শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:২৭ দুপুর
আপডেট : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:২৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফেরত আসার শঙ্কায় ২ লাখ বাংলাদেশী

ডেস্ক রিপোর্ট : বিদেশী শ্রমবাজারের মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অন্যতম গন্তব্য মালয়েশিয়া। বৈধদের পাশাপাশি পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ না থাকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিকও বর্তমানে দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েছেন, যাদের অনেকেই বৈধতা পেতে দূতাবাসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেও সময়মতো তা হাতে পাননি। সম্প্রতি অবৈধ শ্রমিকদের গ্রেফতারে অভিযান জোরদার করেছেন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর আতঙ্কে রয়েছেন প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক।

জানা গেছে, অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিদেশী শ্রমিকদের বৈধ করতে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং প্রকল্প শুরু করে দেশটির সরকার। শ্রমিকরা যাতে এ সুযোগ গ্রহণ করে বৈধ হতে পারেন, সেজন্য কয়েক দফা বাড়ানোও হয় প্রকল্পটির মেয়াদ। সর্বশেষ মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ৩০ জুন শেষ হয় এ প্রকল্প। রি-হায়ারিং পদ্ধতিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম ধাপ হলো নিজ দেশের পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ধাপ শেষে পাওয়া যায় বৈধতা।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের অভিযোগ, রি-হায়ারিং প্রকল্পের সুযোগ নিতে দূতাবাসে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও তা হাতে পাননি অনেক বাংলাদেশী শ্রমিক। আবার পাসপোর্ট থাকলেও দালালচক্রের প্রতারণায়ও রি-হায়ারিংয়ের সুযোগ নিতে পারেননি অনেক বাংলাদেশী। এ অবস্থায় যেকোনো সময় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ৮১ হাজার ৩০৮ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের মধ্যে ৭৯ হাজার ৩৩২টি পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আবেদন করেও পাসপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন আরো প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশী।

গত ৩০ জুন রি-হায়ারিং কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ‘অপস মেগা ৩.০’ শীর্ষক অপারেশন। এর আওতায় এরই মধ্যে কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং, কোতারায়া, পেতালিং, পোলাউ পিনাং, ইপু পেরাকসহ কয়েকটি এলাকায় অবৈধদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। কয়েক দিনের অভিযানে অবৈধ প্রায় চার হাজার বিদেশী কর্মীকে আটক করা হয়েছে, যাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশী।

জানা গেছে, মেগা ৩.০ অভিযানের মাধ্যমে গত ১০ দিনেই প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশী আটক হয়েছেন। আটকের পর অবৈধদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এবং তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশী, পাকিস্তানি, ভারতীয় ও মালয়েশীয় প্রতারক এজেন্টদের তালিকা তৈরি করেছে অভিবাসন বিভাগ। ১০ জুলাই বাংলাদেশী দালালচক্রের একটি অফিস থেকে ৬৬ জনকে উদ্ধার করেছে ইমিগ্রেশনের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। অফিসটিতে কর্মরত ১১ জন বাংলাদেশী এবং দুজন মালয়েশিয়া নাগরিকও আটক হন।

একই দিনে কুয়ালালামপুরের পার্শ্ববর্তী সিরি সেরডাং এলাকায় অভিযান চালিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ৫৫ জন বাংলাদেশী ও দুজন ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে যেসব বাংলাদেশীকে আটক করা হয়েছে তাদের কারো কাছেই মালয়েশিয়া গমনের জন্য বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তারা মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া সাময়িক অবস্থানের অনুমতিপত্রের জন্যও আবেদন করেননি।

সূত্রটি আরো জানায়, যেসব বাংলাদেশী হাইকমিশনে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে আসবেন, তাদের অবশ্যই প্রমাণস্বরূপ বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ার কাগজ নিয়ে আসতে হবে। এদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে।

প্রসঙ্গত, রি-হায়ারিং ও ই-কার্ড— এ দুই প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত সব বিদেশী নাগরিককে দুই ভাগে বৈধকরণের উদ্যোগ নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এর মধ্যে রি-হাইয়ারিং প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল যারা একবার শ্রমিক ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন তাদের জন্য। আর যারা পর্যটক বা ছাত্র কিংবা ব্যবসায়ী হিসেবে মালয়েশিয়া গেছেন, কিন্তু মূলত এর কোনোটাই নন, তাদের জন্য ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড কর্মসূচি নেয়া হয়। অন্য ভিসায় গিয়েও যারা অবৈধভাবে কাজ শুরু করেছেন, তাদেরও পরিসংখ্যানের আওতায় নিয়ে আসতে বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। যারা রি-হায়ারিং প্রক্রিয়া বা ই-কার্ডের জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দ অনুযায়ী নিয়োগ দেবে। যাদের নিয়োগ হবে না, তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে আসতে হবে। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে এসব শ্রমিককে দেশে ফিরে আসতে হবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশী কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিয়মিত কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বাকিরা নিয়মিত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। তবে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বৈধ হওয়ার জন্য কোম্পানি কিংবা দালালের কাছে টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিলেও প্রতারিত হয়ে বৈধতার সুযোগ পাননি।

বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিকভাবেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সিআর আবরার। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, অতীতেও দেখা গেছে, বাংলাদেশী শ্রমিকরা বৈধ হওয়ার সুযোগ সময়মতো নিতে পারেননি। এর অন্যতম কারণ অধিকাংশই অবৈধভাবে দেশটিতে রয়েছেন। বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় যেসব তথ্যপ্রমাণ দিতে হয়, সেগুলো তাদের কাছে নেই।

তিনি আরো বলেন, পাসপোর্ট না থাকার কারণে অনেকে বৈধ হতে পারছেন না বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এত সংখ্যক পাসপোর্ট এত অল্প সময়ে দেয়াটা হাইকমিশনের জন্যও অনেকটা চাপের। কীভাবে এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া যায়, সরকারকে এ বিষয়গুলো ভেবে দেখতে হবে। একই সঙ্গে রি-হায়ারিংয়ের সময় আরো কিছু বাড়ানো যায় কিনা সেজন্য কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সূত্র জানায়, ই-কার্ড নেয়া বাংলাদেশীদের বেশির ভাগই দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। এদের কারো কাছেই বৈধ কোনো কাগজ নেই। এমনকি বেশির ভাগ শ্রমিকের পাসপোর্ট তাদের কাছে নেই। বেশির ভাগের পাসপোর্ট দালালরা রেখে দিয়েছে অথবা কেউ কেউ পাসপোর্ট ফেলে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে ব্যাপকহারে বাংলাদেশী শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ওই দুই বছরে দেশটিতে পাঠানো হয় ৪ লাখ ৪ হাজার ৯৬৩ জন শ্রমিক। এর পর থেকেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ধস নামে। ২০০৯ সাল থেকে অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আবারো বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে দেশটি। সে প্রক্রিয়া যথেষ্ট কার্যকরী না হওয়ায় পরে মালয়েশিয়া সরকার পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হয়। দুদেশের মধ্যে এ-বিষয়ক চুক্তিটি হয় ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু চুক্তির পরদিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশী কর্মী নেয়া বন্ধ ঘোষণা করে। কয়েক মাস আগে বিদেশী কর্মী না নেয়ার ঘোষণাটি প্রত্যাহারের পর জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আবারো সামনে আসে। সে সময় প্লান্টেশন, এগ্রিকালচার, ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশনসহ মোট পাঁচটি খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া সরকার। - বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়