আদম মালেক : সঞ্চয়পত্রের চাহিদা উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১মাসে(জুলাই-মে) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। চাহিদার এই উর্ধ্বমুখি প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এবারও অতীতের মতো সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা যায়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। জুলাই থেকে মে পর্যন্ত এই ১১ মাসেই নিট বিনিয়োগ এসেছে ৪৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মেয়াদোত্তীর্ণ সঞ্চয়পত্র বাবদ গ্রাহককে ২৯ হাজার ৭৩১ কোটি ২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। গেল অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বিক্রি হয় ৫২ হাজার কোটি টাকা।
গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র কেনার দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা ভাল নয়। শেয়ারবাজারে বরাবরের মতই আস্থাহীনতা চলছে। আর ব্যাংকে টাকা রেখে যে পরিমাণ সুদ পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগেই স্বস্তিদায়ক। এমনকি বেশি মুনাফার কারণে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানান তারা।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সুমন হোসেন বলেন, গরিব মানুষের আয়ের একটি অন্যতম উৎস সঞ্চয়পত্র। সুদহার কমায় সাধারণ মানুষের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে জানান তিনি। আরেক ক্রেতা রাকিব আহসান বলেন, আমানতের সুদহার কমিয়ে ৩.২৫ থেকে ৬ শতাংশ । তাহলে আর ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ কি? যে টাকা আছে তা দিয়ে কিছু সঞ্চয়পত্র কিনে রাখা অনেক ভালো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। ফলে অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংক খাতে।
প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলোর প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। এই অর্থ বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায় সরকার। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১.৫২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৭৬ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ। ৩ মাস-অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.০৪ শতাংশ। ৩ বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ।
আপনার মতামত লিখুন :