শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ০১ জুলাই, ২০১৮, ০৬:৪০ সকাল
আপডেট : ০১ জুলাই, ২০১৮, ০৬:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঘরে ঘরে যান নৌকার জন্য ভোট চাইতে

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য গ্রামে-গঞ্জে, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে এবং দলের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-কোন্দল দ্রুত মিটিয়ে ফেলে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যা চায়, তা আনতে পারে। আওয়ামী লীগ যখনই ঐক্যবদ্ধ থেকেছে, তখনই সব বাধা অতিক্রম করতে পেরেছে। তাই আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। সেখানে যেন কোন ধরনের দলীয় কোন্দল না হয়। যে সমস্ত ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে খুব দ্রুত তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যারা আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতন করেছে তাদের টানাটানি না করে নতুন নতুন কর্মী সৃষ্টি করুন। তবে ওই স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, জাতির পিতার খুনীদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দানকারী, তাদের লালন-পালনকারী, দুর্নীতি, মাদক সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, মানিলন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত; এ সমস্ত গোষ্ঠী (বিএনপি-জামায়াত জোট) যেন আর কোনদিন বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেটা আপনাদের দেখতে হবে। জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে হবে, নৌকার বিজয় আনতে হবে।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গনভবনে চার বিভাগের তৃণমূল নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার বিশেষ বর্ধিত সভায় সূচনা ও সমাপনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে আরও বলেন, মানুষ সুখে থাকলে দুঃখের কথা ভুলে যায়। তাই সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে গিয়ে বলতে হবে। দেশের উন্নয়নে ও জনগণের কল্যাণে আমরা যেসব কর্মসূচি নিয়েছি, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, কেবল আওয়ামী লীগই পারে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে তা প্রমাণ করেছে। কাজেই এই দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূল মানুষের কাছে দলের কর্মকা- তুলে ধরে নৌকার পক্ষে জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে। আমরা কি করেছি এবং কি করতে চাচ্ছি তা জনগণের সামনে তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে হবে।

খুলনা ও গাজীপুরে নৌকার বিজয়ের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচনের ফলাফল আমদের বিজয় দেখাচ্ছে, আর বিজয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই বিজয় প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে, তখনই বিজয় অর্জন করে। তিনি বলেন, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনী নৌকা মার্কায় হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয় হয়েছে। গাজীপুরে সিটি কর্পোরেশনেও নৌকার বিজয় হয়েছে। কারণ এই নৌকাই জনগণকে মাতৃভাষার অধিকার দিয়েছে। নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এখন নৌকা দেশকে দারিদ্রমুক্ত করে যাচ্ছে। নৌকা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশ সেবার সুযোগ দিয়েছে বলেই বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। কাজেই এই নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য আমাদের উন্নয়নের কথাগুলো আপনারা প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতি পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবেন। সেটাই আমি চাই। কারণ মানুষকে বলতে হবে, মানুষ সুখ পেলে কিন্তু দুঃখের দিনের কথা ভুলে যায়। কিন্তু এই সুখটা পেল কিভাবে সেটা আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে। আপনাদের বলতে হবে, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং পরিবর্তন হবে।
সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ইউনিয়নের নেতারা মিটিংয়ের পর সুন্দর করে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠান। ওই প্রস্তাবগুলো আমি নিজেই পড়ি এবং তাদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। সংগঠন করতে হলে সেভাবেই করতে হবে। তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশ কখনও পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমরা পিছিয়ে নেই। কখনও পিছিয়ে যাব না।

তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় তৃণমূলের মতামত নিয়ে মনোনয়ন দিয়ে থাকি। সকলের মতামত নিয়েই আগামী মনোনয়নও দেব। আমরা ইতোমধ্যে জরিপ করে যাচ্ছি। আপনাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে। কাকে নমিনেশন দেবো সেটা বড়ো কথা নয়, নৌকা মার্কায় আপনারা ভোট চাবেন। সেইভাবেই আপনারা ঘরে ঘরে যাবেন।

বেলা পৌনে ১২টায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। গাজীপুরের বিজয় নিয়ে বর্ধিত সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানও বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নীলুফার ইয়াসমিন, ঝালকাঠি জেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শঙ্কর মুখার্জি, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খো কো মারমা, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমির আলী, সুনামগঞ্জের মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত তালুকদার, পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ও বরিশাল মহানগরের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফারুক হুমায়ুন। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতিজ্ঞা নেয়ারও আহ্বান জানান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

দ্বিতীয় দফার শনিবার বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত দলীয় চেয়ারম্যান, মহানগরের অধীন সংগঠনের প্রতিটি ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় নির্বাচিত কাউন্সিলররা এবং জেলা পরিষদের নির্বাচিত দলীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৭ জুলাই বাকি চার বিভাগ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা জঙ্গীবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছি। তার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তৃণমূলের মানুষ অভিভাবক, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা সংস্থা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে বলেই জঙ্গীবাদটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ; এই মাদকের বিরুদ্ধে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঠিক যেমন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এভাবে মাদকের বিরুদ্ধেও সবাই মিলে আপনারা অভিযান চালাবেন এবং সকলকে বোঝাবেন।

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে সহযোগিতা কামনা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করার জন্য তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, এই সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এই সংগঠনের জনসমর্থন বাড়াতে হবে। আমরা এখন আমাদের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে, সমস্ত কমিটিগুলো আমরা কম্পিউটারে ডাটাবেজ করে রাখব। যাতে আমরা জানতে পারি আমাদের কোন কর্মী কোথায় কি করে, সেটা জানতে পারি। সে লক্ষ্যেও কাজ চলছে।

১৯৮১ সালে ফিরে এসে দলের হাল ধরার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ৩০ জুলাই যেদিন বাংলার মাটি থেকে গিয়েছিলাম, সেদিন তো সবাই ছিলেন। আমার আব্বা-মা, কামাল-জামাল-রাসেল, কামাল-জামালের নবপরিণীতা বধূ। আমার চাচা। সবাই ছিলেন। কিন্তু যেদিন ফিরে এলাম, নিঃস্ব রিক্ত একা। কেউ নেই। কোন চেনা মুখ নেই। আমি সেদিন নেমে কি দেখলাম? বনানীতে সারি সারি কবর। এটা সহ্য করা অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। দূরে থেকে শুনেছি একরকম আর চোখের সামনে এই রকম। সারি সারি কবর দেখেছি। ৩২ নম্বরে যাব। সকলের জন্য দোয়া করতে, জিয়াইর রহমান ৩২ নম্বরে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। রাস্তায় বসে পিতা-মাতা ভাইবোনদের জন্য দোয়া করেছি. বসেছি।

এ সময় কণ্ঠভারি হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। চোখ দিয়ে ঝরছিল বেদানাশ্রু। এরপর ডায়াসে গ্লাসে রাখা পানি খেয়ে কিছু সময় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় সারাদেশ থেকে আসা তৃণমূল নেতারা সমস্বরে স্লোগান দিয়ে উঠেনÑ ‘শেখ হাসিনা ভাই না, আমরা আছি লাখো ভাই’। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে এসেছি। কিন্তু পেয়েছি, আমার পরিবার, বিশাল পরিবার। আমার পরিবার হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সহযোগী সংগঠন। আমি তাদের কাছে  ভালবাসা পেয়েছি। আর পেয়েছি বাংলার জনগণের ভালবাসা।

তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আমার তো পরিবার আপনারাই। আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। আপনাদের কাছে আসলেই তো মনের কথা বলতে হয়। আপনাদের কাছেই বলি। আর এই দেশকে উন্নত করতে চাই। সমৃদ্ধিশালী করতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করতে চাই। আপনারাই পারেন সেই স্বপ্নপূরণ বাস্তবায়ন করতে। সরকারের মেয়াদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের সময় মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো থেকে বিভিন্ন তদবির আসার প্রসঙ্গটি তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের গণমানুষ। আমার শক্তি হচ্ছে আমার সংগঠন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এটাই ছিল বড় শক্তি। যে কারণে যে কোন সাহসী পদক্ষেপ নিতে কখনোই পিছপা হই না। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছিলেন, কারোর কাছে মাথানত না করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিটি গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের মানুষ দিন বদল হতে শুরু করেছে। ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। কোন মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। সেই সঙ্গে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি গ্রামকেই একটা শহরের পর্যায়ে উন্নীত করা। এটা আমাদের ধাপে ধাপে করতে হবে। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতিজ্ঞা নেয়ারও আহ্বান জানান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের জালাও-পোড়াও আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বানচালের নামে তারা নির্বিচারে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। কোন রাজনৈতিক দল এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে তা চিন্তাই করা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কোন বাধা মানে নাই। তারা তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করেছে বলেই আবার আমরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। আজকে ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই তো আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। সমুদ্রসীমা জয়ের পর আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পাঠিয়ে মহাকাশ জয় করেছি।

শেখ হাসিনা তাঁর এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, উচ্চ পর্যায়ের নেতারা মাঝে মাঝে কিছু ভুল করে, এটা নতুন কিছু না। অভিজ্ঞতা আছে বলেই আমি বলি। বাবা (বঙ্গবন্ধু) যখন ছয় দফা দিয়ে গেল, তখন আট দফা নিয়ে আসল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। পূর্ব বাংলার আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তখন বলল বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়েছেন, ছয় দফা ছাড়া আমরা কিছু মানি না। বাংলাদেশে এ রকম বহুবার দেখেছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই বাধ্য হলো ইলেকশন দিতে আর সেই ইলেকশনে বিপুল ভোটে আমরা জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলাম। আমাদের শক্তি হলো এই দেশের জনগণ। আমাদের শক্তি হচ্ছে আমাদের সংগঠন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এরাই আমাদের বড় শক্তি। যে কারণে যে কোনো সাহসী পদক্ষেপ নিতে আমি কখনও পিছপা হই না।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তৃণমূলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা যে ভাতাগুলো দিচ্ছি, এগুলো তো ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়। এগুলো যেন ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, আপনারা খেয়াল রাখবেন। একইভাবে গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে আমরা বাজেট করি, টাকা দেই। এই রাস্তাগুলো যেন ভালভাবে তৈরি হয় সেদিকে আপনারা একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। ওখানে কোনরকম দুর্নীতি যেন না হয়, টাকা যেন সর্বোচ্চ কাজে লাগে সেই ব্যবস্থাটা আপনারা নেবেন সেটাই আমরা চাই।

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়ার আহ্বান ॥ সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মানুষের কল্যাণে এবং মানুষের জন্য রাজনীতি করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচনা’ পড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতার এ দেশের মানুষের জন্য আজীবন কাজ করেছেন। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন মানুষ ও দেশের কল্যাণে। তাঁর আদর্শে গড়ে ওঠে দেশের কল্যাণে আপনাদেরও কাজ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষ দল ত্যাগ করে মন্ত্রিত্বের জন্য, কিন্তু জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলকে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন মানুষকে ভালবেসে। তাই জাতির পিতার লেখা বই দুটি পড়বেন, এগুলো পড়লেই জানতে পারবেন এ দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের কল্যাণ এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে জাতির পিতার চিন্তা-ভাবনার কথা। তিনি বরেন, বাংলাদেশের মানুষ এ পর্যন্ত যা পেয়েছে, তা রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। শুরু থেকেই পাকিস্তানীরা এখানকার মানুষকে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, বঞ্চিত করেছে।

বিদেশে জাতির পিতার সঙ্গে ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা তৃণমূল নেতাদের সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আব্বার (বঙ্গবন্ধু) চিন্তা-ভাবনায় ছিল এ দেশের মানুষ। একদিন ইউরোপের একটি শহরে যাচ্ছি আমার স্বামীর কর্মস্থলে। বাবাও ছিলেন সঙ্গে। রাস্তার পাশে সুন্দর ও সাজানো একটি গ্রাম দেখে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে যেতেন। জিজ্ঞাসা করলেই বললেন- ‘মা, আমরাও একদিন স্বাধীন হবো। এরপর আমি আমাদের গ্রাম ও ইউনিয়নকে এভাবেই গড়ে তুলব।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যটাই ছিল বাংলাদেশের গ্রামকেন্দ্রিক। এজন্য স্বাধীনতার অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের একটি সংবিধান উপহার দেন। তিনি গ্রাম ও সেখানকার মানুষের সকল কল্যাণের জন্য কর্মসূচী দিয়ে গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তাঁকে হারিয়েছি। তিনি ভালবাসা ও মমতা দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

এ সময় জিয়াউর রহমানের শাসন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইসময়ই ঋণখেলাপী সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে তারা। তার আমলে বিভিন্ন সময় ১৯টি ক্যু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় শেষ করে দেয়া হয়েছিল। হাজার হাজার সেনা অফিসার-সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কারাগারে নিক্ষেপ করে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে জিয়া রাজনৈতিক দল করেছিলেন। অবৈধ সামরিক জান্তার হাতে তৈরি করা দলও তো অবৈধই হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও জিয়ার ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। পুরো রাজনীতিকেই তারা কলুষিত করে দিয়ে গিয়েছিল। আমরা সেনা ছাউনি থেকে বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র এনে দিয়েছি।

বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর ক্ষমতায় এলেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তাঁরা বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে না পারলেও নিজেদের ভাগ্যে ঠিকই পরিবর্তন হয়েছে। ভাঙ্গা স্যুটকেস ছাড়া নাকি জিয়া কিছুই রেখে যায়নি। জিয়ার প্যান্ট কেটে কেটে তারেক ও কোকোর নাকি প্যান্ট বানানো হতো। তাহলে এত টাকা এলো কোথায় থেকে? এবার এতিমের টাকাও মেরে খেয়েছে। দুই ছেলের পাচার করা অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে ধরা পড়েছে। শুধু তাই নয়, স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়েছেন। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এলে কীভাবে দেশের উন্নয়ন হবে? তারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি। এদের নীতিই হচ্ছে খুন, লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক ও বিদেশে অর্থ পাচার করা।

নিজের চরকায় তেল দিন- বার্নিকাটকে ওবায়দুল কাদের ॥ গাজীপুরের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে ‘নিজের চরকায় তেল দেয়ার’ পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘বিএনপি যে ভাষায় কথা বলছে, বিদেশী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সে সুরে কথা বলছে। নিজের চরকায় তেল দিন। অয়েল ইওর ওন মেশিন। এখানে আপনাদের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের শক্তির উৎস জনগণ।’ তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে এবার কোন ক্ষমা নেই। সে যত বড় নেতাই হোন না কেন বিদ্রোহী হলেই তাৎক্ষণিক বহিষ্কার, কোন ক্ষমা হবে না। সূত্র : জনকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়