ড. সা’দত হুসাইন: বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা, উত্তেজনা, শোরগোল আপাতত শেষ। সারা পৃথিবী মাতোয়ারা হয়েছিল ফুটবল উৎসবে। লোকজনের জীবন-যাত্রা, তাদের দৈনিক রুটিন সব কিছুর পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। পুরো একমাস তো ঘোরের মধ্যে কেটেছে। এক খেলা শেষ, সবার দৃষ্টি পরের খেলার দিকে। কখন বাজবে পরের খেলার বাঁশি। এক বালক বলেছে, ‘আমার খুব মজা লাগছে, বুড়ো মানুষরাও বাচ্চাদের মতো বাঁশি বাজিয়ে ছুটো-ছুটি করে।’
আমরা কয়েক বন্ধু যে যার বাড়িতে বসে খেলা দেখতাম। পরে খেলা নিয়ে আলাপ করতাম। আমরা ফুটবল খেলা বুঝি। তবে নানা রকম মডেল গড়ে, সমীকরণ তৈরি করে একে জটিল ‘কুনটাকার’ বা ‘হ্যামিলটোনিয়ানে’ রূপান্তরিত করতে পারি না। পছন্দও করি না। মনের আনন্দের জন্য খেলা দেখি। ভদ্র সমাজের সাধারণ আড্ডায় এ নিয়ে কথা বলে আনন্দ পাই। কতিপয় খেলোয়াড় ও কিছু টিমের প্রতি দুর্বলতা আছে। তবে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের জন্য কেঁদে বুক ভাসাইনা। জার্মানির জন্য বুক চাপড়াই না। যে টিম ভালো খেলে তাদের প্রশংসা করি। এশিয়া আফ্রিকার টিম জিতলে ভালো লাগে। ইউরোপ বা ল্যাটিন আমেরিকার টিমকে সু-দৃষ্টিতে দেখি।
আগে ফুটবল খেলার সময় ছিল ৬০ মিনিট। এখন হয়েছে ৯০ মিনিট। এ সময়ের মধ্যে জয়-পরাজয়ের ফয়সালা না হলে আরও ৩০ মিনিট বেশি খেলতে হয়। এই বাড়তি সময়কে সাধারণ ভাবে বলে ‘টাই-ব্রেকার’ তবে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা একে ‘এক্সট্রা টাইম’ বলে। এই সময়ের মধ্যেও ‘ড্র’ থেকে গেলে ‘পনাল্টি শ্যুট আউটে’র মাধ্যমে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হয়। প্রত্যেক দল পাঁচটি করে ‘পেনাল্টি কিক’ করার সুযোগ পায়। যে দল বেশি গোল করতে পারে তারা জয়ী হয়। এখানেও ফয়সালা না হলে একটি কিকের সফলতার মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এ অবস্থা হয়তোবা হাজারে একবার ঘটে।
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘যে আছে যার তালে।’ অর্থ্যাৎ সবাই তার সুবিধা মতো প্রত্যাশা করে, কাজ করে। এই প্রত্যাশা এবং কাজের সঙ্গে অনেক সময় অন্যদের বা সাধারণ মানুষের কাজ বা প্রত্যাশার একেবারেই কোনো মিল থাকে না। তাতে কিছু আসে যায় না। ব্যক্তি তার নিজ স্বার্থ এবং সুবিধা মতো কাজ করে যায়।
আমরা বন্ধুরা আমাদের মনের আনন্দের জন্য খেলা দেখি এবং বেশি সময় ধরে খেলা দেখতে চাই। ৯০ মিনিটের খেলা দেখে মন ভরে না। মন চায় আরও অন্তত ৩০ মিনিট খেলা হোক। সব চেয়ে ভলো হয় যদি সে ৩০ মিনিটে জয়-পরাজয়ের ফয়সালা যদি না হয়। তা হলে ‘পেনাল্টি শ্যুট আউটে’ আরও অন্তত ১৫ মিনিট মজা করে খেলা দেখা যাবে। সে আশায় আমরা বসে থাকতাম। যেদিন ৯০ মিনিটে খেলা শেষ হয়ে যেত সেদিন আমাদের মন ভরতো না। মনে হতো অসম্পূর্ণ অবস্থায় খেলা শেষ হয়ে গেছে। মোটেই ভালো কথা নয়। যে খেলা ‘পেনাল্টি শ্যুট আউট’ পর্যন্ত গড়াত সে খেলা দেখে মনে ভরে যেত। মনে হতো খেলাটি পূর্ণতা পেয়েছে। আমাদের মন তৃপ্তিতে ভরে গেছে। কে জিতেছে, কে হেরেছে তা বড় কথা নয়, মূল কথা হচ্ছে পরিপূর্ণ খেলা হয়েছে এবং আমরা আনন্দ পেয়েছি।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘What is worth doing is often worth overdoing’ বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্যাচ গুলো দেখে বড় আনন্দ পাওয়া যায়। তাই একটু বেশি সময় ধরে খেলা দেখতে পারলে ক্ষতি কী?
লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব
আপনার মতামত লিখুন :