ওমর শাহ: হায়দরাবাদের মুসলিম শিশুকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করায় পাপালাল রবিকান্ত নামে এক বাবাকে প্রাণে মারতে নৃশংস হামলা চালায় কট্টরপন্থীরা। পর পর ১৬ বার ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা করে তারা। তবে প্রাণে বেঁচে যান বাবা। বর্তমানে তিনি হায়দরাবাদের ওসামানিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সম্প্রতি হায়দরাবাদ শহরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ২০০৭ এর ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় ভয়াবহ জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে হায়দরাবাদ শহর। কারও হাত উড়ে গেছে, কারও পা। কেউ বা ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। রক্ত, হাহাকার আর আর্তনাদের মধ্যেই অঝোরে কেঁদে চলেছে ছোট্ট এক শিশুকন্যা। এক দম্পতি ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় পরম আদরে কোলে তুলে নিয়েছিলেন সেই শিশুকে। সেই পালিত মা-বাবার পরম আদরের শিশুই এখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সোনিয়া। কিন্তু সেই মেয়েকে প্রথম দত্তক নেয়া থেকে শুরু আজ পর্যন্ত আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি হায়দরাবাদের ওই দম্পতির।
ঘটনাচক্রে সেই শিশু ছিল মুসলিম। আর পালিত বাবা-মা হিন্দু দম্পতি। শুধু এই ‘অপরাধ’-এই গোড়া থেকে হুমকি দিয়ে আসছিল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থীরা। কিন্তু এবার আর হুমকি নয়, প্রাণে মারতে দুষ্কৃতরা নৃশংস হামলা চালায় ওই শিশুর বাবার ওপর। পর পর ১৬ বার ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয় তাকে। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন বাবা পাপালাল রবিকান্ত। কিন্তু এ হামলার পরও পাপালাল নিজের অবস্থানে অনড়, কোনো কিছুর বিনিময়েই মেয়েকে ছাড়বেন না তিনি।
বাবা পাপালাল জানান, বহুবার বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকজন হুমকি দিয়েছেন। বাড়িতেও হামলা হয়েছে। পুলিশে জানিয়েও মেলেনি নিরাপত্তা। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে আসেননি পাপালাল। আদর করে নাম রাখেন সোনিয়া। বর্তমানে হায়দরাবাদের নামি একটি বেসরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে সোনিয়া। স্বপ্ন দেখে, বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হবে।
সোনিয়ার পালক মা জয়শ্রী দেবী জানান, শুধু আমরা নই, ধর্মের কারণে ওই নিষ্পাপ শিশুকেও মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। আমরা সবাই মানুষ। একই রক্ত বইছে সবার শরীরে। আমাদের যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তা হলে সমাজ প্রশ্ন তোলার কে? সূত্র: আনন্দবাজার
আপনার মতামত লিখুন :