কায়কোবাদ মিলন: ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয় সাবেক কূটনীতিক শশাংক এস ব্যানার্জি রচিত ইন্ডিয়া, মুজিবর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন এ- পাকিস্তান: এ পলিটিকাল ট্রিয়াটাইস শীর্ষক গ্রন্থ । ১৯৭১-৭২ সালে তিনি ভারতীয় কূটনীতিক হিসেবে লন্ডনে কর্মরত ছিলেন । তার গ্রন্থ থেকে দ্য ওয়ার পত্রিকা ও মাই ইন্ডিয়া মাই গ্লোরি ডট কম অংশবিশেষ প্রকাশ করেছে। সেই বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হল ।
১৯৭২-এর ২রা আগস্ট। ঠিক আট মাস আগেই শেষ হয়েছে ১৩ দিনের ভারত-পাক যুদ্ধ। এদিন দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় সিমলা চুক্তি। এর ফলে ভারত ৯৩০০০ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। ৭১-এর যুদ্ধ চলাকালীন এদের বন্দি করা হয়েছিল ভারতে। এটা ছিল ভারতের অত্যন্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।
কেন এই সময় ওই বন্দিদের হাতে পেয়ে কাশ্মীর নিয়ে দরাদরি করেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী? হয়তো মিটে যেত সমস্যা!
কিসের জন্য পাক বন্দিদের ছেড়ে দিতে রাজি হন ইন্দিরা?
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাক যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করে ঢাকায়। ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে তারা। একদিকে যুদ্ধের বিপুল খরচ, প্রায় ১ কোটি শরণার্থী । তার মধ্যে বাড়তি খরচ এই ৯৩০০০ পাক সেনা।
ইন্দিরা গান্ধীর মূল লক্ষ্য ছিল, কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিরাপদে দেশে ফেরানো যায়। তার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে রাজি ছিলেন তিনি। সেকথা তিনি একজনকেই বলেছিলেন। তিনি তৎকালীন র প্রধান রাম নাথ কাও। মুজিবর রহমানকে হত্যা করা হলে, ভারতের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। এটাই ছিল ইন্দিরার ভয়।
এদিকে, পরাজয়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। আমেরিকায় থাকা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফোন করে সে কথা জানান। দায়িত্ব দিয়ে যান ভুট্টোকেই। তড়িঘড়ি রাওয়ালপিন্ডির বিমান ধরেন ভুট্টো।
ভুট্টোর ফেরার খবর পেয়েই জরুরি মিটিং ডাকেন ইন্দিরা গান্ধী। ভুট্টোর বিমান রিফুয়েলিং-এর জন্য থামার কথা হিথরো বিমানবন্দরে। ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন, সেইসময় সেখানে উপস্থিত থাকুক কোনও ভারতীয় প্রতিনিধি। যাতে তিনি জানতে পারেন, মুজিবর রহমানকে নিয়ে কি ভাবছেন তিনি?
মুজফ্ফর হোসেন, পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ভারতে যুদ্ধবন্দি হন এবং ডিপি ধরের বাড়িতে অতিথির মর্যাদায় ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন লন্ডনে। ফলে সেইসময় কূটনীতিকদের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতেন স্বামী-স্ত্রী। লায়লা ছিলেন ভুট্টোর একসময়ের বান্ধবী। সেই লায়লাকেই কাজে লাগান ইন্দিরা। ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলতে পাঠান লায়লাকে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই।
কথাবার্তা শেষে লায়লাকে কাছে টেনে তাঁর কানে কানে একটা বার্তা দেন ভুট্টো। বলেন, ‘লায়লা আমি জানি, তুমি কি জানতে এসেছ। একটা মেসেজ দিও ইন্দিরা গান্ধীকে। বলো, আমি মুজিবর রহমানকে মুক্তি দেবো। কিন্তু বদলে কি চাইব? সেটা পরে জানাব।’
বার্তা জানান লায়লা। তবুও সন্দেহ দূর হয় না। ভারতকে ভুল পথে চালিত করছেন না তো ভুট্টো? কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সন্দেহের অবসান হলো। খবরটা সত্যি সেটাই জানা গেল। বদলে চাওয়া হলো ৯৩০০০ যুদ্ধবন্দিকে। ১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি ছেড়ে দেয়া হলো মুজিবর রহমানকে। ফিরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন তিনি। এর ঠিক আট মাস পরে ছেড়ে দেয়া হয় ওইসব পাক যুদ্ধবন্দিকে।
আপনার মতামত লিখুন :