রিকু আমির : উয়ের উল্ফ সিনড্রোম নামক বিরল রোগে আক্রান্ত ১৪ বছর বয়সী বিথী আগামীতে জেএসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ঈদুল ফিতরের কিছুদিন আগে ভারতে চিকিৎসা শেষে বিথী দেশে ফিরে। তার বাবা আবদুর রাজ্জাক রোববার এ প্রতিবেদককে জানান, ভারতে টানা ২১দিন চিকিৎসার পর বিথী অনেকটাই সুস্থ্য। এখন সে আগামী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ব্যস্ত।
টাঙাইলের জয়ভোগ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিথী ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতন চিকিৎসার আওতায় আসে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। এখানেই সনাক্ত হয়- উয়ের উল্ফ সিনড্রোমে আক্রান্ত বিথী। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এ রোগ এই প্রথম সনাক্ত করা হয়েছে। প্রায় দেড় বছর বিএসএমএমইউতে দফায় দফায় চিকিৎসা চলে বিথীর। এখানেও তার দুই স্তনে অপারেশন করে বাড়তি মাংস অপসারণ করেছিলেন চিকিৎসকরা। প্রথম দফা অপারেশন করে বাম স্তন থেকে নয় কেজি ৪০০ গ্রাম ও দ্বিতীয় দফায় ডান স্তন থেকে নয় কেজি ৪০০ গ্রাম বাড়তি মাংস কেটে ফেলে দেয়া হয়। এছাড়াও লেজার থেরাপি দিয়ে মুখমন্ডল ও দেহের লোম ফেলে দেয়া হয়েছিল।
বিথীর দেহের সর্বত্র অস্বাভাবিক ঘন কালো ও বড় লোম। তার স্তনের আকৃতি অস্বাভাবিক বড়, চোয়াল-ঠোঁটও বিকৃত। রোগটি জিনঘটিত। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও উদ্ভবন হয়নি।
আবদুর রাজ্জাক জানান, এখানে যে চিকিৎসা হচ্ছে, তা বাংলাদেশ থেকেও উন্নত। এজন্য বিথীকে নিয়ে তার স্বপ্ন অনেক বড় হচ্ছে। ভারতে ২১দিন চিকিৎসায় বিথীর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিথী সে ধরণের সমস্যামুক্ত। তিনি জানান, স্তনের বাড়তি মাংস কেটে ফেলে দেয়ার পাশাপাশি মুখের অভ্যন্তরে জটিল অপারেশন ও লেজার থেরাপি দিয়ে বাড়তি লোম ফেলে দেয়া হয় ভারতে। বিএসএমএমইউতে অপারেশনের পর বিথীর স্তনের আকৃতি পূর্বের মতন হয়ে যায় এবং দেহজুড়ে আবার লোম গজায়। ভারতের চিকিৎসকরা বলেছেন, বিথীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
বিথীর বাড়ি টাঙাইলের নাগরপুরে। তার বাবা আবদুর রাজ্জাক ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে পাঁচ সদস্যের সংসার চালান।
চিকিৎসা শাস্ত্র মতে- উয়ের উল্ফ সিনড্রোমে আক্রান্ত মেয়েদের ঠোঁটের উপরি ভাগ, গাল, চিবুক, বুক, স্তন, তলপেট ও নিতম্বে অথবা কুঁচকিতে শক্ত-কালো চুল গজায়। এ রোগে বাড়তি চুলের পাশাপাশি মাথায় টাক, পুরুষালি পেশি গঠন, গভীর কণ্ঠস্বর, ব্রণ, মাসিক বন্ধ, স্থূলতা, বন্ধ্যত্ব, ডায়াবেটিস ইত্যাদি হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :