার আড়ালে থেকে যে কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে একটি চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে এবং তা করবে সেটাও সত্য। পাশাপাশি সেই সত্যকে স্বীকার করে চুপচাপ বসে থাকলেও চলবে না নিশ্চয়। কিন্তু যৌক্তিক এবং গণতান্ত্রিক কোনো আন্দোলনকে তারা যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায় তবে তার দোষ তো ওই আন্দোলনকারীদের নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চক্রান্তকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের দুর্ভাগ্য- চলমান পরিস্থিতিতে আমাদেরকে ভিন্ন দৃশ্য দেখতে হচ্ছে।

প্রতিহিংসা কখনও ভালো কিছুর জন্ম দেয় না। প্রতিহিংসা যেকোনো ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিবন্ধক হিসেবেই প্রভাব বিস্তার করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদেরকে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে দাবি করা হচ্ছে বিরোধী পক্ষ থেকে। কারণ তাদের কারও কারোর আচরণ নাকি উচ্ছৃঙ্খল এবং দেশে তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। এমন অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সভা-সমাবেশ এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থানে কোনো রকম উস্কানি ছাড়াই যারা হামলে পড়ছে, হিংসাত্মক পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে, তাদের পরিচয় কি?

বিশেষ একটি সংগঠনের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র যদি শিক্ষকদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে উদ্ধত হয়, কটাক্ষ করে, পুলিশের হাতে আটক কোন আন্দোলনকারীর মমতাময়ী মায়ের প্রতি নোংরা ভাষা ব্যবহার করে তবে পরিস্থিতিতো আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়। আমাদের সব ধরণের প্রতিবাদ আর আন্দোলনের মূলমন্ত্রের প্রতীক শহীদ মিনারে দাঁড়িয়েও কেউ কথা বলতে পারবে না, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শুরু থেকে বিশেষ একটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির অপসংস্কৃতির ধারা বজায় রেখেছে, যা চরম হতাশাজনক।
‘আমি তোমার মতের সঙ্গে একমত না-ও হতে পারি। কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে পারি।’ ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের বহুল উচ্চারিত সেই উক্তিকে আমাদের রাজনীতিতে, আমাদের সংস্কৃতিতে এখনো প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। আর এজন্য সম্ভবত আমাদেরকে আরও অনেক কিছুতে অনেক বেশি খেসারত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর বিপরীতে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখাটা আসলেই দুঃসাহসের বটে। তবু সেই দুঃসাহস আমরা দেখাতে চাই।
লেখক : সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়