ডেস্ক রিপোর্ট : পঁয়ষট্টি বছর বা তার বেশি বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেবে ভারত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী ও ভারতের পক্ষে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল সেক্রেটারি বিরাজ রাজ শর্মা ‘সংশোধিত ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট ২০১৮’ তে সই করেন। সচিবালয়ে রোববার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের ভিসা সহজীকরণের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। যারা নাকি বয়স্ক, যাদের বয়স ৬৫ বছর এবং এর ঊর্ধ্বে, তারা ভিসা চাইলে পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেয়া হবে। আমাদের বয়স্ক সিটিজেনরা যারা এটা চান, তারা (ভারত) এই ভিসাটি দেবেন।’ মুক্তিযোদ্ধারাও ভারতীয় ভিসার ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবে বলে জানান মন্ত্রী।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ভারত ও বাংলাদেশের ষষ্ঠ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠক শুরু হয়। এর আগে সকাল ১০টা ২২ মিনিটে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে উপস্থিত হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি দলের সালাম গ্রহণ করেন রাজনাথ সিং। বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৩০ লাখ মানুষ বিভিন্ন কারণে ভারতে যায় উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের যারা ভারতে যায়, তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও ভিসা সহজীকরণ করার কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতের সবচেয়ে বড় ভিসা সেন্টার উদ্বোধন করেছেন রাজনাথ সিং।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যে কোনো সমস্যার সমাধান আমরা আলোচনার মাধ্যমেই করব। তারা বলেছেন, যখন দুই দেশের মধ্যে কোনো সমস্যা আসবে, তখনই আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে। ভারত মনে করে, বাংলাদেশ তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই তারা বাংলাদেশকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সর্বোচ্চ ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান করেছি। ভবিষ্যতেও আলোচনার মাধ্যমে করব। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে আমরা যখনই সহায়তা চেয়েছি, তখনই তারা করেছে। তাদের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। সে অনুযায়ী বন্দিবিনিময় হচ্ছে। মিয়ানমার প্রসঙ্গে ভারত আন্তর্জাতিক সহযোগিতার হাত বাড়াবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। ইয়াবার কারখানাগুলো আইন করে বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক ও আবেগের। রোহিঙ্গা, সীমান্ত সমস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। সমস্যাগুলোর সমাধানে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে দুটি নতুন বিল্ডিং তারা (ভারত সরকার) করে দিয়েছে। ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ও অন্যান্য ল্যাবরেটরি এবং একটি মডেল বিল্ডিং তারা তৈরি করে দিয়েছেন। সেটি উদ্বোধনের জন্য তিনি গতকাল (শনিবার) রাজশাহী গিয়েছিলেন। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের পুলিশ একাডেমির জন্য ভারতের পুলিশ একাডেমির সঙ্গে একটি মোমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন (এমওসি) স্বাক্ষরিত হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এছাড়া মেডিকেল ভিসা বলুন, স্টুডেন্ট ভিসা বলুন সবই আগের মতো রয়েছে, সেগুলো আরও সহজীকরণের কথাও তারা আমাদের বলে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলেছেন, আমাদের পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, প্রিজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার যদি প্রয়োজন হয়, তারা সহযোগিতা করবেন। এছাড়া সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। জাল মুদ্রা নিয়ে তারাও একটা বিব্রতকর পজিশনে ছিল, আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা কী কী করেছি তাদের জানিয়েছি। তারা আমাদের স্টেপগুলোতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এখন সেই জায়গাটিতে থেকে তারা আশঙ্কমুক্ত হয়েছেন।
জঙ্গিদমন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, আমরা তাদের জোরের সঙ্গে বলে দিয়েছি যে, আমাদের দেশের এক ইঞ্চি জমিও আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ কিংবা প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসী হামলা কিংবা সেপারেটিস্ট মুভমেন্ট হতে দেব না। সন্ত্রাসী বা জঙ্গি দমনের জন্য তাদের কাছে যত ধরনের সহযোগিতা চেয়েছিলাম তারা আমাদের করেছেন। তারাও আমাদের সঙ্গে ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ করছেন। যাতে আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গি দমন করতে পারি। টেরোরিস্ট বা সেপারেটিস্ট যেগুলোই হোক আমরা আমাদের দেশে তাদের স্থান দেই না সেজন্য তারা সন্তোষ প্রকাশ করে গেছেন। মিয়ানমারের জন্য তারা আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াবেন এবং এর জন্য কাজ করবেন বলে গেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত কোন ধরনের সহযোগিতা দেবে- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা বলেছি রোহিঙ্গা আমাদের জন্য সমস্যা। তারা বলেছেন এ সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করবেন। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে তারা আমাদের সহযোগিতা দেবেন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দুই আসামি ভারতে পালিয়ে আছে বলে খবর রয়েছে। এ বিষয়টি আলোচনায় এসেছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটি কমিটি আছে। এ বিষয়েও আলাপ হয়েছে। তারা এটা দেখছেন। আমাদের কাছে তারাও কয়েকজনের নাম পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে এগ্রিমেন্ট রয়েছে। এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী কাজ চলছে।’ আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিগগিরই আমাকে ভারতে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আপনি আসুন। আমরা একটা সময়-সুযোগ করে আবারও যাব।’
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে একটি নতুন, আধুনিক ও সমন্বিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে তিনি বিশেষ বিমানে রাজশাহী সফর করেন এবং যৌথভাবে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবন উদ্বোধন করেন। এরপর রোববার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরিদর্শন বইয়ে তিনি লেখেন ‘বঙ্গবন্ধু ও তার শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কেবল বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ এছাড়াও তিনি রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা দেন বলে ভারতীয় হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সূত্র : যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :