মতিনুজ্জামান মিটৃু : রাজা হওয়ার আশা থাকলেও এবারের আমের মৌসুমে ফকির বনেছে তারা। ব্যাংক ঋণসহ খরচের বোঝার ভারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা, দু:স্বপ্নে রাত কাটছে তাদের। অকালে শিলাবৃষ্টি, মাছি পোকার বেপরোয় আক্রমণ ও বাজার মন্দা তাদেরকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তার দূর্বিসহ জীবনের পথে। পিতার হাত ধরে আমের সঙ্গে যুক্ত থেকে মাষ্টারর্স হয়ে কানসাটের আবু নুহু নেমেছিলেন এই পথে। ২০১২-২০১৩ সাল পর্যন্ত গাছ প্রতি ৫০ হাজার টাকার আম পেলেও গত কয়েক বছর ধরে পান পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। এবার তাও জুটবেনা। ২০১৪ সাল থেকে ক্রমাগত লোকসানের বোঝা বইতে বইতে এখন তলানিতে এসে ঠেকেছেন।
এবারও প্রায় ২৩ লাখ টাকা খরচ করে উৎপাদনের পর এ পর্যন্ত ৩৫০ গাছের বাগানের আম বেচে পেয়েছেন মাত্র চার লাখ টাকা। বাকী যা আছে তা ছয় লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে। বাকি টাকা এবছর আর কখনোই তোলা সম্ভব হবেনা। বেহাল এই দশা এখানকার প্রায় ৯৫ জনের। আবু নূহু বলেন, এ বছর আমার ৩৫০ গাছের ৮টি মেশিনে ১৪ বার করে স্প্রে করা হয়েছে। স্প্রে বাবদ মেশিন প্রতি লেগেছে ১১০০০ টাকা। এই হিসেবে স্প্রে বাবদই শুধু খরচ হয়েছে ১২ লাখ ৩২০০০ টাকা। এর ওপর ব্যাংক ঋণের সুদ, লেবার খরচ ইত্যাদিতো আছেই। প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ অন্যান্য বিপর্যয়ের মধ্যে না পড়লে এবং বাজারে আমের দাম ঠিক থাকলে এবছর ৪৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার আম বিক্রি হতো। ভয়ংকর মাছি পোকার দল বেপরোয়াভাবে আম নষ্ট করে দিচ্ছে। অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে এবার মাছির আক্রমণ অনেক বেশি। কানসাটের বাজারে মাছিতে ফুটো করা আম বিক্রি করেছি ৪৮ কেজির এক মণ আম মাত্র ৭৬০ টাকায়। অথচ মাছি না থাকলে এই আম বিক্রি হতো ২০০০ টাকার বেশি। পড়াশুনা শেষ করে ২০০৭ সাল থেকে আমি আমের কারবারে জড়িয়েছি।
গত কয়েক বছর অবস্থা খারাপ হলেও এমন করুন দশায় আর পড়িনি। ব্যাংক ঋণ নিয়েছিলাম পাঁচ লাখ টাকা, স্প্রে খরচ ও লেবারের মজুরী বাকি পড়ে আছে। আম যা আছে তা বেচে ওই দেনা শোধ পারবো কিনা জানিনা। না হলে আবারও জমি বেচতে হবে। এই অবস্থায় পড়ে অনেকে ফজলি আম গাছ আর রাখবে না কেটে ফেলবে তা ভেবে দেখছে। আগামী ২/১ বছর এদশা বহাল থাকলে এ অঞ্চলের অনেকেই ফজলি আমের গাছ রাখবেনা, কেটে ফেলবে। বাঁচার তাগিদে গতকাল নাটোরে গিয়েছিলাম, আমের পরিবর্তে পেয়ারা, মাল্টা বা ড্রাগন চাষে পোষাবে কিনা তা দেখতে এবং জানতে। নাটোরের ফল চাষি সেলিম রেজা বলেন, আ¤্রপালি শেষের পথে। বারি-৪ আম আছে, কিন্তু লোকে চেনেনা তাই কেনেনা। আধা কেজি ওজনের এই আম প্রচুর ধরে। ফজলি বিক্রি হচ্ছে এখানকার আড়তে মণ প্রতি ফজলি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়। আশ্মিণা আম এখনো ওঠেনি। চাপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন জানান, আমের দাম কিছুটা বেড়েছে। গতকাল এখানকার আড়তে ভাল মানের ফজলি ব্যাগিং ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা, নন ব্যাগিং প্রথম শ্রেনীর ফ্রেশ আম ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, কালো দাগ যুক্ত আম ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং জুস তৈরীর আম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :