শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৭ জুলাই, ২০১৮, ০৩:২৬ রাত
আপডেট : ১৭ জুলাই, ২০১৮, ০৩:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘ওরা চিকিৎসক না খুনি, ওরা কসাই’

সুশান্ত সাহা : ‘ওরা (সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক) বলেছে আরিয়ানের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ডেঙ্গু হলে প্রচ- জ্বর আসে। তাপমাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের প্লাটিলেট কমতে থাকবে। কিন্তু ভর্তির পর আরিয়ানের রক্তের প্লাটিলেট ছিল ৭৬ হাজার। পরে চিকিৎসা চলাকালীন ছিল ১ লাখ ২২ হাজার। শনিবার সকাল থেকে আরিয়ানের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রোববার দুপুরে খুব খারাপ অবস্থা হয়। ওই সময় চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি।’ একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন বাবা সাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারকে বিকেলে অনেক ডাকাডাকি করেছি। কিন্তু কেউ আসেননি। ডিউটিরত ডাক্তারদের বসে বসে মোবাইল ব্যবহার ও ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। তাদেরও ডেকে পাওয়া যায়নি। ওরা আমাদের আরিয়ানের কষ্ট বোঝেনি। ওরা চিকিৎসক না খুনি, ওরা কসাই।’

সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘রাতে আরিয়ানকে ২৫০ মিলিগ্রামের সাপজিটার দেয়া হয়। অল্প বয়সী শিশুকে কী করে ওরা ২৫০ এমজি ওষুধ দেয়! এরপর থেকে অস্বস্তি শুরু হয় আরিয়ানের। চোখমুখ কালো বর্ণ ধারণ করে। হাসপাতাল ডেঙ্গু বললেও যেভাবে ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল তা হয়নি। অবস্থার অবনতির বিষয়টি বারবার জানানোর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। বিকেল ৪টার দিকে আমার বাবুসোনা মারা যায়। এরপর ওরা নিউন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) ভর্তি করে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মৃত্যু ঘোষণা করে তারা।

তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান। বংশের প্রদীপ। গত ১৯ মাসের জীবন ওকে নিয়েই ছিল টইটুম্বুর। এখন আমি কী করবো। ওর মাকে সান্ত¡না দিতে পারছি না। ওর মা শুধু বলছে আমার বাবুরে আইনা দাও।’

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত ১৯ মাস বয়সী আরিয়ানকে রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ইউনিটের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল ক থেকে জানানো হয়- আরিয়ানের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। ওই জ্বরের সব ধরণের চিকিৎসাই চলছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় মারা যায় শিশুটি। আরিয়ানের বাবা সাহাদাত হোসেনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী সদরে। ব্যবসার কারণে রাজধানীর ধানমন্ডি থানাধীন ২৯/৩২ হাতিরপুলে স্ব-পরিবারে থাকেন তিনি। সাহাদাত হোসেন-আছিয়া খাতুন শিমু দম্পতির একমাত্র সন্তান আরিয়ানের জন্ম ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, মাত্র ১৯ মাসের শিশু আরিয়ানের মৃত্যুর কারণ চিকিৎসা কর্তব্যে অবহেলা ও অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ। তবে কর্তব্যে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি যথারীতি অস্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কর্তব্যে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেন্ট্রাল হসপিটালের শিশু বিশেষঙ্ঘ ডা.এস কে রায় বলেন, বাচ্চা রোগীদের জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে ২৫০ মি.গ্রা. পাওয়ারের সাপোসিটার দেওয়া হয় । এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে ৫০০ মি.গ্রা. পাওয়ারের সাপোসিটার দেওয়া হয় । রোগী মরে গেলে পরিবারের সবাই দাবি করেন, ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অথচ ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম হওয়ায় আরিয়ানের মৃত্যু হয়।

ডা.এস কে রায় বলেন, রোগী মরে গেলে পরিবারের লোকেরা মানতে চায় না। আর সেটা শিশু হলে মানাটা আরও বেশি কষ্টকর । তারা মানতে চায় না বাচ্চা রোগীদের মধ্যে গ্রেট কনডিশন থাকতে পারে। এ সর্¤úকে তাদের কোন আইডিয়াও নেই। তারা জানেনা, ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম হলে অক্সিজেন চলাচল করতে পারে না। এ সময় ধীরে ধীরে শরীরের রং কালচে হয়ে যায় । শক্ সিনড্রোম হলে ব্লাডফ্লোটা ভালো করে হয় না। যার কারণে অক্সিজেনের পরিমান কমে যায়, এবং কর্বণ ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়।

ডা. এস কে রায় আরও বলেন, শিশু আরিয়ানের অবস্থা খারাপ দেখে সাথে সাথে আইসিইউতে নিয়ে যাই, এবং এক ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে তাকে এট্রোডাকেল টিউব দেই। অক্সিজেন দিয়ে আরিয়ানকে বাচানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু রোগী একবার শকে চলে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম হলে তার থেকে কোন রোগীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় । আরিয়ানের ক্ষেত্রে স্টেজ ৪ বা ডেনজার লেবেলে চলে গেছে । যার থেকে কোন রোগী ফিরেনা, এর কারণে রোগীর, মৃত্যু হয় । আর এটাই হল শিশু আরিয়ানের মৃত্যুর মূল কারণ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ জুন ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হাতাহাতি ঘটনাও ঘটে হয়। জন্ডিস রোগে শিশুটির চিকিৎসা চললেও ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়, সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। পাশাপাশি তার হার্টের একটি এক্সরে রিপোর্টও সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া গত বছরের ১৮ মে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফিয়া জাইন চৈতি। ওই ঘটনায় হাসপাতালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর চালায়। পরে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসককে আটক করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও চৈতিকে দেয়া হয় ক্যান্সারের চিকিৎসা। ডাক্তাররা বলেছিলেন, আফিয়ার লিউকেমিয়া (ব্লাড ক্যান্সার) হয়েছে। সেই অনুযায়ীই তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে মৃত্যুর আগে জানানো হয় ক্যান্সার নয়, ডেঙ্গু হয়েছিল। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে চিকিৎসকসহ সেন্ট্রাল হাসপাতালের ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়