ডেস্ক রিপোর্ট : সংবিধান অনুযায়ী আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে নির্দলীয় সরকারের কোনো সম্ভাবনা বা সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
তার এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের কোনো সম্ভাবনাও নেই, সুযোগও নেই। এটা সংবিধান বিরোধী। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, সেভাবেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার হবে। এটা সাংবিধানিকভাবেই বিধিবদ্ধ বিষয়। এটা নিয়ে আলোচনা করার বা কথা বলার সুযোগও নেই, সম্ভাবনাও নাই। অন্য দেশেও এভাবেই নির্বাচন হয়।
সম্প্রতি ধানমণ্ডির নিজ বাসভবনে দেয়া সাক্ষৎকারে মোহাম্মদ নাসিম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও দল ও সরকারের বিভিন্ন বিষয় ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষৎকারে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে জেলে গেছেন। তার মুক্তিও আদালতের বিষয়। এখানে আমাদের তো করার কিছুই নাই। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি- আদালত তার সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরাও চাই খালেদা জিয়া মুক্তি পান। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা তো নেই। আদালতের রায়ে তিনি জেলে গেছেন, আদালত রায় দিলে তিনি মুক্তি পাবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলে জায়গা করে নেয়া অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নিজের কঠোর মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যেহেতেু আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। কিছু মতলবাজ, সুযোগসন্ধানী দলে ঢুকে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে বা বিভিন্ন অপকর্ম করার চেষ্টা করবে। যে কোনো রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবিরসহ চিহ্নিত ব্যক্তিরা আমাদের দলে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। এতে আমাদের দলের কোনো নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয় আছে কিনা- সেটা দেখা হচ্ছে। কারণ এরা তো দলের জন্য বোঝা, ক্ষতিকর। এরা সরকারি দলের ছত্রছায়ায় আসে নানান অপকর্ম করে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। যাতে দলের ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব কঠোর অবস্থানে আছেন। সরকারিভাবেও তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে জরিপ করছেন। নির্বাচনের আগেই আমরা দলকে এসব বিষয় পরিষ্কার করব।
সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদককে শক্তিশালী করেছি। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটা এখনো চলমান আছে। দুদক যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। ইতিমধ্যে দুদক কিন্তু অনেকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটা চলবেই।
মাকদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদকের বিষয়ে সরকার যে অভিযান চালিয়েছে তা কিন্তু বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে সুনাম কুড়িয়েছে। যে মাদক পারিবার ও সমাজকে নষ্ট করে দিতে চাচ্ছে এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। মাদকের কবল থেকে আমাদের পরিবার, সমাজ তথা আমাদের তারুণ্যকে নষ্ট করতে দেয়া হবে না। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এটা সমাজের ক্যান্সার। এটাকে দূরীভূত করতে হবে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। অনেকে পালিয়ে আছে। অনেকে আবার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। সুতরাং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলতে থাকবে। এর সঙ্গে অন্য সামাজিক অপরাধের সঙ্গেও আমাদের সরকার সচেতন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছেন।
১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন ভাগাভাগি প্রসঙ্গে জোটের এই মুখপাত্র বলেন, মহাকাশ বিজয়ের পরে বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের প্রায় ঘণ্টা দুই গণভবনে বৈঠক হয়। নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে চলমান রাজনীতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে এটুকু আলোচনা হয়েছে যে- আমরা এক সঙ্গে নির্বাচন করব। নির্বাচন বহু দেরি আছে। নির্বাচনের আগে অবস্থান বুঝে, নেত্রী (শেখ হাসিনা) ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বসবেন। সেখানে আলোচনা হবে, তখন সিদ্ধান্ত হবে ১৪ দলে কার কী পজিশন হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আগের মতো মহাজোট হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, এর সঙ্গে দুটি বিষয় জড়িত। বিএনপি নির্বাচন করছে কিনা; এই একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকছে। আবার বিএনপি যদি নির্বাচন না করে তার আরেকটা পরিস্থিতি থাকবে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে তা ওই অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে তা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
১৪ দলীয় জোটে আরো কিছু নতুন দল যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের বিষয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী? জোটে শরিক দলের সংখ্যা কি বাড়ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই আসতে চাচ্ছে। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে তো আমরা নিতে পারব না। ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট। এখানে অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল যোগদান করতে পারবে। মনে রাখতে হবে আমাদের জোট কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জোট না। এটা দীর্ঘদিন ধরে আছে। এটি একটি আদর্শিক জোট। এই জোট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এতসব মাথায় রেখে যারা আসতে চায় তাদের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা নেবেন।
জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি কেমন হতে পারে বা কীভাবে হবে- এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ বড় দল, শক্তিশালী দল। জোটের সব দলই চায় বেশি আসন নিয়ে নির্বাচন করতে। কিন্তু যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে তখন আওয়ামী লীগকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, তাই না। আবার জোটগতভাবে শরিকদেরও আসন দিতে হবে। তবে সংখ্যা কত হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
কিছুদিন আগে ভারতে গিয়েছিলেন বিএনপির তিন নেতা। অনেকটা ‘গোপনে’ বিএনপি নেতাদের এই ভারত সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, বিএনপি কেন, যে কোনো রাজনৈতিক দল কেবল ভারত কেন, পৃথিবীর যে কোনো দেশেই যেতে পারে। এটা নিয়ে আলোচনা বেশি কিছু ছিল না। কিন্তু বিএনপি সফর শেষে দেশে ফিরে বলছে যে, ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উন্নয়ন করতে যাচ্ছে। কী সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়? যে কোনো দল বলেন বা দেশ বলেন- সম্পর্ক তো হয় আদর্শের ভিত্তিতে। কিন্তু বিএনপির যে রাজনৈতিক বক্তব্য বা সিদ্ধান্ত তা তো অনেকটা জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে। আমি তো মনে করি না, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু মুক্তিযুদ্ধের মূল যে সমর্থক ভারত; তাদের সঙ্গে আদর্শিক সম্পর্ক হতে পারে। আর দ্বিতীয় হলো- তারা (বিএনপি) অতীতে যখন ক্ষমতায় ছিল জেনেশুনে বিছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। তৃতীয়ত- বিএনপির ভারতের একজন সম্মানিত রাষ্ট্রপতিকে অপমান করেছিল বাংলাদেশর মাটিতে। যা আমাদের জন্যও কষ্টের। তিনি বলেন, আসলে বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্রের কোনো বদল হবে না। যে যত কথাই বলুক- তারা যখন ভোটে যাবে, তখন তাদের পুরনো বন্ধু, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের সঙ্গেই থাকবে। তাদের নিয়েই রাজনীতি করবে।
দেশের বড় দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে নতুন একটা জোট হয়েছে। শোনা যাচ্ছে বিএনপিও তাদের সঙ্গে নিয়ে বড় একটা বিরোধী জোট করতে চাইছে- এ বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপির তো একটা বড় জোট আছেই। আর এর বাইরে যাদের নিয়ে নতুন জোটের কথা হচ্ছে- এ ধরনের জোট বি. চৌধুরী, মান্না সাহেবরা বহুবার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরা জোট হলেই বা কি, না হলেই বা কি! এদের একেক জনের রাজনৈতিক শক্তি কতটা তা সবাই জানি। সুতরাং এ ধরনের জোট নিয়ে আমাদের কৌতূহলও নেই, উৎসাহও নেই। কারণ, এরা আসলে পৃথক বাস্কেটের একই ডিম। সূত্র : মানবকণ্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :