শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ৩০ জুন, ২০১৮, ০৭:৫৬ সকাল
আপডেট : ৩০ জুন, ২০১৮, ০৭:৫৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোটা নিয়ে কথা রাখেনি সরকার?

রবিন আকরাম : কোটা সংস্কার নিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের ভিতরে ফের দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আজ শনিবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

কোটা সংস্কার আন্দােলনকারীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কারে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা সকালে সংবাদ সম্মেলন করতে যান ক্যাম্পাসে। সময় মতো সেখানে উপস্থিত হন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ ও নুরুল ইসলাম নুর। শিক্ষার্থীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের উপর লাঠিশোটা নিয়ে হামলা হয়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক ধরেই অান্দোলন করে আসছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে আবার ২৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। ৩ মার্চের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান দাবি করেন। সমাধান না হওয়ায় আবার আন্দোলনে নামেন। কিন্তুু গত ৮ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন।

তাদের এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে গত ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা। তারপর কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্দোলনকারীদের কাছে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন মন্ত্রী।

এরপর আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক কমিটি আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় ১০ এপ্রিল। কিন্তু এরপরও আন্দোলনকারীদের একাংশ আন্দোলন চালিয়ে যায়। পরে আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরাও আন্দোলনে ফিরে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের জন্য প্রজ্ঞাপন জারির দাবি করে আসছেন।

কিন্তু সেই ঘোষণার পর আড়াই মাস পার হলেও এখনো কোন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি, যা নিয়ে আন্দোলনকারীরা মাঝে মধ্যেই উদ্বেগ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্ব একটি কমিটি কাজ করার কথা। সে বিষয়েও কোন সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি। এরই মাঝে বুধবার সংসদে কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য নতুন করে সংশয়ের জন্ম দিয়েছে।

সংসদে বিরোধী নেতা রওশন এরশাদ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবি করলে তা উড়িয়ে দেননি প্রধানমন্ত্রী। উপরন্তু তার বক্তব্যের প্রশংসা করেন তিনি।

শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, ''আমি বলে দিয়েছি থাকবে না। সেই থাকবে না'কে কিভাবে কার্যকর করা যায়, সেজন্য ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে দিয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যাতে এটা বাস্তবায়ন করা যায়। তবে আমি ধন্যবাদ জানাই মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতাকে যে, তিনি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা থাকতে হবে। অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই তো আজকে স্বাধীন।''

তার এই বক্তব্য আর কোটা সংস্কারে সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা নতুন করে সংশয়ে ফেলেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। বৃহস্পতিবার কোটা সংস্কারের পক্ষের শিক্ষার্থীরা নিজেরা একটি বৈঠক করেছেন যেখানে পুনরায় আন্দোলন শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে প্রচলিত ব্যবস্থায় ৫৬ শতাংশ আসনে কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। ১০ শতাংশ রয়েছে নারীদের জন্য। আরো রয়েছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা।

যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, পুরোপুরি বাতিল নয়, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

আন্দোলনকারী নেতা নুরুল হক বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর তারা আমাদের সঙ্গে আরো কয়েকবার মিটিং করে সময় নিয়েছেন। মন্ত্রীপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটিও এখনো গঠিত হয়নি, কোন কাজও করেনি। তাহলে কোটা সংস্কারের কি হলো?''

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক নেতা লুৎফুন্নাহার লুমা বলছেন, "সাতই মে'র মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রায় তিনমাস হতে চললো, কোন ঘোষণা আমরা দেখতে পাইনি। বরং গতকালের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তার আগের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখন আমরা নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।''

আজ শনিবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া কথা ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের হামলায় আর নতুন কর্মসূচি দিতে পারেনি কোটা আন্দোলনকারীরা।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার পক্ষেও আন্দোলন করছে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের নানা সংগঠন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়