ডেস্ক রিপোর্ট: ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক হবে - এ নিয়ে যেখানে সবার উৎসাহ-আগ্রহ থাকার কথা, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই জোর দাবি করছেন যে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের এখন একেবারেই উচিত হবে না রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করা।
২০১৬ সালের যে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প - সেই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে মার্কিন বিচার বিভাগ এক তদন্ত শেষে ১২ জন রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছে।
যে রাশিয়ার গোয়েন্দারা রাষ্ট্রীয় মদদে মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করতে হিলারি ক্লিন্টনের ইমেইল ফাঁস করেছে, কম্পিউটার হ্যাক করেছে, ভোটারদের প্রোফাইল চুরি করেছে, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়েছে - তারা তদন্তে অভিযুক্ত হবার পর কি করে মি. ট্রাম্প ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক করতে পারেন?
কিন্তু হোয়াইট হাউস বলছে, বৈঠক হবে।
সোমবার ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে ওই শীর্ষ বৈঠক হবার কথা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে নাক গলানো নিয়ে তিনি সরাসরি মি. পুতিনকে প্রশ্ন করবেন। তার কথা, এটি নিয়ে যা হচ্ছে তা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক 'উইচ হান্ট'।
রাশিয়া বলছে, শীর্ষ বৈঠকের আগে পরিবেশ বিষিয়ে তুলতেই ষড়যন্ত্র-তত্ব সামনে আনা হচ্ছে।
কিন্তু সাবেক এফবিআই পরিচালক রবার্ট মুলারের তদন্ত রিপোর্ট বেরুনোর পর হৈচৈ শুরু হয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে।
অভিযোগ হচ্ছে: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় জনমতের হাওয়া যেন হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে এবং মি. ট্রাম্পের পক্ষে যায় - সে জন্য রুশ এজেন্টরা নানাভাবে কাজ করেছে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন মি. ট্রাম্পের অন্তত ১২ জন সহযোগী। সিএনএনের বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে মি. ট্রাম্পের ছেলে এবং জামাতাও সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
ট্রাম্পের নির্বাচনী দলের লোকেরা অবশ্য বলেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিদেশীদের সাথে বৈঠক স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দু'জন ট্রাম্প-সহযোগী স্বীকার করেছেন যে তারা এসব বৈঠকের ব্যাপারে মিথ্যে বলেছিলেন।
এদের একজন মাইকেল ফ্লিন - প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তাকে মি. ট্রাম্প বরখাস্ত করেছেন, বরথাস্ত করেছেন এ নিয়ে তদন্ত করা এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকেও। কিন্তু মি. ফ্লিন কাদের সাথে বৈঠক করছেন তা কি ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতেন - এ প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে।
এসব নিয়ে মি. মুলারের তদন্ত ছাড়াও রাশিয়ার সাথে ট্রাম্প সহযোগীদের যোগাযোগ নিয়ে মোট চারটি তদন্ত চলছে এখন।
মি. মুলারকেও কি ট্রাম্প বরখাস্ত করতে পারেন না?
এ নিয়ে বহু গুজব ছড়িয়েছে। কিন্তু মুলারকে বরখাস্ত করলে বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার চেষ্টা করতে পারেন ডেমোক্রাটরা।
মার্কিন মিডিয়ায় আরো ছড়িয়েছে নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে একজন রুশ আইনজীবীর সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সহ কয়েকজনের এক বৈঠক হয় - যাতে নাতালিয়া ভেসেলনিৎস্কায়া নাকি হিলারি ক্লিনটনকে 'ফাঁসানো যাবে' এমন কিছু কাগজপত্র দিতে চেয়েছিলেন - 'যাতে তোমার বাবার খুব সুবিধে হবে'। ট্রাম্পের ছেলে নাকি জবাবে বলেছিলেন - তাহলে তো দারুণ হয়।
ট্রাম্প জুনিয়র পরে বলেছিলেন, এসব বৈঠক থেকে কিছু পাওয়া যায় নি।
ব্রিটিশ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার স্টিল এক তদন্তের পর একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন যা ফাঁস হয়ে যায়।
এতে বলা হয়, মস্কোর হাতে এমন কিছু জিনিসপত্র আছে মি. ট্রাম্পকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে মস্কোয় এক হোটেলে একবার কিছু যৌনকর্মীর সাথে তাকে দেখা যাবার রেকর্ড থাকার দাবিও করা হয়।
মি. ট্রাম্প এসব জোর দিয়ে অস্বীকার করেছেন।
এতে আরো আছে রাশিয়ার সাথে মি. ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের কথিত আর্থিক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য।
পরে জানা যায়, মি স্টিলের রিপোর্টের জন্য মিসেস ক্লিনটন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির দিক থেকে টাকা দেয়া হয়েছিল।
ওয়াশিংটন পোস্ট এক রিপোর্টে জানায়, ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে সিআইএ একটি খাম পাঠায় প্রেসিডেন্ট ওবামাকে - যাতে ছিল এক বিস্ফোরক তথ্য।
তা হলো: মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক প্রয়াস পরিচালনা করছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
ওবামা প্রশাসন চিন্তায় পড়ে যায় যে এটা প্রকাশ করা হবে কিনা। কিন্তু তাহলে এটা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা মনে হতে পারে এমন ভেবে ওবামা প্রশাসন এ ব্যাপারটা নিয়ে চুপচাপ ছিল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনী দল এ নিয়ে তদন্তকারীদের সাথে আলোচনা করছে।
প্রেসিডেন্ট নিজে এ নিয়ে কোন অঙ্গীকার করেন নি। তিনি আভাস দিয়েছেন তার সাথে কথা বলার দরকার হবে না - কারণ রাশিয়ার সাথে কোন গোপন যোগাযোগ হয় নি।
মার্কিন মিডিয়ায় এমন জল্পনাও আছে যে মি. মুলার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিচার কাজে বাধা দেবার অভিযোগ আনার কথা বিবেচনা করছেন।
কিন্তু এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।
তাকে কি অভিশংসন করা হবে? এমন সম্ভাবনাও বিভিন্ন কারণে খুবই কম।
দুটি জনমত জরিপে দেখা গেছে মার্কিন জনগণের একটা বড় অংশই মনে করে যে মি. ট্রাম্পের সহযোগীরা কিছু একটা অন্যায় কাজ করেছেন। বিবিসি।
আপনার মতামত লিখুন :