শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:২০ দুপুর
আপডেট : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:২০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হঠাৎ উত্তপ্ত রাজশাহী

ডেস্ক রিপোর্ট : তফসিল ঘোষণার পর থেকেই চলছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাগ্‌যুদ্ধ। কথার লড়াই আর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চললেও উৎসবমুখর ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আসন্ন ভোট। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির প্রচারে মুখোশধারীদের ককটেল বিস্টেম্ফারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের লড়াই। সহিংসতার শঙ্কা ভোটারদের মাঝে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন কি-না এ প্রশ্নও করছেন তারা।

গতকালের ককটেল বিস্টেম্ফারণের ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ভোটের প্রচারে বোমা হামলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের দাবি, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে হামলা হয়েছে।

এর জবাবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারি দল তাদের প্রচারে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, বিএনপি কর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় এমনিতেই চাপে রয়েছে। তারা কেন ভোটের আগে হামলা চালিয়ে নিজেদের ওপর বিপদ ডেকে আনবে। এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। পুলিশ বলছে, বিএনপির যে সভায় বোমা হামলা হয়েছে, তা আয়োজনে অনুমতি নেওয়া হয়নি। বোমা বিস্টেম্ফারণের ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ১০টার দিকে নগরীর সাগরপাড়ার বটতলায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে জেলা ছাত্রদলের গণসংযোগের উদ্বোধনী সভায় ককটেল ছুড়ে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। তবে সেখানে বুলবুল উপস্থিত ছিলেন না। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বক্তব্য চলাকালে তিনটি মোটরসাইকেলে আসা মুখোশে মুখ ঢাকা কয়েক ব্যক্তি পরপর তিনটি ককটেল বিস্টেম্ফারণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এতে আহত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাভিশনের স্টাফ রিপোর্টার পরিতোষ চৌধুরী আদিত্য ও স্থানীয় ব্যবসায়ী স্বপন কর্মকার। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, তাদের আশা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। গত তিন বছরে রাজশাহীতে একটিও ককটেল বিস্টেম্ফারণের ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে বোমাবাজি হলে সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারবে না। সাহেববাজার মোড়ে রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সামনে ফুটপাতের আড্ডায় সে কথাই বলছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু বক্কর। তার কথায় সহমত প্রকাশ করলেন বাকিরাও।

হামলার পরপরই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশে বোমাবাজির ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল অভিযোগ করেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে বিএনপি।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত সোমবার একটি হোটেলে গোপন বৈঠক করতে চেয়েছিলেন রুহুল কুদ্দুস দুলু। পুলিশ জেনে যাওয়ায় সভা করতে পারেননি। পরে পর্যটন মোটেলে বৈঠক করেন। কোটি টাকার লেদদেন হয়েছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। সেখান থেকে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন দুলু। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তার ধারণা, লন্ডন থেকে হামলার নির্দেশ এসেছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এ অভিযোগ নাকচ করে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলীয় প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট তোফাজ্জল হোসেন  বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। গত ছয় দিনে বিএনপির ছয়জন নেতাকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ধরে নিয়ে গেছে। গত কয়েক মাসে নগরীতে একটি পটকা বিস্টেম্ফারণের ঘটনা না ঘটলেও বিস্টেম্ফারক আইনে মামলা করা হয়েছে। বিএনপির কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বোমা বিস্টেম্ফারণ ঘটলে হামলকারী যেই হোক পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা করবে। তা জেনেও বিএনপি কেন নিজেদের নির্বাচনী সভায় হামলা করে বিপদ ডেকে আনবে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধে হামলা হয়েছে- এ অভিযোগ নাকচ করেছেন রুহুল কুদ্দুস দুলুও। তার প্রশ্ন, কেউ ইচ্ছে করে নিজেদের ওপর হামলা চালাতে পারে? তিনি বলেন, তার পাশেই ছিলেন হামলায় আহত হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি নিজেও আহত হতে পারতেন। দুলু দাবি করেন, ভোটারদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই হামলা চালানো হয়েছে। যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে সাহস না পান।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী সভা-সমাবেশ করার ২৪ ঘণ্টা আগে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বিএনপি অনুমতি না নিয়ে পথসভা করে আইন অমান্য করেছে। বোমা বিস্টেম্ফারণের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন বলেন, মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। রাতেই মামলা করা হবে। তবে বিএনপির মামলা নেওয়া হবে কি-না এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানা যায়নি।

গতকাল দুপুরে রাজশাহীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পূর্বনিধারিত সভা করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেউ যেন প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে।

ককটেল বিস্টেম্ফারণের উত্তেজনার মধ্যেই দিনভর ভোটের প্রচার চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। দলীয় নেতাদের নিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও প্রতিশ্রুতি দেন- নগর ভবনে ফিরতে পারলে অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন। বিকেলে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে একই সময়ে দুই দলের কর্মীরা প্রচারে নামলে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়